Full Moon Tea: মাদলের মাদকতা আর পূর্ণিমার চাঁদের আলোমাখা 'ফুল মুন টি প্লাকিং', উত্তরের চা বাগানে যা ঘটল অবিশ্বাস্য়!
- Published by:Raima Chakraborty
- Reported by:RAJKUMAR KARMAKAR
Last Updated:
Full Moon Tea: মাদলের দ্রিমি দ্রিমি বোলে নাচগান আর চা শ্রমিকদের কানের দুলের খন খন আওয়াজে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে পূর্ণিমার আলোতে চা পাতা তোলা হল বাগানে।
হাসিমারা: ডুয়ার্সের চা পর্যটনে নতুন অধ্যায়! ‘ফুল মুন’ টি প্লাকিং দেখতে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ল মাঝের ডাবরি চা বাগানে। হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনি থেকে সেনা পরিবারের লোকেরা সন্ধ্যায় হাজির হলেন আলিপুরদুয়ারে। সংলগ্ন কোচবিহার থেকেও পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ল মাঝের ডাবরি চা বাগানে।
মাদলের দ্রিমি দ্রিমি বোলে নাচগান আর চা শ্রমিকদের কানের দুলের খন খন আওয়াজে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে পূর্ণিমার আলোতে চা পাতা তোলা হল এই বাগানে। একে এদিন দোল পূর্ণিমা, তার উপর লক্ষ্মীবার ( বৃহস্পতিবার)। ফলে এই সুযোগ এবারও হাতছাড়া করলেন না আলিপুরদুয়ারের মাঝের ডাবরি চা বাগান কর্তৃপক্ষ। চাঁদের আলোয় চা পাতা তুলল আলিপুরদুয়ারের মাঝের ডাবরি চা বাগানের শ্রমিকেরা। ৩১ সি জাতীয় সড়কের ধারেই মাদলের দ্রিমি দ্রিমি আওয়াজে আদিবাসী নৃত্যের ব্যবস্থা করেছিল এই চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
advertisement
আরও পড়ুন: পুষ্টির পাওয়ার হাউজ অঙ্কুরিত মুগ, লোকে চেনে স্প্রাউট নামে! রোগমুক্ত হতে রোজ খান
মাদলের তালের মাদকতায় পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে ১১৫ জন চা শ্রমিক এদিন চা পাতা তুললেন। এদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চা পাতা তোলা হয়েছে। প্রায় ১০০০ কেজি চা পাতা তুলেছেন ১১৫ জন মহিলা চা শ্রমিক। মাঝের ডাবরি চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধর বলেন, “ রাতে চা বাগানের শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা ১১৫ জন চা শ্রমিককে এদিন চা পাতা তোলার কাজে সামিল করেছিলাম। এই পাঁচ বছর হল আমরা ফুল মুন টি তৈরি করছি। এদিন হাসিমারা বায়ুসেনা পরিবার ছাড়াও সংলগ্ন কোচবিহার ও অন্যান্য জেলা থেকে মানুষেরা ফুল মুন টি প্লাকিং দেখতে ভিড় করেছিল। চা পর্যটনের এটি একটি নতুন দিক। ভারতবর্ষে একমাত্র আমরাই এই চা তৈরি করি।”
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন: হোলিতে বৃষ্টি বাংলার একাধিক জেলায়, ফিরবে শীতের আমেজ? আবহাওয়ার ইউটার্ন কোথায়?
কী এই ফুল মুন টি? পূর্ণিমার সময় চাঁদের আলোয় ছিঁড়ে আনা দুটি পাতা ও একটি কুড়ি থেকে তৈরি চা-কে ফুল মুন টি বলে। এই চা বাজারে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এই চায়ের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয় বলে দাবি করেন চাপ্রেমীরা। কিন্তু কেন পূর্নিমার রাতে চা গাছের দুটি পাতা ও একটি কুড়ি তোলার উদ্যোগ? কী বিশেষত্ব হয় এই চায়ের?
advertisement
চা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন সূর্য ডুবে যাওয়ার পর অন্যান্য গাছের মতো চা গাছ পাতায় তার খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। বিজ্ঞানের ভাষায় চা গাছের পাতায় খাদ্য তৈরির এই প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষ বলা হয়। আর এই সময় চা গাছের পাতায় নাইট্রোজেন ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর ভরা পূর্ণিমায় চা গাছের পাতায় অন্যান্য গুণাগুণের পরিমাণও বেড়ে যায়। ফলে এই সময় চা গাছ থেকে ছিঁড়ে আনা চা পাতা থেকে তৈরি চা স্বাদে, গন্ধে ও গুণে হয় অতুলনীয়। সেই কারণে ভরা পূর্ণিমায় চা পাতা তুলে সেই চা পাতা থেকে চা তৈরি করে আলিপুরদুয়ারের মাঝের ডাবরি চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
advertisement
এই সময়ে তোলা চা পাতা থেকে তৈরি চা বাজারে ‘ফুল মুন টি‘ নামে পরিচিত। স্বাদে, গন্ধে ও গুণে এই চায়ের নাকি কোনও তুলনা হয় না। যেমন কোন ফুলের গন্ধ দিনের থেকে রাতেই পাওয়া যায় বেশি। অর্থাৎ রাতে গাছের পাতা ও ফুলের গুণাগুণ বেশি থাকে। এই সময় তোলা চা পাতা ভোর পাঁচটা থেকে সকাল ৮ টার মধ্যে কাঁচা চা পাতা থেকে চা তৈরির প্রক্রিয়া শেষ করে প্যাকেটজাত করে ফেলা হবে। এই চায়ের বাজারে দারুণ কদর রয়েছে।
advertisement
এদিন এই ফুল মুন টি তৈরি উপলক্ষে মাঝের ডাবরি চা বাগানে ছিল একেবারে সাজ সাজ রব। ডাবরি টি লাউঞ্জে ধামসা মাদলের তালে নাচছিলেন আদিবাসী মহিলারা। সেই তালে মশাল জ্বালিয়ে কপালে সার্চ লাইট লাগিয়ে পূর্ণিমার আলোতে চা পাতা তুলেছেন চা শ্রমিকেরা। এবার মাঝের ডাবরি কর্তৃপক্ষের অন্য আরেকটি চা বাগান তোর্সা চা বাগান থেকেও শ্রমিকদের এখানে আনা হয়েছিল। এক অনাবিল সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়েছিল মাঝের ডাবরি চা বাগানে। যা দেখতে এদিন ভিড় করেন আশপাশের এলাকার মানুষ।
advertisement
কোচবিহার থেকে আগত পর্যটক অরিত্র বাগচি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা জীবনে ভুলব না। এই সৌন্দর্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাঝের ডাবরি টি লাউঞ্জে চা খেতে এসে ফুল মুন টিয়ের কথা শুনেছিলাম। এবার চাক্ষুষ করলাম। আমি কোচবিহার থেকে এই রাতে পূর্ণিমার আলোতে এই চা পাতা তোলা দেখতে এসেছি।“
রাজকুমার কর্মকার
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
March 14, 2025 11:29 AM IST