হোম /খবর /দেশ /
মানিক নয়? তবে মুখ্যমন্ত্রীর 'মুখ' কে? ত্রিপুরায় এবার বিকল্প 'মমতা'র খোঁজে BJP!

Tripura Assembly Election || 2023: মানিকে ভরসা নেই? তাহলে কে হবে মুখ্যমন্ত্রীর 'মুখ'? এবার কি ত্রিপুরার 'মমতা' খুঁজছে বিজেপি?

এরপরেই তড়িঘড়ি বিপ্লবকে দিল্লিতে তলব। অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক। তারপর রাজ্যে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা। ২০২২ সালের মে মাস। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদল। যে বিপ্লবের হাত ধরে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে এসেছিলেন, সেই বিপ্লব দেবকেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলেন মানিক সাহা। তারপর থেকে ত্রিপুরা বিজেপির হাল তাঁরই হাতে।

আরও পড়ুন...
  • Share this:

ত্রিপুরা: রাত পোহালেই নির্বাচন। অথচ, এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে কারও নাম ঘোষণা করল না বিজেপি। শিয়রে নির্বাচন নিয়ে সেই ঘোষণার আর কোনও সম্ভাবনা আছে বলেও মনে হয় না।

বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল এবং তারপরে তাঁকেই পরবর্তী নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে ঘোষণা-- রীতিমতো 'টেস্টেড অ্যান্ড ট্রায়েড' স্ট্রাটেজি বিজেপি-র। উত্তরাখণ্ডে পুস্কর সিং ধামির ক্ষেত্রেই হোক, কী গুজরাতে ভূপেন্দ্র সিং পটেলের ক্ষেত্রে, বিজেপি-র এই কৌশলে লোকসানের চেয়ে লাভই হয়েছে বেশি। কিন্তু, ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তেমনটা হল না। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে সরাসরি সেই কৌশল প্রয়োগ করল না বিজেপি। কিন্তু কেন?

আরও পড়ুন: দাঁতের ডাক্তার, তুখোড় ব্যাডমিন্টনে! ত্রিপুরায় বিজেপির মূল ভরসা মানিকই

বামেদের ২৫ বছরের শাসনে শেষ ঘোষণা করে ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করে বিজেপি-র বিপ্লব দেব। কিন্তু, যত দিন গড়ায়, এই বিপ্লব-ই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় বিজেপি-র। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বগ্রহণের প্রায় শুরুর দিক থেকেই একের পর এক আলটপকা মন্তব্য জাতীয় রাজনীতিতেও বিপ্লবকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে শুরু করে। এ পর্যন্ত তা-ও ঠিক ছিল। কিন্তু, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই কাল হল বিপ্লবের। বেকারত্ব সমস্যা দূরীকরণ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা--একাধিক বিষয় নিয়ে ঘরে বাইরে সমালোচিত হতে থাকেন বিপ্লব। বিরোধীরাও তাঁর ইস্তফার দাবি তুলে কোমর বেঁধে ময়দানে নামেন। বিজেপি বুঝতে পারে,মানুষের মধ্যে বিপ্লবকে নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এখনই যদি কিছু না করা হয় তাহলে, তেইশের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে সেই ক্ষোভের আঁচ পড়বে।

এরপরেই তড়িঘড়ি বিপ্লবকে দিল্লিতে তলব। অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক। তারপর রাজ্যে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা। ২০২২ সালের মে মাস। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদল। যে বিপ্লবের হাত ধরে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে এসেছিলেন, সেই বিপ্লব দেবকেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলেন মানিক সাহা। তারপর থেকে ত্রিপুরা বিজেপির হাল তাঁরই হাতে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এমনকি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও। নির্বাচনী প্রচারে এসে এঁদের প্রত্যেকের মুখেই উঠে এসেছে মানিক সাহার নাম। রাজনাথ তো রীতিমতো প্রশংসার ডালি সাজিয়ে বসেছিলেন মানিক সাহার জন্য। কিন্তু, ওখানেই শেষ। এঁদের কেউ-ই মানিক সাহাকে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেননি। উল্টে, জল্পনা তৈরি হয়েছে অন্য এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে। তাহলে কি, মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে সব রাস্তা খুলে রাখতে চাইছে বিজেপি?

আরও পড়ুন: অভিজ্ঞতা থেকে এখনও শিখছেন, প্রার্থী না হয়েও ত্রিপুরার ভোটের ময়দানে আজও তিনিই তারকা

এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রীকে ভোটে লড়াচ্ছে পদ্মশিবির। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। একে মহিলা রাজনীতিক। তার উপর জাতিতে 'নাথ'। জনজাতির প্রতিনিধি হয়েও ঝরঝরে বাংলা বলেন। রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতাও। ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে অনায়াসেই সাদামাটা তেহারার এই প্রতিমাকে বাঙালি মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে তুলে ধরতে পারে বিজেপি। আর এমন কেউ মুখ্যমন্ত্রী হলে জাতীয় রাজনীতিতেও বিজেপি তার ফায়দা তুলতে পারবে। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই হতে পারে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের 'বিকল্প' মুখ তৈরির বিজেপি-র মোক্ষম চাল।

কিন্তু, এবারের নির্বাচনে বিজেপি-র কাছে ত্রিপুরা কিন্তু কড়া ঠাঁই। শাসকদলের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছে বিরোধীরা। একদিকে বাম-কংগ্রেস জোট, অন্যদিকে, তিপ্রামোথা। এমনকি, বিজেপি-র অন্দরের খবর, আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও বাম-কংগ্রেস জোটের পাশেই থাকছে ত্রিপুরারাজের এই রাজনৈতিক দল। এই সমীকরণই বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপির ভাগ্য বদলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তবে এটাও ঠিক,এই বিরোধী জোট কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে বাম-কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীদের উপরে। পরস্পরের বিরুদ্ধে দীর্ঘ হিংসা-প্রতিহিংসার ইতিহাস ভুলে তাঁরা কতটা বিজেপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে ময়দানে নামতে পারেন, তা বোঝা যাবে নির্বাচনের ফলাফলেই।

তবে চব্বিশের নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে যে ত্রিপুরার জয় বিজেপি-র কাছে ভীষণ জরুরি, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপি-র বহু বাঘা নেতা-ই। তাদের প্রধান তুরুপের তাস, ত্রিপুরার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। একাধিক সড়কপথ, ঝাঁ চকচকে বিমানবন্দর, সুগম্য যোগাযোগ ব্যবস্থা। যে রাজ্য তাঁর ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দীর্ঘদিন ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে খানিক বিচ্ছিন্ন ভাবেই থেকেছে, তার কাছে এটা কিন্তু অনেক।

Published by:Satabdi Adhikary
First published:

Tags: Manik Saha, Tripura Assembly Election 2023