ছাপড়া: ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, ১০০-র গন্ডি টপকাবে না বিজেপি৷ হাতে কলমে নিজের সেই দাবি মিলিয়ে দিয়েও ভোট কুশলীর কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর৷ আপাতত বিহারের গ্রামে গ্রামে ঘুরে নতুন বিকল্প রাজনৈতিক মডেল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যস্ত তিনি৷ তারই ফাঁকে নিউজ ১৮-এর মুখোমুখি হয়ে ২০২৪-এর নির্বাচন, বিরোধীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের মতামত জানালেন ভোট গুরু৷ মুখ খুললেন ২০২১ পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাঁর সম্পর্ক নিয়েও৷ এমন কি, ২০২৪-এর লোকসভা এবং ২০২৬- এ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন প্রশান্ত কিশোর৷
২০২৪-এ প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা কী হবে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখন আপনার সম্পর্ক কেমন?আমি ২০২১ সালের ২ মে আইপ্যাক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি৷ কোন দলের সঙ্গে তারা কাজ করবে, আইপ্যাক ঠিক করে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখন আমার ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক রয়েছে৷
বাংলার বাইরে নিজেদের ছড়াতে পারবে তৃণমূল?২০২১ সালে তৃণমূল ভাল ফল করেছে৷ মেঘালয় সহ বেশ কিছু জায়গায় চেষ্টাও করেছে৷ মনে রাখতে হবে, আমরা ইতিহাস বইতে যা পড়ি, তা একদিনে হয়নি৷
আরও পড়ুন: কোথায় গেলেন প্রশান্ত কিশোর? বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁবুতে দিন কাটছে ভোট গুরুর
ভারতের বিরোধী শক্তিকে নিয়ে আপনার কী মত?
'ভারতে বিরোধীরা দুর্বল নয়৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত নির্বাচনে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন৷ ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও বলে দেবে দেশের অধিকাংশ মানুষ বিজেপি-র বিপক্ষে ভোট দিয়েছে৷ দেশের দশ জন মানুষের মধ্যে চারজনের সমর্থন ওরা পেয়েছে৷ বিরোধীদের কাজ হল বাকি ৬ জনকে এক- জায়গায় নিয়ে আসা৷ যেটা তারা করতে পারছে না৷ এটা হচ্ছে না কারণ এই ষাট শতাংশ ভোট ব্যাঙ্ক রাজনৈতিক দলের ভিত্তিতে নয়, মতাদর্শের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে রয়েছে৷ কেউ গান্ধিবাদী, কেউ আম্বেদকরবাদী, কেউ আবার কমিউনিস্ট৷ কেউ এদেরকে একত্রিত করতে পারলে তবেই জোট হতে পারে৷ কিন্তু আদর্শগত পার্থক্যের জন্যই তা সম্ভব হচ্ছে৷ চা খেতে খেতে মিটিং করলেই বাস্তবটা বদলে যায় না৷ ১৯টা দল একজায়গায় বসে বৈঠক করছে খবর হওয়া মানেই কি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বামপন্থীরা একসঙ্গে হয়ে গেল? নেতারা হাত মেলালেও কর্মীরা কি হাত মেলাবেন?'
প্রশান্ত কিশোরের মতে, মতাদর্শগত মিল না হলে কোনওদিন বিরোধী জোট সফল হবে না৷ তা সে যতই নেতারা বৈঠক করুন না কেন৷ উদাহরণ হিসেবে বিহারের মহাজোটের উদাহরণ দিচ্ছেন ভোট গুরু৷ কারণ হিসেবে বলছেন, বিহারে সাত দফা ইস্যুতে একজোট হয়েছিল কংগ্রেস, আরজেডি, জেডিইউ৷ আবার উত্তর প্রদেশে একই ধরনের জোট ব্যর্থ হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট বাঁধলেও তৃণমূল জয়ী হয়েছে৷
প্রশান্ত কিশোর অবশ্য খোলাখুলিই বলছেন, কংগ্রেসই এখনও বিজেপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ৷ কারণ দল হিসেবে বিজেপি-র পরে তারাই সর্বোচ্চ ১১ কোটি ভোট পেয়েছে দেশে৷ এখনও বেশ কিছু রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায়৷ দেশের প্রাচীনতম দলও তারা৷
প্রশান্ত দাবি করছেন, এখন তিনি যে পদ্ধতিতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছেন৷ কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তনের জন্য সেই একই পরামর্শ দিয়েছিলেন৷ কংগ্রেস নেতারা তাঁর সঙ্গে সহমত হলেও কার্য পদ্ধতি নিয়ে দু পক্ষ একমত হতে পারেনি৷ কংগ্রেসের প্রস্তাব তাই মেনে নিতে পারেননি তিনি৷
প্রশান্ত কিশোর বরং বলছেন, রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে মানুষ হইচই করছে৷ ভাবছে এর উপরে ভর করেই কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবে৷ ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ও একই দাবি করা হয়েছিল৷ তার পরেও গুজরাতে বিশ্রী হার হয়েছে কংগ্রেসের৷ একটি ঘটনায় একটা দল ঘুরে দাঁডাতে পারে না৷ ১৯৮৯ সাল থেকে কংগ্রেসের অধঃপতন ঘটছে৷ ফলে দলটার মৌলিক পরিবর্তন দরকার৷
আরও পড়ুন: দূরপাল্লার ট্রেনে প্রবীণদের আপার বার্থ কেন? প্রশ্ন তুললেন সাংসদ দেব! উত্তরে যা জানালেন রেলমন্ত্রী
২০২৪-এর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে কে এগিয়ে?আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অবশ্যই নরেন্দ্র মোদি৷
রাহুল গান্ধির ভবিষ্যৎ কী?রাহুল গান্ধি যা করছেন, একজন কংগ্রেস সমর্থকের অবশ্য ভাল লাগবে৷ নিরপেক্ষ ভাবে দেখলে, তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারেনি, ফলে তিনি ভাল কিছু করছেন বলা যায় না৷
তৃণমূল সম্পর্কে কী বলবেন?তারা সরকারে রয়েছে৷ বাংলায় ভাল কাজ করলে, রাজ্যের মানুষও তাদের সমর্থন করতে থাকবে৷ কিন্তু ২০২৪ তৃণমূলকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে, ২০২৬-এও তাই হবে৷
কর্ণাটকে কী হবে?আমি জানি না৷ বিজেপি জিতলে ২০২৪-এর আগে তাদের শক্তি অনেকটাই বাড়বে৷ বিরোধীরা জিতলে তাদেরও উপকার হবে৷
আপনি কি ভবিষ্যতে ভোটে লড়বেন?বলতে পারব না৷ আগের আমার পদযাত্রা শেষ করতে হবে৷ সেটা হলে আমি লড়ব৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Mamata Banerjee, Prashant Kishor