#হলদিয়া: ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশেষ করে যারা পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছেন, শীতকালে সেখানকার তাপমাত্রা অনেকসময় প্রায় মাইনাস ৫৭ ডিগ্রীতে নেমে যায়। এই হাড়হিম করা ঠান্ডাতে বেশি সময় তারা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তাদের শরীর শিথিল হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে। যদি এমনিতেই জওয়ানদের সঙ্গে অনেক ভারী ভারী ব্যাগ, রাইফেল তো থাকেই। এতকিছু নিয়ে চলা ফেরা করতে হয় তাদের। এমতাবস্থায়, তাদের পা শিথিল হয়ে অনেক বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। বিদেশী শত্রুরা হামলা চালালে, সুরক্ষিত জায়গায় ফিরে যাওয়া কিংবা পায়ের পেশিতে ক্র্যাম্প হওয়া, হঠাৎ করে ধস নামা, বরফ খাদে তলিয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সময় পায়ের শিথিলতা কাটিয়ে দ্রুত নড়া চড়া জরুরি, নাহলে জীবন হানি হতে পারে।
সিয়াচেন, লাদাখের হাড়হিম করা ঠান্ডায় প্রহরারত ভারতীয় জওয়ানদের কাজের সুবিধার জন্য, বিশেষ ধরণের জুতো উদ্ভাবন করলেন হলদিয়ার সাঁইত্রিশ বছরের তরুণ গবেষক অনির্বাণ দাস। সঙ্গী আরামবাগের সৈকত সরকার, উত্তর ২৪ পরগনা এর রাইমা ঘোষ, হাওড়ার রীতম চ্যাটার্জী , দুর্গাপুরের মৌবানী কুচল্যান, মালদহ এর সৌভিক ঘোষ পাঁচ কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করা পড়ুয়া। খুব অল্প খরচে তাঁরা তৈরি করেছেন ‘কেয়ার ফ্রি সোল'। এই সোল ব্যবহার করেই তৈরি হয়েছে, প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও পরা যাবে, এমন আরামদায়ক জুতো। সিয়াচেনের মাইনাস ৫৭ ডিগ্রিতে জুতো কার্যকরী হবে বলে দাবি গবেষকের।
'কেয়ার ফ্রি সোল' প্রযুক্তিতে প্রধানত রোবোটিক্স এর সেন্সর টেকনোলজি ব্যবহার হয়েছে। প্রবল ঠাণ্ডায় এই জুতোর সোল একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে কম্পনের দ্বারা, এবং শক্তির উৎপন্ন করা হয়েছে যা জওয়ানদের দেহে রক্ত সঞ্চলন বাড়িয়ে দেবে এবং পায়ের তলাকে কিছুটা উষ্ণতা বাড়িয়ে শরীরকে চনমনে রাখবে। তরুণ অধ্যাপক ও তাঁর সহযোগী পাঁচ পড়ুয়ার এই নয়া উদ্ভাবন প্রকল্পকে ‘বেস্ট ইনোভেটর অ্যাওয়ার্ড’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্সটিটিউশন অব ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার্স (IETE) ।
ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার্স (IETE) ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের একটি অনুমোদিত সংস্থা। সম্প্রতি দিল্লিতে ইন্ডিয়ান আর্মড ফোর্সেস - এর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত, গবেষক অনির্বাণ দাসের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এই নয়া উদ্ভাবনকে কীভাবে সেনাবাহিনীতে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। অনির্বাণ দাস বর্তমানে কলকাতার ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি টেক ও এম টেক করার পর হলদিয়ার চৈতন্যপুরের বাসিন্দা অনির্বাণ ‘গ্রস এনরোলমেন্ট ইনরোলমেন্ট ইনডেক্স' নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই ইনডেক্স শিক্ষা ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতির ওপর আলোকপাত করেন। জাতীয় শিক্ষানীতির ওপর কাজ করায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা দেবীসিং পাতিল ভূয়সী প্রশংসা করেন। দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের সর্বোচ্চ সংস্থা তাঁর গবেষণা কাজের প্রশংসা করল। নয়া উদ্ভাবন নিয়ে গবেষক অনির্বাণবাবু বলেন, "প্রচণ্ড ঠান্ডায় জওয়ানদের দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে হয়। তাঁদের সঙ্গে থাকে ভারী ব্যাগ, রাইফেল। কাজের সময় পা শিথিল হলে বিপদের আশঙ্কা থাকে। ঐ সময় শত্রুপক্ষ হঠাৎ আক্রমণ করলে পায়ের পেশিতে টান ধরতে পারে। সেজন্য জওয়ানদের জুতোর তলায় বিশেষ ডিভাইস বসানোর ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। ব্যাটারি চালিত এই ডিভাইস থেকে ভাইব্রেশন ও এনার্জি একসঙ্গে উৎপন্ন হবে। তা জওয়ানদের চনমনে রাখতে সাহায্য করবে এবং সুরক্ষা দেবে। দু'পায়ে দু'টি ডিভাইসের জন্য হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ পড়বে। তবে বেশি সংখ্যক ডিভাইস তৈরি হলে খরচ ১৫০ টাকার কম হবে।"
অধ্যাপক অনিবার্ণ দাস রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোশ্যাল ইনোভেশন ছড়িয়ে দিতে এবং তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন গ্রামে কাজ করা শুরু করেছেন। গবেষক অধ্যাপক অনির্বাণ দাসের ৬৪টি পেটেন্টে ফাইল হয়েছে। সেন্সর কাজে লাগিয়ে, নানা ধরনের ড্রোন উদ্ভাবনের কাজে ব্যস্ত তিনি। হেক্সাকপ্টার নামে অথ্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা ড্রোন তিনি তৈরি করেছেন। মাথার চুলের ফলিকল বিশ্লেষণ করে ব্রেন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা নিয়েও গবেষণা করছেন তিনি, যা অধ্যাপক অনির্বাণ দাসের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bipin rawat, East Medinipur, Engineering, Haldia, Indian Army, Research, Researchers