১৬৫ কিলোমিটার চড়াই বেয়ে তুলে আনলেন ‘পাহাড়ি ভূত’-এর ছবি! পাওলোস্কির জীবনের সেরা সম্পদ মুগ্ধ করবে আপনাকেও
Last Updated:
photographer treks in Nepal to capture a snow leopard: এদের গায়ের রঙ এমনই যে স্থানীয় সংস্কৃতিতে স্নো লেপার্ডকে 'পাহাড়ের ভূত' আখ্যা দেওয়া হয়।
#কাঠমান্ডু: চারদিকে যেন ধবধবে সাদা চাদর পাতা। আর তারই উপর দিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিমায় হেঁটে চলেছে সে। দূর থেকে, বহু দূর থেকে তার গোটা কতক ছবি তুলতে পেরেছেন এক অতিউৎসাহী চিত্রগ্রাহক। আর সে ছবি যেন মোহনমায়া বিস্তার করেছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়।
সম্প্রতি কয়েকজন ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার নেপালের বরফ ঢাকা পাহাড় চূড়ায় দেখা পেয়েছেন একটি তুষার চিতাবাঘ বা স্নো লেপার্ডের। আসলে স্নো লেপার্ড এমনই এক বিরল প্রাণী, যার দেখা পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে এদের আদি নিবাস। সাধারণত এরা কোনও ভাবেই মানুষের মুখোমুখি হয় না। জঙ্গলেও অন্য প্রাণীদের মতো এদের দেখা যায় না। এরা খুব সন্তর্পণে আত্মগোপন করে থাকতে ভালোবাসে।
advertisement
advertisement
এমনিতেও এদের সংখ্যা খুবই কম। আইইউসিএন-এর তরফ থেকে প্রকাশিত লাল তালিকায় বিপন্ন প্রাণী হিসেবেই দেখানো হয়েছে স্নো লেপার্ডকে। কারণ, ক্রমশ কমছে এদের সংখ্যা। হিসেব বলছে সারা বিশ্বে আনুমানিক ১০ হাজার পূর্ণবয়স্ক স্নো লেপার্ড পাওয়া যেতে পারে। ২০৪০ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটা আরও প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
advertisement
মার্জার পরিবারের এই বিশেষ সদস্যটিকে সনাক্ত করাই খুব কঠিন কাজ। বরফে ঢাকা পাহাড়ের গায়ে এরা এমন ভাবে নিজেদের লুকিয়ে ফেলে যে চিনে নেওয়া কষ্টকর। তা ছাড়া এদের গায়ের রঙ এমনই যে স্থানীয় সংস্কৃতিতে স্নো লেপার্ডকে 'পাহাড়ের ভূত' আখ্যা দেওয়া হয়। এরা মূলত তিব্বত মালভূমিতে এবং ভারত, নেপাল এবং ভুটানে হিমালয়ের উচ্চতম এলাকাগুলিতে বাস করে। তবু সাধারণ অভিযাত্রীদের কাছে এরা অধরাই থেকে যায়।
advertisement
সম্প্রতি কয়েকজন অভিযাত্রী এবং বন্যপ্রাণ চিত্রগ্রাহক বহু দূর থেকে এই বিরল প্রাণীটির ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন।তাঁদেরই একজন মার্কিন চিত্রগ্রাহক কিটিয়া পাওলোস্কির কিছু ছবি ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে। মনোহর পার্বত্য পরিবেশের পটভূমিতে পাওয়লোস্কির লেন্সে ধরা পড়েছে বিরল এই তুষার প্রাণী। পাওলোস্কি নিজেই তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে স্নো লেপার্ডের বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। মোট পাঁচটি পোস্টে এই বিরল প্রাণীর ছবি শেয়ার করেছেন তিনি।
advertisement
প্রথম পোস্টে পাওলোস্কি ব্যাখ্যা করে জানান, তাঁরা সাদা চিতাবাঘটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রায় ১০৩ মাইল (১৬৫ কিলোমিটার) পথ পায়ে হেঁটে যেতে পাহাড় চড়েছিলেন। উত্তর-মধ্য নেপালের অন্নপূর্ণা সংরক্ষিত এলাকার প্রায় ৭,৬২৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তাঁরা এই বিরল প্রাণীটির খোঁজ শুরু করেন। দীর্ঘ পোস্টে, পাওলোস্কি তাঁর পুরো যাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন।
সাগরমাতা জাতীয় উদ্যান থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম পেরিয়ে কালী গন্ডকী নদী, তামাকোশী নদী উপত্যকা পার হয়ে তবে লক্ষ্যে পৌঁছেছিলেন পাওলোস্কি এবং তাঁর সঙ্গীরা। পাওলোস্কি জানিয়েছেন যাত্রা পথে তাঁরা ব্যবহার করেছিলেন একটি ছোট্ট বিমান, যা প্রায় একটি স্কুল বাসের সমান।
advertisement
তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘গোরখ শেপের বাইরে এক হিমশীতল সকালে, আমি আমার নিক্কর ৫০০ মিমি এফ/৪ লেন্সটিতে চোখ রেখেছিলাম। একটা বিশাল খাদের পরেই দেখা গেল খুম্বু উপত্যকাটি। আমার ক্যামেরার টেলিফটো লেন্সের মধ্যে দিয়ে আমি পুমোরি পাহাড়ের ছায়ায় কিছু একটা লক্ষ্য করলাম। প্রথমে, ভেবেছিলাম ওটি একটি পাথর, কিন্তু না, ওটা আমি যা খুঁজছিলাম ঠিক তাই।’
advertisement
পাওলোস্কির পোস্ট করা প্রথম ছবিতে বহু দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সাদা চিতাবাঘটিকে। দু’টি তুষারাবৃত পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সে হেঁটে চলেছে। পাওলোস্কির দ্বিতীয় পোস্টে দেখা যায় বিরল বিচিত্র সেই প্রাণীটিকে একটি খাদের ধারে পাথরের উপর বসে রয়েছে।
পাওলোস্কি লিখেছেন, ‘তুষারাবৃত উপত্যকা ফ্যান্টম অ্যালির উপর একটি খাদের ধারে বসে রয়েছে একটি সাদা চিতাবাঘ। ৯ অক্টোবর, পূর্ণ চন্দ্র যেন বরফ ঢাকা হিমালয়ের চূড়াগুলিকে ভুতুড়ে আলোয় ধুয়ে দিয়েছে, কোনও হেডল্যাম্পের প্রয়োজনীয়ই নেই। রাতারাতি সূক্ষ্ম তুষার কণার ঝাপটায় ভরে গিয়েছে চারপাশ। আমার স্লিপিং ব্যাগও বরফের শিশিরে ভিজিয়ে দিয়েছে।’
‘তুষার চিতাগুলি ভোর এবং সন্ধ্যার আশেপাশে সবচেয়ে সক্রিয় থাকে৷ ভোর ৪টার দিকে আমি বুট পরে রওনা দিলাম। রাতের দিকে একটা শীতল ভুতুড়ে সৌন্দর্য ছিল। ২৫ পাউন্ড ক্যামেরা গিয়ার নিয়ে, আমি গোরাক শেপের উত্তর-পূর্ব দিকে চলে গেলাম এবং একটি জমে যাওয়া হ্রদ পেরিয়ে গেলাম। তুষারময় পাহাড়ের ঢালগুলি এমন ভাবে চিকচিক করছে যেন কেউ হিরে বুনে দিয়ে গিয়েছে ওখানে’, লিখেছেন পাওলোস্কি।
তাঁর দ্বিতীয় শেষ পোস্টটিতে দেখা গিয়েছে আরেকটি অত্যাশ্চর্য ছবি। এটিও বেশ দূর থেকে তোলা। এখানে দেখা যাচ্ছে অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে হাঁটছে সাদা চিতাবাঘটি। আসলে প্রাণীটি একটি ঢালে আরোহণ করছে। পটভূমিতে সূর্যের আলো ঠিকরে বেরচ্ছে।
পাওলোস্কি বলেছেন, এই ছবিগুলি তাঁর জীবনে তোলা সব থেকে কঠিন ছবি। একই সঙ্গে এগুলিই তাঁর জীবনের সেরা পুরস্কার।
view commentsLocation :
First Published :
November 10, 2022 4:06 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/পাঁচমিশালি/
১৬৫ কিলোমিটার চড়াই বেয়ে তুলে আনলেন ‘পাহাড়ি ভূত’-এর ছবি! পাওলোস্কির জীবনের সেরা সম্পদ মুগ্ধ করবে আপনাকেও