Healthy Diet Chart: ব্যস্ত জীবনে নাভিশ্বাস? সুস্থ থাকতে নিত্য ডায়েটে যোগ করতে হবে এই সব খাবার, বলছেন পুষ্টিবিদেরা!
- Published by:Rachana Majumder
Last Updated:
Healthy Diet Chart: আসলে সঠিক ডায়েটই হল সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। তাই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এবং বিশেষ করে পুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে ডায়েটে সঠিক খাবার যোগ করতে হবে।
সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় দৌড়। খাবার বানিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে সব দিক সামলে কোনও রকমে দুটো নাকে-মুখে গুঁজে সময় মতো অফিসে হাজিরা দিতে হয়। আর সব দিক সামলাতে গেলে কখনও ব্রেকফাস্ট বাদ তো আবার কাজের চাপে কখনও লাঞ্চেই কোপ পড়ে যায়। মাঝেমধ্যে খিদে পেলে তো আবার রক্ষে নেই। চলতে থাকে মুখরোচক ভাজা-ভুজি, চিপস, বিস্কুট কিংবা কোল্ডড্রিঙ্কস। এই বিষয়গুলোর সঙ্গে আসলে প্রত্যেকেই নিজেদের মেলাতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, আজকাল মানুষের মধ্যে এই ধরনের অভ্যেস ক্রমশই বেড়ে চলেছে, আর তার জন্য মূলত দায়ী ব্যস্ত জীবন।
আসলে পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে আমরা যেমন সমতা বজায় রেখে চলি, ঠিক তেমনই খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মধ্যেও ভারসাম্য রাখা সমান জরুরি হয়ে উঠেছে। এছাড়াও করোনা পরবর্তী কালে মানুষ স্বাস্থ্যকে কিছুটা হলেও অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে। সুস্থ থাকাই যে জীবনে সবচেয়ে বেশি জরুরি, তা মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আসলে ব্যস্ত কর্মজীবনে কর্মঠ, দক্ষ এবং ফলপ্রসূ হওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর লাইফস্টাইল মেনে চলাও যারপরনাই জরুরি। তাছাড়া ক্রমশ যে হারে জীবনযাত্রাগত রোগ বা লাইফস্টাইলজনিত রোগ (Lifestyle disease) মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে, তাতে ফিট থাকাটা একান্তই আবশ্যক। তবে সুস্থ থাকার মানে কিন্তু শুধুই রোগা হওয়া বা ওজন ঝরানো নয়। বরং নীরোগ এবং ফিট থাকার বিষয়টাকেই সুস্থতার মূল সংজ্ঞা বলে মনে করা হয়। যার জন্য নিয়মিত এক্সারসাইজ, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ না-নেওয়া জরুরিই, সেই সঙ্গে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকটাই হল খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট (Diet)। আসলে সঠিক ডায়েটই হল সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। তাই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এবং বিশেষ করে পুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে ডায়েটে সঠিক খাবার যোগ করতে হবে। তাই যতই কর্মব্যস্ততা থাকুক না-কেন, খাওয়াদাওয়ায় অবহেলা করলে চলবে না। কারণ সময় মেনে সঠিক খাবার খেলেই শরীর ভালো থাকবে। তবে পুষ্টির (Nutrition) বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকলেই ডায়েট ঠিকমতো সাজানো যায়। আর ডায়েট ঠিক মতো সাজানো থাকলে স্বাস্থ্যকর খাবার রেখে রান্নাঘর অথবা ফ্রিজ সাজাতেও সুবিধাই হবে। ফলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যেসও বাড়বে এবং শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টিরও জোগান মিলবে। তাই কর্ম-ব্যস্ততার মধ্যেও কীভাবে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারে জোর দেওয়া যায়, সেই বিষয়েই আজ আলোচনা করে নেওয়া যাক।
advertisement
ফল ও সবজি:
advertisement
ফল ও সবজির স্বাস্থ্যকর গুণাবলীর বিষয়ে আমারা প্রায় সকলেই জানি। পুষ্টিবিদদের (Nutritionists) মতে, বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর থাকে। সেক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় অন্তত পাঁচ বার ফল এবং সবজি রাখতে হবে। অর্থাৎ এই পাঁচ বারের মধ্যে প্রতি বার আধ কাপ রান্না করা অথবা কাঁচা সবজি কিংবা ফল বা ১ কাপ সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে তরকারির আকারে কিংবা স্যালাডের মাধ্যমেও সবজি খাওয়া যায়। আবার ভাজাভুজির মতো অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের পরিবর্তে ফল খাওয়া যেতে পারে। কোনও কোনও পুষ্টিবিদ আবার খাদ্যতালিকায় ২-৪ টি ফল রাখারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কারণ এতে ফ্ল্যাভনয়েড-সহ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা হজমের পাশাপাশি ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী।
advertisement
মিলেট:
ওজন কমানোর জন্য ডায়েট থেকে অনেকেই ভাত অথবা রুটিকে বিদায় জানিয়ে দেন। কিন্তু দীর্ঘকালীন প্রেক্ষাপটে এই ধরনের অভ্যেস শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আজকাল নিয়মিত চাল ও গম খাওয়ার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব খাওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, এগুলি পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। না-হলে ওজন তো বাড়বেই, তার সঙ্গে দেখা দিতে পারে একাধিক শারীরিক জটিলতাও। অন্য দিকে, রাগি, জোয়ার এবং বাজরার মতো খাদ্যোপাদানগুলিও ডায়েটে যোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ এগুলি স্বাস্থ্যকর তো বটেই, সেই সঙ্গে এই ধরনের হোল গ্রেন গ্লুটেন মুক্ত এবং প্রোটিন, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
advertisement
ডাল:
আমরা সকলেই জানি যে, প্রোটিন আমাদের শরীরের সামগ্রিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ আর ভারতীয়দের রান্নাঘরের উপকরণের তালিকায় ডাল থাকবে না, এমনটা আবার হয় না কি! কারণ নিরামিষ প্রোটিনের ক্ষেত্রে ডালের থেকে ভালো আর কোনও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার হতে পারে না। তাই পুষ্টিবিদদের মতে, আমাদের দৈনন্দিন প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদার বেশ অনেকটাই ডাল, ডালজাতীয় খাবার, মটরশুঁটি বা শুঁটি জাতীয় খাবারের থেকে পাওয়া যায়৷ তাই ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের ডাল রাখতে ভুললে চলবে না।
advertisement
ময়দার রুটির পরিবর্তে সাদা ভাত:
ময়দা প্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়। তাই ময়দার তৈরি খাবারের পরিবর্তে পুষ্টিবিদেরা ভাত খাওয়ারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ ভাতের মধ্যে গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে এবং তা সহজেই হজম করা হয়। আসলে প্রক্রিয়াজাত গমের গ্লাইসেমিক সূচক অনেকটাই বেশি থাকে এবং সহজে হজম হতে চায় না। তাছাড়া এই খাদ্যোপাদান ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও তৈরি করতে পারে। তবে শুধু রুটি কিংবা লুচিতেই নয়, বাজারচলতি বেশির ভাগ খাবারেই ময়দা মেশানো থাকে। তাই যে কোনও প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে উপকরণের তালিকা ভালো ভাবে পড়ে নেওয়া উচিত।
advertisement
বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার:
বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ জাতীয় খাবার এনার্জির দারুণ উৎস। এতে প্রচুর স্বাস্থ্যকর ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে, যা আমাদের দেহের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ৪-৫টি ভেজানো আমন্ড ও ২টি আখরোট খাওয়া উচিত। আমন্ড শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এটা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও দারুণ সহায়তা করে। একই ভাবে বিভিন্ন ধরনের বীজে প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভালো ফ্যাট থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়।
advertisement
চর্বিহীন প্রোটিন বা লিন প্রোটিন:
প্রোটিন স্বাস্থ্যকর ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুষ্টিবিজ্ঞানে বলা হয়, রেড মিটের পরিবর্তে চর্বিহীন প্রোটিনের উৎসই বেছে নেওয়া উচিত। আর চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস হিসেবে অন্যতম হল মুরগির মাংস এবং মাছ। তাই দেহের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে রেড মিটের পরিবর্তে চিকেন অথবা মাছই ডায়েটে বেশি করে রাখতে হবে। সারা দিনের ২-৩ বার খাবারের মধ্যে ৪ টুকরো রান্না করা মাংস অথবা মাছ, ১টি ডিম, ১/৪ কাপ রান্না করা বিন অথবা ১টি বাদাম অথবা বীজ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। যদিও ফ্রায়েড চিকেন অথবা মাছ ভাজা খেলে কিন্তু লাভ হবে না। আর ভাজা খাবারে স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে বলে এগুলি কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। তাই প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য স্বল্প মশলা দিয়ে রান্না করা চর্বিহীন প্রোটিনের উৎসগুলিই আদর্শ।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস:
দেখা গিয়েছে যে, ওজন বাড়ে খারাপ স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যেসের কারণে। তাই হাতের কাছে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস রেখে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে কুমড়ো অথবা সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম, ফল, কম মিষ্টিযুক্ত প্রোটিন বার, গ্রানোলা, স্প্রাউটেড মুগ, ছোলা ভাজা খাওয়া যেতে পারে। সঠিক স্ন্যাকস ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তাই বাইরে বেরোলেও ব্যাগে এই ধরনের স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস রেখে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে খিদে পেলেও আর বাজারচলতি অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেতে হবে না।
জল প্রয়োজনীয়:
সুস্থ থাকার জন্য সারা দিন হাইড্রেটেড থাকাটাও খুবই জরুরি। আসলে বইয়ের পাতায় 'জলই জীবন' পড়ে থাকলেও ডায়েটের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই জল খাওয়ার বিষয়েই সবচেয়ে বেশি অবহেলা দেখা হয়। আমরা সকলেই জানি যে, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেলে শরীর বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত থাকে, শরীরের তাপমাত্রা এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজের জোগান দেয় এবং হজমশক্তিও বাড়াতে সহায়তা করে। তাছাড়া ত্বকের বয়স ধরে রাখতেও পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। তবে রাস্তায় বেরিয়ে তৃষ্ণার্ত হলে অ্যাডেড সুগারে পরিপূর্ণ পানীয় সোডা, জ্যুস, অ্যালকোহলিক পানীয় এবং অন্যান্য পানীয়ের বদলে পানীয় জলই খাওয়া উচিত।
সাপ্লিমেন্ট কখন প্রয়োজন:
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর ও ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চললে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয় না। ব্যস্ততার ফাঁকে অনেকে শুধু ডায়েট থেকে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি পান না। আসলে আমরা প্রত্যেকেই স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া করতে চাইলেও, সব সময় শরীরে সঠিক ব্যালেন্সড পুষ্টি পৌঁছয় না। তাই নিজের ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলতে না-পারলে দৈনিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ডায়েটে হাই-প্রোটিন এবং মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্টও রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হয়েছে কি না, তা জানতে পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ মেনে তবেই সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
Location :
First Published :
May 28, 2022 12:13 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Healthy Diet Chart: ব্যস্ত জীবনে নাভিশ্বাস? সুস্থ থাকতে নিত্য ডায়েটে যোগ করতে হবে এই সব খাবার, বলছেন পুষ্টিবিদেরা!