নরেন্দ্র মোদি কি আদৌ সংস্কারপন্থী? ২০২০ সালের মে মাসে বিতর্কের অবসান

Last Updated:

তাঁর বিরুদ্ধে বাজারচালতি ছকে অভিযোগের আঙুল তোলা মুশকিল। এই অবস্থাতেই প্রশ্ন আসছে, তাহলে তাঁর ভূমিকাটা ঠিক কেমন? তিনি কি সংস্কারপন্থী না নন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কি একজন সংস্কারক বলা যায়? ভারতীয় সংস্কারপন্থীদের তালিকায় কত নম্বরে ঠাঁই হবে মোদির। বাতাসে প্রশ্নটা ভাসছে সঙ্গত কারণেই। ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে মোদি জামানার। এই সময়কালে একবারের জন্যেও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়নি তাঁকে। স্বজনপোষণের দায়ে কালিমালিপ্ত হতে হয়নি। বামেরা অভিযোগ তুলেছিল দরিদ্র মানুষের প্রতি এই সরকার বিমুখ। তাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে ২০১৯ নির্বাচনে। এক কথায় বললে, তাঁর বিরুদ্ধে বাজারচালতি ছকে অভিযোগের আঙুল তোলা মুশকিল। এই অবস্থাতেই প্রশ্ন আসছে, তাহলে তাঁর ভূমিকাটা ঠিক কেমন? তিনি কি সংস্কারপন্থী না নন।
মোদি জামানার প্রথম দফা মূল্যায়ণ করলে চোখ কান বুজে বলে দেওয়া যায়, তিনি সংস্কারক নন এ কথা ভ্রান্ত। এই প্রসঙ্গে দু'টি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা যাক। প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে। সেখানেই প্রথম লেখা হয়, "সাড়ে চার বছরের মেয়াদে সবচেয়ে বড় সংস্কারের পথে পা বাড়াল ইউপিএ। বিদেশী বিনিয়োগকে ২৬ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশ করার জন্য ইন্সুরেন্স ল বিল পেশ করা হল রাজ্যসভায়।" সোজা চলে আসা যাক ২০২১ সালের অগস্ট মাসের আরেকটি প্রতিবেদনে। ইকনোমিকস টাইমস ওই প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছিল, অর্থনীতিবিদরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছে ডিজেলের মূল্যে হস্তক্ষেপ করার প্রকিয়া কমিয়ে আনুক (বিনিয়ন্ত্রণ) সরকার।
advertisement
উল্লেখ্য এই দু'টি কাজের একটিও করে উঠতে পারেনি মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বাধীন সরকার।  ক্ষমতায় এসেই এই কাজদু'টিতে শিলমোহর দেন নরেন্দ্র মোদি। শুধু তাইই নয়. জিএসটি, আইবিসি, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন বিষয়ক নিলমা, ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রানসফার শুরু হয় মোদি জমানার হাত ধরেই।
advertisement
মোদি বিরোধীরা বলে গিয়েছেন, কোনও বড় সংস্কারের চিহ্ন নেই। কিন্তু বড় সংস্কার ঠিক কী, তার সংজ্ঞা বিরোধীরা কখনও নির্ধারণ করেননি। এই প্রশ্নটার অবসান হয়তো হল এই ২০২০ অতিমারীর দিনগুলিতে। যখন নরেন্দ্র মোদি আত্মনির্ভর ভারতের ডাক দিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের ভাষণে কয়েকটি বড় সংস্কারের ডাক দেন এবার। যেমন, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ, শ্রমআইন সংশোধন, চারটি লেবার কোড তৈরি করা, সবচেয়ে কম কর্পোরেট ট্যাক্স নির্ধারণ করা।
advertisement
আরেক দফা বড় সংস্কারের ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী মে মাসে। এবার স্বাধীনতা পেল দেশের কৃষকসমাজ। এগ্রিকালচার প্রোডিউস মার্কেট কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে এখানে ঐতিহাসিক বলা অত্যুক্তি হব না। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনর ফস্কাগেড়ো থেকে মুক্তি পেয়ে এবার কৃষকরা ইচ্ছে মতো ফসল ফলাতে পারবেন, যে দামে খুশি, যেখানে খুশি বিক্রি করতে পারবেন। কৃষিক্ষেত্রেও এবার শিল্পের মতো বিনিয়োগ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জোয়ার আসতে চলেছে সংস্কারের আগল খুলে যাওয়ায়।
advertisement
আসব কয়লাখনির কথাতে। খনিগুলিকে আর কুক্ষিগত করে রাখা যাবে না। সংস্কার হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের। সংজ্ঞাই বদলে গিয়েছে এই উদ্যোগের। প্রতিরক্ষা উৎপাদনে স্বয়ংক্রিয় পথে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এফডিআই-এর ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে হয়েছে ৭৪ শতাংশ। এবার থেকে বেসরকারি সংস্থাও মহাকাশ অভিযানে অংশ নিতে পারবে। ব্যবহার করতে পারবে ইসরো পরিকাঠামো।
advertisement
ফলে 'সংস্কার কই' বলে যে চিলচিৎকার, তা বন্ধ হয়েছে সার্থকভাবে। এখন উঠে আসছে অন্য একটা কথা। মোদি বিরোধীরা বলেন, সিদ্ধান্তগুলি সংস্কারমূলক ঠিকই কিন্তু তা প্রণয়ন হবে তো?
কিন্তু এই কথাটিও খুব ধারালো নয়। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীত্বে থাকার সময় থেকেই মোদির ইউএসপি- 'প্রণয়ন'। জনধন যোজনা হোক বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, আয়ুস্মান ভারত বা সব ঘরে বিদ্যুৎ আনার প্রকল্প, মোদি আরও এক দফা প্রধানমন্ত্রীত্ব পেয়েছেন সংস্কারের প্রস্তাবকে রূপায়ণ করেই।
advertisement
আরও দুটি ক্ষেত্রের উল্লেখ জরুরি যা রূপ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নিজের দূরদৃষ্টির কারণে। তার একটি হল তথ্যভিত্তিক অনুশাসন। ২০১৩ সালে ভোটপ্রচারে প্রধানমন্ত্রীর হাতিয়ারই ছিল চুলচেরা তথ্যের বিশ্লেষণণ। ক্ষমতায় এসেও সেই বিষয়টিকে আরও জোরালো করেছেন মোদি। যে কেউ তথ্য যাচাই করে অন্তর্জাল থেকে দেখে নিতে পারেন সরকারের কাজকর্ম। মোদি ক্ষমতায় আসার আগে মাইক্রো ইকোনমিকে দূরে ঠেলে রাখা হত আমাদের দেশে। এই নীতি বদলে মাইক্রো ইকনোমিতেই জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে আজ ভারত শূন্য থেকে শুরু করে চার লক্ষের বেশি পিপিই কিটের জোগানদার।
advertisement
২০১৯ সালের মে মাসে মসনদে বসে মোদি প্রমাণ করলেন নীতি কার্যকর করা তাঁর বিশেষ গুণ, ২০২০ সালের মে মাসে তিনি সংস্কারক কিনা সেই প্রশ্নেও দাঁড়ি পড়ল। আপাতত বিরোধীদের হাতে অস্ত্র দু'টো হয় শূন্যগর্ভ বিরোধিতায় গা ভাসানো অথবা করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে ভারতকে আরও কার্যকরী শক্তি হিসেবে তুলে আনার পথ দেখানো।
লেখক Bluekraft Digital Foundation-এর সিইও। মতামত তাঁর ব্যক্তিগত।.
Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
নরেন্দ্র মোদি কি আদৌ সংস্কারপন্থী? ২০২০ সালের মে মাসে বিতর্কের অবসান
Next Article
advertisement
MGNREGA: মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! কোটি কোটি কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থে আঘাত, কেন্দ্রের নয়া ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
  • মনরেগা প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব সোনিয়া গান্ধি

  • কংগ্রেসে নেত্রীর দাবি, মনরেগা প্রকল্পকে কার্যত ধ্বংস করে দিল বিজেপি

  • প্রকল্পকে বদলের আইনকে ‘কালো আইন (ব্ল্যাক ল)’ বলে উল্লেখ্য সোনিয়ার৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement