বারাণসী: নিছকই পথের কুকুর। কথ্য ভাষায় তারা ‘নেড়ি কুকুর’। বারাণসী থেকে সেরকম দুই সারমেয়ই এ বার পাড়ি দিল বিদেশে। তাদের নাম মোতি এবং জয়া। তারা এখন খবরের শিরোনামে। এই দুই সারমেয়কে দত্তক নিয়েছেন দুই বিদেশি পর্যটক। নতুন পালকের সঙ্গে মোতি ও জয়া এ বার উড়ে যাবে যথাক্রমে ইতালি এবং নেদারল্যান্ডসে। এর পিছনেও সক্রিয় বঙ্গসন্তান ইন্দ্রনীল বসু। পশুপ্রেমী এই ডাক্তার ডায়াবেটোলজিস্ট। বারাণসীতে তাঁর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে। সংস্থার নাম অ্যানিমোটেল। এই সংস্থার উদ্যোগে ত্বরান্বিত হয়েছে পথকুকুরদের দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া।
ইন্দ্রনীল জানিয়েছেন, ‘‘দুই ভারতীয় কুকুরের পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের নিয়ম অনুযায়ী ডিজিটাল নম্বর এসেছে মাইক্রোচিপ থেকে। ওই নম্বর-সহ মাইক্রোচিপ লাগানো হয়েছে দুই সারমেয়র দেহে। যাতে বিমানবন্দরে তাদের কোনও অসুবিধে না হয়। চিপের ১৫ সংখ্যার নম্বর থেকেই তাদের সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। মোতির রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে পর্তুগালে। সম্পূর্ণ তাদের টিকাকরণ প্রক্রিয়াও। এখন দুই সারমেয়ই আছে কোয়ারাইন্টিনে। আগামী ১৩ জুলাই মোতি উড়ে যাবে ইতালিতে। জয়া অগাস্টে পৌঁছবে নেদারল্যান্ডসে। অফিশিয়াল সব কাজকর্ম সম্পূর্ণ করা হয়েছে। জানিয়েছেন ইন্দ্রনীল।
ঘটনার সূত্রপাত পাঁচ মাস আগে। ইতালীয় তরুণী ভেরা ল্যাজারেত্তি আধ্যাত্মিক সফরে এসেছিলেন বারাণসীতে। গঙ্গার ঘাটে তিনি দেখতে পান মোতিকে। সে সময় মোতি ছোট্ট একটি কুকুরছানা। তাকে চটের বস্তায় ভরে ঘাটে ছুড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল কেউ বা কারা। কুকুরের গলার করুণ ডাক শুনে বস্তা খুলে ভেরা মুক্ত করেন মোতিকে। নতুন জীবন পায় অবলা কুকুরছানা।
এর পরই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভেরা। ইচ্ছাপ্রকাশ করেন মোতিকে দত্তক নেওয়ার। এর পরই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে শুরু হয় খাতায় কলমে নানা কাজের প্রক্রিয়া। আগামী মাসে দ্বিতীয় বার ভারতে আসছেন ভেরা। মোতিকে নিয়ে উড়ে যাবেন ইতালিতে। জয়ার উদ্ধারপর্বও জড়িয়ে আছে বিদেশি পর্যটকের সঙ্গেই।
একমাস আগে নেদারল্যান্ডস থেকে বন্ধুর সঙ্গে বারাণসীতে এসেছিলেন মেরেল বন্টেলব্যাল। তাঁরাও গঙ্গার ঘাট থেকে উদ্ধার করেন পথকুকুর জয়াকে। এর পর তাঁরাও ইচ্ছাপ্রকাশ করেন জয়াকে দত্তক নেওয়ার। তার পর চলে খতায় কলমে কাজ করার প্রক্রিয়া। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে এ সব কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর এ বার জয়ার উড়ে যাওয়ার পালা। অগাস্টে ভারতে আসবেন মেরেল। জয়াকে নিয়ে ফিরবেন নেদারল্যান্ডসে।
আরও পড়ুন : ২০০০ টাকা দিলে মিলছে ২১০০ টাকার জিনিস! কোথায় এই দোকান, জেনে নিন
ইন্দ্রনীল এবং তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণা দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করছেন পথকুকুরদের নিয়ে। লকডাউনে রোজ গড়ে ৭৫০ সারমেয়কে খাওয়াতেন তাঁরা। বাড়ির বেসমেন্টে রয়েছে পথকুকুরদের আশ্রয়। এই মুহূর্তে ২৬ টি কুকুর রয়েছে তাঁদের আশ্রয়ে। এই দম্পতি জানিয়েছেন এই উদ্যোগের সম্পূর্ণই তাঁদের শখ। এর জন্য যা খরচ হয়, তার পুরোটাই বহন করেন তাঁরা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Stray dogs, Varanasi