কলকাতা: নারী-স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একাধিক লিঙ্গ-নির্দিষ্ট সমস্যা, যা অসুস্থতা ও তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ক্যানসার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মহিলা ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই আরও সচেতনতা তৈরি করে ক্যানসার সম্পর্কে ভীতি ও মিথ কাটিয়ে উঠতে হবে।
যদিও ক্যানসার শব্দটার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে মারণ আতঙ্ক, তবু ৪০ শতাংশ মৃত্যু আটকানো যেতে পারে এবং দুই তৃতীয়াংশ সাধারণ ক্যানসার একেবারে সারিয়ে তোলা যেতে পারে, যদি সঠিক সময় রোগ নির্ধারণ করা যায়, বলছেন অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতাল, বেঙ্গালুরুর রেডিয়েশন অঙ্কোলজি বিভাগের চিকিৎসক পুষ্পা নাগা সিএইচ।
তিনি জানান, ব্যাপক সচেতনতা, রোগ প্রতিরোধ, নিয়মিত নজরদারি, দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা বহু মহিলার প্রাণ বাঁচাতে পারে।
ডা. পুষ্পা জানান, সব মানুষ যেমন এক নয়, তেমনই সকলের ক্যানসারও এক রকম হয় না। ফলে চিকিৎসাও ভিন্ন হবে। স্তন, জরায়ু, ডিম্বাশয়, সার্ভিকস, মুখগহ্বর, ফুসফুস, কোলোন, রেক্টাম এবং ত্বকের ক্যানসার খুব সাধারণ, বিশেষত ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে।
এক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস, পরিবেশ, জীবনচর্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত অসুখের ইতিহাসের সঙ্গে বয়স, স্থূলতা, তামাক বা অ্যালকোহল সেবন, খাদ্যাভ্যাস (অতিরিক্ত ভাজাভুজি, রেড মিট) প্রজনন ইতিহাস, অপরিচ্ছন্নতা, অল্প বয়সে যৌন সংসর্গ বা একাধিক ব্যক্তির সংসর্গ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, কোনও রেডিয়েশন বা রাসায়নিকের সঙ্গে সংস্পর্শ বা এইচআইভি, এইচপিভি, হেপাটাইটিস প্রভৃতি সংক্রমণের কারণে হতে পারে। যদিও এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনও এধরনের কোনও ঝুঁকি ছাড়াই রোগ হতে পারে।
আরও পড়ুন: খিঁচুনি হলে কী ভাবে সাহায্য করবেন রোগীকে! জেনে নিন বিস্তারিত
যৌন সংক্রমণ HPV, Cervarix™/ Gardasil™-এর বিরুদ্ধে প্রোফিল্যাকটিক টিকা ব্যবহার করা যেতে পারে। যা ক্যানসার সার্ভিকাল, ভ্যাজাইনাল এবং ভালভাল ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। এই এইচপিভি প্রোফিল্যাকটিক ভ্যাকসিন ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত মহিলা নিতে পারেন। তবে ৯-১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের জন্য নিয়মিত ভাবে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রথম যৌন মিলনের আগে এটি খুবই কার্যকর।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, নিয়মিত শারীরচর্চা, ভাল খাদ্যাভ্যাস যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য গ্রহণ, ভাজা, মশলাদার খাবার এবং মাংসের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া, সীমিত ক্যালোরি, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, অকারণে কোনও বিকিরণের মধ্যে না যাওয়া, কোনও অস্বাভাবিকতা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) যেমন BRCA 1 ও 2, TP53, PTEN, ATM-এর জন্য জেনেটিক পরীক্ষা, বংশগত ক্যানসারের ঝুঁকি অনুমান করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস থেকে হার্টের অসুখ সহজেই নিরাময় করবে এই উপাদান! এর অজানা গুণাগুণ জেনে নিন
শীঘ্র রোগ নির্ণয় করা গেলে প্রায় ৮০ শতাংশ মৃত্যু রোধ করা যেতে পারে। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের ক্ষেত্রে বছরে একবার ম্যামোগ্রাফি, সার্ভিকাল প্যাপ-স্মার পরীক্ষা, ডিম্বাশয়, জরায়ুর পরীক্ষা, বার্ষিক ক্যাল্পোস্কপি, সিগমোয়ডোস্কপি এবং প্রয়োজনীয় কিছু রক্ত পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
কোথাও কোনও ফোলা ভাবে, শক্ত পিণ্ড, স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব, দীর্ঘদিনের ঘা, ত্বকের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, দীর্ঘদিনের কাশি, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, গিলতে অসুবিধা, পেটে ব্যথা, গ্যাস, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদির দিকে নজর রাখতে হবে।
নানা ভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। এজন্য অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন, কেমো, হরমোন বা ইমিউনোথেরাপি করা যেতে পারে। রোগ নির্ণয় ঠিক সময় হলে ক্যানসার সেরে যেতে পারে। তবে খুব মারাত্মক পর্যায়ে ধরা পড়লেও ক্যানসারের চিকিৎসা রয়েছে। যাতে রোগী অনেকদিন পর্যন্ত সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Cancer, Health care