Paschim Medinipur News: ইতিহাসের অন্যতম দলিল দাঁতনের মোগলমারি, পরতে পরতে লুকিয়ে ঐতিহাসিক গাথা

Last Updated:

বাংলা, ওড়িশা সীমান্তবর্তী এলাকা পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে রয়েছে নানা ইতিহাস। এমনই এক ইতিহাসের দলিল মোগলমারি বৌদ্ধবিহার।

+
মোগলমারী

মোগলমারী বৌদ্ধবিহার

পশ্চিম মেদিনীপুর: বাংলা-ওড়িশা সীমান্ত ঘেঁষা পশ্চিম মেদিনীপুরে দাঁতনের পরতে পরতে রয়েছে নানা ইতিহাস। এক সময়ে দণ্ডভুক্তি, যার নাম বর্তমানে দাঁতন সেখানেই রয়েছে ঐতিহাসিক মোগলমারি। মোগলমারি বর্তমানে একটি অখ্যাত গ্রাম নয়। বিশ্ববাসীর কাছে এক পরিচিত নাম। মোগলমারিকে নিয়ে ক্রমবর্ধমান গবেষণার মধ্য দিয়ে যেমন ইতিহাসের উদঘাটন হয়েছে, তেমনি মোগলমারিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে পর্যটন শিল্প।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মোগলমারির নামকরণ নিয়ে নানা ইতিহাস রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন ১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দে দাঁতনের তুকারই এলাকায় মোঘল-পাঠানের যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে মোগলদের বহু ক্ষতি হয়। তাই সেখান থেকে মোগলমারি নাম হতে পারে। অন্যদিকে মনে করা হয় মোঘলরা এই পথ হারিয়ে গিয়েছিল বলে মোগলমারি, সেখান থেকে কালের বিবর্তনে মোগলমারি নাম হয়েছে।
advertisement
ইতিহাস নিয়েও গবেষকদের মতে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এই গ্রামের নাম ছিল অমরাবতী। সেই অঞ্চলের রাজা বিক্রমাদিত্যের কন্যা সখীসেনার অধ্যয়নের জায়গা ছিল এটি। সেখান থেকে এই নাম এসেছে বলে মনে করা হয়। মোগলমারির এই প্রত্ন ক্ষেত্র একটি পাঠশালা বলে মনে করা হয়।
advertisement
advertisement
অন্যদিকে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তার গ্রন্থ সি ইউ কি' তে বঙ্গদেশের চার রাজ্যের বিশেষ বর্ণনা করেছিলেন- পুন্ড্রবর্ধন, সমতটী, কর্ণসুবর্ণ এবং তাম্রলিপ্ত। এই তাম্রলিপ্ত রাজ্যে ১০টি বৌদ্ধবিহার ও এক-হাজার বৌদ্ধ সন্নাসীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। এ যাবৎ কাল পর্যন্ত তাম্রলিপ্ত সন্নিহিত অঞ্চলে কোন বৌদ্ধবিহার-ই আবিষ্কৃত হয়নি, মোগলমারি ব্যতীত।
advertisement
পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থলের মধ্যে মোগলমারি অন্যতম। যা আজ সখীসেনার পাঠশালার সকল জনশ্রুতির দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে দূরে সরিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত অন্যান্য বৃহৎ ও প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্যগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। ১৯৯৯ সালে সুবর্ণরেখার গতিপথ ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক অশোক দত্ত দাঁতনের মোগলমারিতে এসে, সখিসেনা ঢিবি নামে এক ঢিবির সন্ধান দেন।
advertisement
২০০৩-০৪ সাল নাগাদ খনন কার্য শুরু হয় দাতনের মোগলমারিতে। খননে পাওয়া যায় নকশাযুক্ত ইট, বৌদ্ধ ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীদের বাসস্থানের কুঠুরি। পাওয়া যায় ত্রিরথ কাঠামো যুক্ত নক্সা, যা দেখে গবেষকদের প্রাথমিক অনুমান স্থানটিতে মন্দির বা গর্ভগৃহ ছিল। গ্রামের অভ্যন্তরে খনন চালিয়ে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধস্তূপ ও এক বিশেষ ধরনের মৃৎপাত্র পাওয়া যায়। এরপর ২০০৬, ২০০৭ সাল নাগাদ খননে ঢিবির পূর্ব ও পশ্চিম দিকে পাওয়া যায় নক্সা যুক্ত ইট দ্বারা সুসজ্জিত দেওয়াল, স্টাকো পলেস্তারা যুক্ত দেওয়াল, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার কুঠুরি। উদ্ধার হয় খণ্ড বিখণ্ড বুদ্ধের মূর্তিও।
advertisement
এরপর থেকে একের পর এক খননে নানান ইতিহাসের দলিল উদ্ধার হয়।
ইতিহাস গবেষকরা জানিয়েছেন এটি ছিল একটি মহাবিহার। মহাবিহারটি গঠন শৈলী ত্রিরথ কাঠামোর। পশ্চিমবঙ্গের আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহার গুলির মধ্যে অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ২০১৩ মোগলমারি ‘সখীসেনা ঢিবি’-কে রাজ্য সংরক্ষিত সৌধের মর্যাদা প্রদান করে এবং রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহশালা অধিকারের অধীনে মোগলমারিতে সপ্তম পর্যায়ের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের কাজ।
advertisement
পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে মোগলমারীতে বৌদ্ধ বিহারের সংরক্ষণ ও সাজিয়ে তোলার কাজ হয়েছে। বেশ কয়েক মাসের মধ্যেই তৈরি হবে মোগলমারি মিউজিয়াম ও। স্বাভাবিকভাবে পর্যটনের নতুন দিশা হবে দাঁতনের এই মোগলমারী বৌদ্ধবিহার।
Ranjan Chanda
বাংলা খবর/ খবর/পশ্চিম মেদিনীপুর/
Paschim Medinipur News: ইতিহাসের অন্যতম দলিল দাঁতনের মোগলমারি, পরতে পরতে লুকিয়ে ঐতিহাসিক গাথা
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement