#বাঁকুড়া : সমাজের বুকে বার্তা দিতে এক অনন্য নজির ইন্দাস এর গৃহবধূর। চারিদিকে যখন বৌমার অত্যাচারে শ্বশুর, শাশুড়িকে আশ্রয় নিতে হচ্ছে কোন এক বৃদ্ধাশ্রমে আবার কখনও নববধূর উপর অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় ফলে তাকে একপ্রকার নিজের আত্মরক্ষায় আশ্রয় নিতে ছুটতে হয় পুলিশের দরবারে। ঠিক তখনই এক অন্য ছবি ধরা পড়ল ইন্দাস থানার অন্তর্গত মেরাল গ্রামে। এই গ্রামে বসবাস করেন নির্মেলেন্দু মাঝি এবং কাননবালা মাঝি। পরিবারে অনেক মানুষ, তাই দিয়েই বাড়ি ভর্তি। বাড়িতে আছে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। রয়েছে তাদের ছেলেমেয়েরা। ছেলেরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকে এবং মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে অন্যত্র। ফলে সব সময় তাঁদের একসঙ্গে দেখা হয় না। কিন্তু তাঁরা ভোলেননি তাঁদের বাবা-মায়ের ৫০তম বিবাহ বার্ষিকীর কথা।
অন্যবার বিবাহবার্ষিকীতে ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল মাধ্যমে মধ্য দিয়ে তারা বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানায় তাদের মা-বাবাকে। তবে তাঁরা এবছর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাদের বাবা-মাকে তারা একটা চমক দেবেন এ বছর। তবে বেশিরভাগ উদ্যোগ নিয়েছিল গৃহবধূ অর্পিতা মাঝি। দেখতে দেখতে প্রায় ৫০ টা বছরের দাম্পত্য জীবন কখন যে সুখ দুঃখের মাঝে একসাথে কেটে গেছে তা বুঝতেই পারেননি বছর ৭৮ এর নির্মেলেন্দু মাঝি এবং বছর ৬৬ এর কাননবালা মাঝি। একসাথে মান অভিমানের পালার মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত করেছেন বিবাহ জীবনের ৫০ বছর। আর এই অর্ধশতক বছরের প্রেমে যাতে মরচে না পড়ে যায় তারই ব্যবস্থা করল তাদের ছেলে, বৌমা, নাতি, নাতনি এবং নাত বউরা। পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নির্মেলেন্দু বাবু এবং কানন বালা দেবীর ৫০ বছর আগে যেভাবে বিয়ে হয়েছিল তার থেকে আরো ভালোভাবে একেবারে অনুষ্ঠান করে নিমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে বিয়ে দেওয়া হবে তাদের। তবে এই ঘটনা মোটেও জানতে দেওয়া হয়নি বৃদ্ধ দম্পতিকে। এক বিয়েতেই রক্ষে নেই তার উপর আবার বিয়ে কথাটা শোনার পরই রীতিমতো রেগে উঠেছিলেন বিবাহিত দম্পতি। তবে ছেলে-বৌমার উপর রাগ দেখালেও সেই রাগ গলে গেল নাতি নাতনী এবং নাত বউদের অনুরোধে। অবশেষে রাত্রি নাগাদ দাদু হাজির হলেন একেবারে বিয়ের সাজে গলায় রজনীগন্ধার মালা পরে। অপরদিকে দিদিমাকে নববধূর সাজে সাজানো হল। ততক্ষণে একেবারে আমন্ত্রিত আত্মীয়-স্বজনরা এসে হাজির হয়েছেন। নবদম্পতিকে নিয়ে একটি স্টেজ তৈরি করে সেখানে বসানো হয়।
আরও পড়ুন - ৭৫ পেরিয়েছে বয়স, কালনার স্কুলের দিদিমণি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চ থেকে জিতলেন সোনা!আলোর সাজে সাজানো হয়েছিল গোটা বাড়ি। মাইকে বেজেছে সানাইয়ের সুর। তৈরি করা হয়েছিল বিবাহের উপযুক্ত আসনও। বর এবং বধুকে বরণ করে নেওয়া হল পরিবারের পক্ষ থেকে। তারপর চলল মালাবদল থেকে সিঁদুরদান পর্ব। বিবাহের দাম্পত্য জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কাটা হল বিশাল আকারের কেক। অতিথিরা একে একে এসে বর কনের হাতে তুলে দিলেন নানা উপহার। বিয়ে বাড়িতে আমন্ত্রিত আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের অপর স্থানে তৈরি করা খাবার স্থানে পরিবেশিত করা হল মাংস ভাত সহ বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন রকমের পদ।
আরও পড়ুন- Fake Doctor: পরণে সাদা অ্যাপ্রন, রোগীর পরিবার দিচ্ছে পরামর্শ, কলকাতা মেডিক্যাল থেকে গ্রেফতার ভুয়ো চিকিৎসক!ওই দম্পত্তির নাতি সন্দীপ মাঝি বলেন, ‘‘সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আমরা দাদু ঠাকুমার বিয়ে দিয়েছি। আমরা দাদু ঠাকুমাকে মালাবদল করালাম ,কেক কাটানো হল। আমরা খুব মজা করেছি । খাওয়া দাওয়া,নাচ-গান একদম জমিয়ে করেছি ।’’
তাদের বাড়ির পুত্রবধূ অর্পিতা মাজি বলেন, এই অনুষ্ঠানটা আমরা খুবই ভালো করে করতে চেয়েছি। আমরা মা-বাবাকে আনন্দ দিতে চেয়েছি। বাবা মা যেমন আমাদের কাছে ঠিক তেমনই শ্বশুর শাশুড়ি। আজকে সমাজে দেখা যায় অনেকে বাবা,মা ও শ্বশুর-শাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় কিন্তু আমি বলি বাবা মা আর শ্বশুর-শাশুড়ির মধ্যে কোন তফাৎ নেই ভালোবাসা সবার কাছে সমান।
পাত্র নির্মলেন্দু মাজি বলেন, এটা আমাদের ৫০ বছর বিবাহ বার্ষিকী। আমাদের বিয়ে ৫০ বছর হয়ে গেল। আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার ছেলেরা,মেয়ে, নাতি ,নাতবৌ সকলে মিলে এই উদ্যোগটা নিয়েছে। প্রথমে কিছু জানতে পারিনি । অনেক পরে জানতে পেরেছি যে এটা ওরা বড় করে একটা অনুষ্ঠান করছে। শুধু আনন্দ নয় বরং গর্ববোধ করছি। আজকে বাবা মার প্রতি ছেলেরা যে ভালোবাসা দেখিয়েছে সত্যিই আমার খুবই ভালো লাগছে।
পাত্রী কানন বালা মাজি বলেন, ‘‘দেখতে দেখতে আমাদের ৫০ বছর কেটে গেল। আজকে খুবই ভালো লাগছে আমাদের ছেলে মেয়ে নাতি-নাতনি বউমা সকলেই যে এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব দেখে সেই পুরনো দিনের স্মৃতিকেই উৎসর্গ করলেন তিনি।’’
JOYJIBAN GOSWAMIনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Marriage, Wedding, Wedding anniversary