হৃদয়পুরের মা সিদ্ধেশ্বরীর পুজোর মূল উপাচারই 'নুন', লবণ দানের বিশেষ প্রথা আজও অব্যাহত, কেন দেওয়া হয় নুন?
- Published by:Sanjukta Sarkar
- hyperlocal
- Reported by:Rudra Narayan Roy
Last Updated:
বারাসাতের হৃদয়পুরের মা সিদ্ধেশ্বরীর পুজোর মূল উপাচারই হল নুন, ভোগেও দেওয়া হয় নুন
উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসতের হৃদয়পুরের মা সিদ্ধেশ্বরীর পুজোর মূল উপাচারই হচ্ছে নুন। মা কালীর ভোগে দেওয়া হয় লবণ। নুন উপাচারেই সন্তুষ্ট থাকেন মা কালী। মা সিদ্ধেশ্বরী নামেই ভক্তদের কাছে তিনি পরিচিত। প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় দু’বার আরতি হয় মায়ের মন্দিরে। দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন সারা বছরই। তবে কালীপুজোর ক’টা দিন ভক্ত সমাগমে উপচে পড়ে হৃদয়পুরের এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দির।
কথিত আছে, মা কালীর উপাসক ঘোষ পরিবারের মেয়ে আশালতা ছিলেন ভীষণ আধ্যাত্মিক। বলা হয় অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারিণী ছিলেন তিনি। মন্দিরে যে মূর্তি রয়েছে, তা আশালতাই মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তৈরি করেছিলেন। আশালতারা তখন বাংলাদেশে থাকতেন। খুব ছোট থেকেই ঠাকুর, দেবতার প্রতি অচলাভক্তি ছিল আশালতার। বড়দের কাছে মনযোগ দিয়ে ঠাকুরের কথা শুনতেন। কখনও তিনি দেখতেন পুকুরপাড়ে চার হাত তোলা দেবী মূর্তি। হাত জোড় করে ভক্তিভরে সেই মূর্তির সামনে নতজানু হতেন। আবার কখনও মাটি থেকে হঠাৎ উঠে আসা সোনার বরণ কোনও দেবীমূর্তি তাঁর সামনে পুজো উপাচারের ঘট এবং নৈবেদ্য রেখে যেতেন।
advertisement
advertisement
এ সব অলৌকিক ঘটনা দেখে তন্ময় হয়ে যেতেন কিশোরী আশালতা। সব সময়ে ঈশ্বর-চিন্তায় মগ্ন কিশোরী মেয়েকে নিয়ে কী করা যায় তা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন মা-বাবা। অনেক ভেবে একজন সৎ পত্রের সন্ধান পেয়ে ১৩ বছর বয়সেই হৃদয়পুরে আশালতার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরেও আশালতা ঈশ্বরভক্তি ছিটেফোঁটা কমেনি। বরং লোকমুখে মুখে আশালতার আধ্যাত্মিক শক্তির কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই তাঁকে মা বলে ডাকতে শুরু করেন। সিদ্ধিলাভ করা যোগিনীর পরিচিতি পান আশালতা।
advertisement
মা হিসেবে সর্বজনশ্রদ্ধেয়া আশালতার কাছে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন নানা সমস্যা নিয়ে আসতেন। তিনি নুন আর মনসা গাছের নীচে জমে থাকা মাটি দিয়ে সকলের সমস্যার সমাধান করে দিতেন বলে শোনা যায়। এরপর তাঁরই উদ্যোগে মা সিদ্ধেশ্বরীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয় হৃদয়পুরে। ধীরে ধীরে বারাসতের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়ে সিদ্ধেশ্বরীর কালীর মহিমা।
advertisement
ভক্তদের দানে হৃদয়পুরের দেবালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এক সময় মায়ের তরফে মন্দিরের পুরোহিতরা ভক্তদের প্রসাদী ফুল ও মনসাতলার মাটি দিতেন। আশালতা দেবীর সময়েই নুন এবং মাটি ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়ার রীতি আজও অব্যাহত। মন্দিরে ভক্তদের মনের বাসনা পূর্ণ হলে তাঁরা জোড়া খড়্গ, নুন আর পাঁচ রকমের ফল দিয়ে মানত ভাঙেন।
মা সিদ্ধেশ্বরীর মন্দিরে মানত করে সন্তান লাভের মনস্কামনা পূর্ণ হলে সামর্থ্য অনুযায়ী গোপালের মূর্তিও দান করেন। সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে এখন প্রচুর সংখ্যক গোপাল রয়েছে। উল্লেখ্য, এখনও এই মন্দিরে পুজো দিতে আসা ভক্তদের পুজো উপাচারে থাকে নুন। আশালতা দেবীর ছেলে নকুল ঘোষ বলেন, আসলে তখনকার দিনে গরিব মানুষের নুন ছাড়া পুজো উপাচারে আর কিছু দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই সকলে নুনই দিতেন। সেই লবণ দানের বিশেষ প্রথা আজও সমান ভাবে চলে আসছে এখানে।
advertisement
Rudra Narayan Roy
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
October 20, 2025 7:27 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
হৃদয়পুরের মা সিদ্ধেশ্বরীর পুজোর মূল উপাচারই 'নুন', লবণ দানের বিশেষ প্রথা আজও অব্যাহত, কেন দেওয়া হয় নুন?