#পূর্ব বর্ধমান: ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামের নাম সাঁওতাল বিদ্রোহ, আর এই দিনকে স্মরণ করে পালিত হয় হুল দিবস। ‘হুল’ কথার অর্থ বিদ্রোহ, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের ঠিক দু বছর আগে ১৮৫৫ তে ঘটে যাওয়া এই বিদ্রোহই ছিল ইংরেজদের দেশ থেকে বহিষ্কার করার প্রথম আন্দোলন। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন সিধু ও কানুর নেতৃত্বে ভাগনাদিহির মাঠে সমবেত হয় হাজার হাজার সাঁওতাল৷ এরপর কলকাতা অভিমুখে প্রথম গণযাত্রা শুরু করেন তাঁরা। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক সংগ্রামের জন্য সেই প্রথম মিছিল বা গণযাত্রার সূচনা হয়েছিল। সেটাই ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন। তাই সিধু কানু কে শ্রদ্ধা জানতে এই দিনটি পালিত হয়। গোটা রাজ্যের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানেও জেলাতেও পালিত হল হুল দিবস। কার্জন গেট সংলগ্ন জেলাশাসকের অফিসের সামনে সিধু কানুর আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করা হয় এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। মাল্যদান করেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধারা সহ-সভাপতি দেবু টুডু সহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব।
এই হুল দিবস উপলক্ষে বিরহাটা থেকে কার্জন গেট সংলগ্ন জেলাশাসকের অফিস এর ঠিক সামনে সিধু কানু মূর্তি পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রারও আয়োজন করা হয় এদিন। এই শোভাযাত্রার ঠিক সামনে ছিলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি দেবু টুডু। এই শোভাযাত্রায় বহু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনও অংশগ্রহণ করেন। এদিন বর্ণনাঢ্য শোভাযাত্রায় দেখা যায়রাজ্যের ক্ষুদ্র মাঝারি ও কুটিরশিল্প এবং প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথাকে ধামসা মাদল বাজাতে। বর্ধমান শহরেই নয় জেলার একাধিক জায়গায় পালিত হল হুল দিবস।
আরও পড়ুনঃ খুলেছে মিষ্টি হাব, বাড়ছে মিষ্টি বিক্রিকালনা, পূর্বস্থলী সহ অন্যান্য জায়গায় পালিত হচ্ছে হুল দিবস। উল্লেখ্য, সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্যই ছিল, ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী এবং অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর মহাজনদের শোষণ, অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য গড়ে তোলা। ১৮৫৫ সালের আরও ৭৫ বছর আগে ১৭৮০ সালে সাঁওতাল জননেতা তিলকা মুর্মু, যিনি তিলকা মাঞ্জহী নামেও পরিচিত ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে শোষকদের বিরুদ্ধে গণসংগ্রামের সূচনা করেছিল সাঁওতালরা। সাঁওতালদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করে পাঁচ বছর ধরে ব্রিটিশ অনাচার ও শোসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েছিলেন তিলকা মাঞ্জহী৷
আরও পড়ুনঃ মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে জেলায় তৈরি হল টিমতার ঠিক ৭৫ বছর পর সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সান্তাল হুল-এর সূচনা হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সাঁওতাল বিদ্রোহের দুজন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা এই ভাতৃদ্বয়। তবে কিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে ব্রিটিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সিধু। পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে ১৮৫৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভগনডিহির সন্নিকটে পাঁচকাঠিয়া বটবৃক্ষে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় কানুকে। তাঁদের সেই আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতেই আজও পালিত হয় 'হুল দিবস'।
Malobika Biswasনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Purba bardhaman