হোম /খবর /উত্তর ২৪ পরগণা /
মীন সংগ্রহ‌ই একমাত্র পথ, তার কাছে হার মেনেছে বাঘ-কুমিরের বিপদ

Life Of Sundarban: মীন ধরলে তবে চড়ে হাঁড়ি, তাই বাঘ-কুমির‌ও ওদের আটকাতে পারে না

X
title=

বেঁচে থাকতে হলে সুন্দরবনের মানুষকে মীন ধরতেই হবে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ মীন ধরা। কিন্তু দু'মুঠো গরম ভাত খাওয়ার জন্য এর বাইরে আর কোন‌ও জীবিকা যে নেই সেখানে! তাই বাঘ-কুমিরের বিপদ তুচ্ছ করেই প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে পড়েন সুন্দরবনের মানুষ

আরও পড়ুন...
  • Share this:

সুন্দরবন: সুন্দরবনের জনজীবনের কত যে বৈচিত্র! তা হয়ত কাছে থেকেও অনেকেরই অজানা থেকে গিয়েছে। শীতের ভোরে এখানে কুয়াশায় একহাত দূরের জিনিসও দেখা যায় না। সেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরি, ডাসা, কলাগাছি, কালিন্দি নদীতে দাপিয়ে বেড়ান বছর ৭০ এর অর্জুন মণ্ডল। শুধুমাত্র অর্জুন মণ্ডল একা নন, তাঁর মত আরও অনেকেই ভোরের আলো ফোটার আগে সুন্দরবনের এই নদীগুলি প্রায় চষে ফেলেন পেটের তাগিদে। কারণ নদী থেকে মিন বা মাছের চারা ধরতে পারলে তবেই বাড়িতে উনুনে হাঁড়ি চড়বে।

আজ‌ও সুন্দরবনের মানুষ পেটের টানে বিপদ মাথায় নিয়েই নদীতে নদীতে, খাঁড়িতে খাঁড়িতে ঘুরে মীন ধরার কাজ করেন। 'জলে কুমির ডাঙায় বাঘ', অন্যত্র এটি বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদ বাক্য হলেও সুন্দরবনের মানুষের কাছে এটাই চিরসত্য। সত্যিই তাঁরা জলে কুমির এবং ডাঙায় বাঘের বিপদ মাথায় নিয়েই মীন ধরতে বের হন। আসলে এছাড়া রোজগারের আর কোন‌ও উপায়ে যে ওখানে নেই!

সুন্দরবনের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী। যেন কোন‌ও জাদুকর সূক্ষ্ম চাল চেলে একের পর এক জাল বিছিয়েছেন! এই সুন্দরবনেই আছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ অরণ্য। আর সেখানে রাজত্ব করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এদিকে নদী, খাল, খাঁড়িগুলিতে আছে কুমির, কামোট সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বিপদ। স্বামীরা যখন জঙ্গলে বা নদীতে মাছ ধরতে যান বা কাঠ সংগ্রহ হয়ে যান তখন সংসার সামলে বাড়ির বধুরা রায়মঙ্গলে যান মীন সংগ্রহে। শুধু রায়মঙ্গল নয়, সন্দেশখালির কলাগাছি, বেতনি, ডাসা সহ একাধিক নদীতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ মীন ধরেন।

আরও পড়ুন: তিন দিন ধরে গাছে আটকে রসগোল্লা! শেষে সহায় হল দমকল

জোয়ার থেকে যখন নদীতে ভাটা আসে, তখন সুন্দরবনবাসী দল বেঁধে মীন ধরতে নেমে পড়েন । হাতে থাকে বাঁশের চটার ফ্রেমে ঘন মশারির নেট লাগানো টানা জাল আর একটা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি। নদীতে কুমির বা কামোটের ভয় থাকে। কিন্তু সন্তানদের মুখে দু'মুঠো গরম ভাত তুলে দিতে এছাড়া উপায়ই বা কী! আর তাই নদীর ভাটা শুরু থেকে জোয়ার আসা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা টানা জলে থেকে মীন সংগ্রহ করেন তাঁরা৷ জোয়ার এলে উঠে পড়েন৷আবার ভাটা শুরু হলে নদীতে নামা৷ মীন সংগ্রহের পর পাড়ে উঠে বাছাই। নদী থেকে মীন সংগ্রহকারী তপতী লস্কর বলেন, "এই করে খুব ভালোভাবে যে সংসার চলে তা নয়। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মীন না ধরলে খেতেই পাব না আমরা।"

সুন্দরবন এবং তার জলজ প্রাণী সম্পদকে রক্ষা করার জন্য সরকারিভাবে এখানকার নদীতে মীন ধরা নিষিদ্ধ৷ কিন্তু পেটের জ্বালায় এই নির্দেশ মানতে পারেন না সুন্দরবনবাসী৷ এদিকে এই মীন থেকে তৈরি হয় চিংড়ি, যা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর মুনাফা করেন ব্যবসায়ীরা। শুধু ব্রাত্য থেকে যায় সুন্দরবনের এই মানুষগুলো।

জুলফিকার মোল্লা

Published by:Kaustav Bhowmick
First published: