#কলকাতা: ব্যারেটো, বেইতিয়ারা মাঠে নামলে ওদের হাততালি আর উচ্ছ্বাসের শব্দব্রহ্মেই স্টেডিয়াম কাঁপে। সোনি, ওডাফারা গোল করলে ওঁদের কাঁধে চেপেই নায়ক হয়। ওরা মানে অর্ণব ভট্টাচার্য, সমর বেসরা, রিভু চট্টোপাধ্যায়, জয় হাইত, সুমন্ত মণ্ডলদের মতো খেলা পাগলরা। মোহনবাগান মাঠে গেলে ওদের দেখা মিলবেই। সবুজ-মেরুন ক্লাবতাঁবুটাই ওদের সব। রোজের জীবনে ওদের আবেগ, ভালবাসা, কান্না সবটাই ঘুরপাক খায় সবুজ-মেরুন রং টা ঘিরে। ওদের কেউ চাকরি করে। কেউ বা পড়াশোনা। সবাই যে শহরেই থাকে, এমনটাও নয়। পুরুলিয়া, খোন্নান, মুরি। কারও আবার ঠিকানা বাংলার বাইরে, ওড়িশায়।
সবুজ-মেরুন ওদের বেঁধে ফেলেছে এক সুতোয়। ওদের এক কথা, এক সুর। ‘আমাদের সূর্য মেরুন, নাড়ির যোগ সবুজ ঘাসে...।’খেলার মাঠ আর সবুজ-মেরুন জার্সি। ওই দুইয়ের বাহুডোরেই বাঁধা পড়েছে ওদের জীবন। খেলতে খেলতে, খেলার মাঠেই ওদের বন্ধুত্ব, ওদের বেড়ে ওঠা। ওদের সব থেকে বড় পরিচয় মোহনবাগানের অন্ধ ভক্ত ওরা। ওই নামটা নিয়েই ওরা স্বপ্নের জাল বোনে। ওই নামটার আড়ালেই বেঁচে থাকে। এইভাবেই একদিন তৈরি করে ফেলা শতাব্দী পেরোন ক্লাবের ফ্যানস ক্লাব ‘জীবনের রং সবুজ-মেরুন’।
গ্যালারি থেকে বেইতিয়া, বাবা, গঞ্জালেজদের ডজ-ড্রিবল-গোল দেখতে দেখতেই একটা সময় বল পায়ে মাঠে নেমে পড়ার ইচ্ছে তৈরি হয়। খবর পৌঁছয় শহর থেকে জেলায়। আসানসোল, বর্ধমান, পান্ডুয়া, হুগলী, হাওড়া, কলকাতা, মেদিনীপুর। বাকি থাকে না কোন জেলাই। জোগাড় হয়ে যায় মাঠও।
কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে মিলন সংঘের মাঠে ২৩ ফেব্রুয়ারি বসে মোহনবাগান ফ্যানস ফুটবল টুর্নামেন্টের আসর। ফুটবলভক্তদের উৎসাহ দেখে সঙ্গে জুটে যায় আউট অফ ওভেন। দিনভর ফুটবল, খানাপিনা আর অবশ্যই ওদের প্রথম প্রেম সবুজ-মেরুন। বেইতিয়া, নাওরেমদের নায়ক বানানোর কারিগররা সেদিন নিজেরাই একেকজন বেইতিয়া, নাওরেম। ষোলটা ফ্যানস ক্লাবের টানটান লড়াই। সকাল গড়িয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। নিমতা মোহনবাগান ফ্যানসকে হারিয়ে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন নদীয়ার বড়জাগুলিয়া মোহন তরী। দিনভর হৈ হৈ। দিনভর আড্ডা-উৎসব। ভরপুর ফুটবল। ব্যারেটো, বেইতিয়াদের টানে যারা গ্যালারি ভরান, বছরে এই একটা দিন তারাই নায়ক। এই দিনটায় তারাই ব্যারেটো, তারাই ওডাফা, তারাই বেইতিয়া। বটতলায় ফুটবল বেঁচে আছে ওদের ভরসায়। ওরাই তো বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলার ফুটবলকে। ওদের ঘিরেই তো ঝড়-ঝাপটা সামলে বাঙালির রক্তে অক্ষত থাকে লাল-সবুজ-হলুদ-মেরুন। ফুটবল জিন্দাবাদ।
PARADIP GHOSH