Liver Problem: মদ্যপানের অভ্যেস নেই মানেই লিভার পুরোপুরি সুস্থ! এই ধারণা কি আদৌ ঠিক? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক?

Last Updated:

প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver) বা স্টিয়াটোসিস (Steatosis) নামে পরিচিত। সাধারণত মোটা বা স্থূলকায় মানুষদেরই এই সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে লিভারের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কলকাতা: অনেকেরই ধারণা যে, মদ্যপান (Alcohol) করলে লিভার (Liver) খারাপ হয়ে যায়। আসলে এই তথ্যটা জেনেই আমরা বড় হয়েছি। এটা একেবারেই ঠিক ধারণা নয়।আসলে যাঁরা স্বল্প পরিমাণে মদ্যপান করেন কিংবা একেবারেই অ্যালকোহল ছুঁয়েও দেখেননি, তাঁদেরও লিভারেও সমস্যা দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ লিভারের সমস্যার পিছনে শুধু অ্যালকোহলই দায়ী নয় (Liver Problem)।
অনেক সময় লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট বা মেদ জমা হওয়ার কারণে হতে পারে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজেজ (Non- Alcoholic Fatty Liver Diseases) বা এনএএফএলডি (NAFLD) এবং নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস (Non-Alcoholic Steatohepatitis) বা এনএএসএইচ (NASH)। এই ধরনের লিভারের রোগের ক্ষেত্রে কিন্তু অ্যালকোহলের সে-রকম কোনও ভূমিকাই থাকে না। বর্তমানে সারা বিশ্বে তথা ভারতে এই নন-অ্যালকোহলিক লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এমনটাই জানাচ্ছেন সিকে বিড়লা হসপিটালস-সিএমআরআই কলকাতার (CK Birla Hospitals- CMRI, Kolkata) গ্যাস্ট্রো সায়েন্স বিভাগের (Department of Gastro Science) অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Dr. Shaswata Chatterjee)।
advertisement
advertisement
তাঁর কথায়, প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver) বা স্টিয়াটোসিস (Steatosis) নামে পরিচিত। সাধারণত মোটা বা স্থূলকায় মানুষদেরই এই সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে লিভারের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সাধারণ ফ্যাটি লিভার ধীরে ধীরে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। আসলে লিভারে ক্ষতর কারণে প্রদাহ দেখা যায়। আর ক্রমেই তা সিরোসিসের (Cirrhosis) আকার ধারণ করে। এই সমস্যার ক্ষেত্রে লিভার টিস্যুর ক্ষত দেখা যায়। তার ফলে লিভার পুরোপুরি বিকল হয়ে যেতে পারে। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের মতো কো-মর্বিডিটির রোগীদেরই সব থেকে বেশি লিভারের রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লিভারের এই ধরনের সমস্যার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে বিশদে আলোচনা করলেন ডাক্তারবাবু। দেখে নেওয়া যাক, গোটা বিষয়টা।
advertisement
এই রোগের উৎপত্তি:
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হওয়ার নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল ডায়াবেটিস অথবা প্রি-ডায়াবেটিস (ইনসুলিন রেজিস্টেন্স) সমস্যা, ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল (HDL cholesterol) ও ট্রাইগ্লিসারাইড-এর মতো ব্লাড লিপিডে পরিবর্তন। তবে নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস-এর প্রকৃত কারণ কিন্তু অজানাই রয়ে গিয়েছে। বহু গবেষক আবার এই সমস্যাকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, লিভার সেল নেক্রোসিস এবং টক্সিক ইনফ্লেমেটরি প্রোটিন নিঃসরণের জন্য দায়ী করে থাকেন।
advertisement
বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে ফ্যাট জমা হতে পারে। সেই কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ওবেসিটি, ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে পশ্চিমি ডায়েটের অভ্যেস, অতিরিক্ত ভাজাভুজি খাওয়া ইত্যাদি। আর একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি যে, দেহে সবার আগে ফ্যাট জমে লিভার বা যকৃতেই।
advertisement
শুধু তা-ই নয়, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের কারণেও এই ধরনের লিভারের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ওষুধের জেরে হেপাটিক ইনজুরির ঘটনা ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামেশাই দেখা যায়। আর অনেকেই এটা জেনে অবাক হবেন যে, প্যারাসিটামলও কিন্তু লিভারের জন্য ক্ষতিকর। আসলে এটা এমন একটা ওষুধ, যা মানুষ প্রায়শই ব্যবহার করে থাকে। তা-ছাড়াও এমন অনেক ওষুধ রয়েছে, যার কারণে রোগীর দেহে অ্যালার্জির উদ্রেক হতে পারে। লিভারের বিপদ রুখতে সেই সব ওষুধও এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। এর পাশাপাশি ওষুধ থেকে হওয়া অ্যালার্জির বিষয়ে পারিবারিক মেডিক্যাল রেকর্ডও জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
advertisement
জটিলতা:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, সারা বিশ্বে ওবেসিটির মতো সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে আবার আমাদের দেশ ডায়াবেটিক ক্যাপিটাল হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে লিভারের রোগের চোখরাঙানিও। কোনও কোনও সময় ফ্যাটি লিভার সিরোসিসের পর্যায়ে পৌঁছে গেলে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম হল সঙ্কুচিত লিভার, ইন্টারনাল ব্লিডিং, পেট ফোলা, তলপেটের উপরের ডান দিকে ব্যথা, অবসন্ন ভাব, লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। লিভার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জন্ডিসও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের অন্যতম বড় লক্ষণ। তবে নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে কিন্তু সে-রকম উপসর্গ দেখা যায় না। ফলে এই রোগ নির্ণয় করা বেশ কঠিন। এই রোগের প্রভাব বাড়তে শুরু করলে এবং তা সিরোসিসের রূপ নিলে তবেই কিছু সাধারণ উপসর্গ টের পাওয়া যায়। যেমন - অবসন্ন ভাব বা ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, দুর্বলতা ইত্যাদি। নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিসের জেরে লিভারে প্রদাহ এবং ফ্যাটি লিভার রোগ হতে পারে। আর রোগ দেরিতে ধরা পড়লে তা শেষ পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। ফলে সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমার মতো রোগ পর্যন্ত হতে পারে।
advertisement
রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা:
আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি (Computerized Tomography) বা সিটি (CT), ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং বা এমআর আই, বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা এবং লিভার বায়োপ্সির মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। সেই সঙ্গে রোগীর রোগের পারিবারিক ইতিহাস, ওষুধের ব্যবহার, অ্যালকোহল সেবন, ধূমপানের অভ্যেস, জীবনযাপনের ধরন সম্পর্কে জানতে চান চিকিৎসকরা। এ-সব জানার পর জীবনযাপনের ধরন, খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ বদলে ওজন কমানোর পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। আর দেহের ওজন কমলেই লিভারের মেদও ঝরে যায়। সেই সঙ্গে কমে যায় প্রদাহ এবং ফাইব্রোসিসও। হেপাটাইটিস বি এবং সি লিভারের কোষের ক্ষতি বিলম্বিত করে দেয় এবং সিরোসিসও প্রতিরোধ করে। শেষ পর্যায়ের সিরোসিসের ক্ষেত্রে লিভারের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, সে-ক্ষেত্রে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টই তখন সমাধানের একমাত্র পথ হয়।
প্রতিরোধই মূল চাবিকাঠি:
মদ্যপান বা অ্যালকোহল সেবন, ধূমপান এবং তামাক সেবনের অভ্যেস বন্ধ করতে হবে। লো-সোডিয়াম স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অভ্যেস করতে হবে। তার সঙ্গে ফল, শাক-সবজি, হোল গ্রেন খাওয়ার অভ্যেস বাড়াতে হবে। ডাল, মুরগির মাংস এবং মাছের মতো লিন প্রোটিন খাবারের তালিকায় যোগ করতে হবে। কাঁচা সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। এতো নয় গেল খাওয়াদাওয়া। এর সঙ্গে ভ্যাকসিনের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হেপাটাইটিস-এ ও হেপাটাইটিস-বি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিতে হবে। হ্যান্ড-হাইজিনের বিষয়টাও বজায় রাখতে হবে। তার জন্য অ্যান্টি-সেপটিক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে মাঝেমধ্যেই হাত ধোওয়ার অভ্যেস করতে হবে। এর পাশাপাশি শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। শারীরিক কসরত এবং এক্সারসাইজ করতে হবে। আসলে ব্যায়াম করলে স্টিয়াটোসিস কমে এবং লিভারের উৎসেচকের মাত্রাও অনেকটাই বেড়ে যায়। কোনও ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা চলবে না। আর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খেতে হবে।
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Liver Problem: মদ্যপানের অভ্যেস নেই মানেই লিভার পুরোপুরি সুস্থ! এই ধারণা কি আদৌ ঠিক? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক?
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement