Durga Puja 2022 : পরিত্যক্ত মন্দিরের এক ফালি দেওয়ালে পুজো নেন মহামায়া
Last Updated:
তৈরি হয় চুন সুরকির দুর্গা মন্দির। একসময় সেই দুর্গা মন্দিরে বজ্রপাত হয়। মানুষের ধারণা ছিল, কোনও দেব মন্দিরে বজ্রপাত হলে অশুভ শক্তি ভর করে। সেই সময় কিছু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। তারপর বাড়তে থাকে বন্য জীবজন্তু ও ডাকাতদের আক্রমণ।
#পশ্চিম বর্ধমান: কাঁকসার জঙ্গলমহলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান বৈচিত্র। এই জঙ্গলের মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে নানান অজানা কাহিনি। তেমনি এক কাহিনির সাক্ষী কাঁকসার মলানদীঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবানপুর গ্রাম। এই ভগবানপুর গ্রামে বহু কাল আগে বসবাস ছিল মানুষের। সেখানে ছিল জমিদারি রাজ। মহা ধুমধাম করে হত দুর্গাপুজো। কিন্তু হঠাৎ করে বদলে যায় চিত্রটা। জমিদারের তৈরি করা দুর্গা মন্দিরে হয় বজ্রপাত। প্রকৃতির এই তাণ্ডবকে অশনি সংকেত মনে করে গ্রাম ছাড়েন এলাকার মানুষ। গ্রাম জুড়ে বিরাজ করে নিস্তব্ধতা, ডাকাত দলের উপদ্রব আর বন্য জন্তুর ঘোরাফেরা। বন্ধ হয়ে যায় জমিদারের শুরু করা পুজো।
বহু কাল সেখানে দশভূজা নিজের পুজো পাননি। তবে মহামায়ার ইচ্ছে ছিল অন্যরকম। তাই কয়েকশো বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুজো ফের শুরু হয়েছে স্থানীয়দের উদ্যোগে। জমিদারের তৈরি করা মন্দিরেই আবার পুজো পাচ্ছেন দেবী দুর্গা। ভগ্ন মন্দিরের এক খন্ড দেওয়ালে আবার শুরু হয়েছে পুজো। সেখানে দেবী দুর্গার ছবি এঁকে চলে পুজোপাঠ। সবুজ গভীর জঙ্গলে ঢাকা নিস্তব্ধ এলাকা চার দিনের জন্য জেগে ওঠে। ভরে যায় মানুষের আগমন কলরবে। নবমীর দিন দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন দেবীর প্রসাদ গ্রহণ করতে। যেখানে বছরের অন্যান্য সময় শুধুমাত্রই অন্ধকার আর ঝিঝিঁ পোকার ডাক বিরাজ করে, সেখানে শরতের মেঘ থেকেই শুরু হয় মানুষের আনাগোনা। এক খন্ড দেওয়ালে চলে মহামায়ার আরাধনা। মহামায়া পদধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মলানদীঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবানপুর গ্রাম।
advertisement
advertisement
জঙ্গলমহলের দুর্গা পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠছে পরিত্যক্ত মন্দিরের এই দুর্গাপুজো। দশভূজা আরাধনায় থাকে না থিমের দাপাদাপি। রাঙা মাটির পথ আর সবুজে ঘেরা ঘন জঙ্গলের মাঝে জনশূন্য ভগবানপুরে নেমে আসেন দেবী দুর্গা। পুজো চারদিন কাঁকসার মলানদিঘি ও লাউদোহার প্রতাপপুরের বহু মানুষের সমাগম হয়। পুজো চারদিন গমগম করে জনশূন্য সেই ভগবানপুর। শোনা যায়, ১১৮৯ সালে এই জনপদ গড়ে উঠেছিল। বন্য জীবজন্তুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিশালাকার জলাশয় খনন করে এলাকাবাসীরা। তৈরি হয় চুন সুরকির দুর্গা মন্দির। একসময় সেই দুর্গা মন্দিরে বজ্রপাত হয়। মানুষের ধারণা ছিল,কোনও দেব মন্দিরে বজ্রপাত হলে অশুভ শক্তি ভর করে। সেই সময় কিছু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। তারপর বাড়তে থাকে বন্য জীবজন্তু ও ডাকাতদের আক্রমণ।
advertisement
সেই ভয়ে ভগবানপুর এলাকার বাসিন্দারা এলাকা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেন। আশ্রয় নেন মলানদীঘি ও লাউদোহার বিভিন্ন প্রান্তে। সেই থেকে জনশূন্য হয়ে যায় ভগবানপুর। এলাকার মানুষজন বলেন, আনুমানিক ৩০০ বছর আগে জনশূন্য গ্রামে ভগ্নপ্রায় দুর্গামন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু করে আকন্দারা গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা গুরুচরণ রায়। তখন থেকেই পুজো চারদিন সব ধর্মের মানুষ ভগবানপুরে পৌঁছে যান। নবমীর দিন মায়ের ভোগ খেতে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়। জনশূন্য ভগবানপুর চার দিনের জন্য ভরে ওঠে মানুষের কোলাহলে। সারা বছরের নিস্তব্ধ গ্রাম মহামায়ার আগমনে আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে।
advertisement
Nayan Ghosh
view commentsLocation :
First Published :
September 15, 2022 4:04 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/পশ্চিম বর্ধমান/
Durga Puja 2022 : পরিত্যক্ত মন্দিরের এক ফালি দেওয়ালে পুজো নেন মহামায়া