কলকাতা: বিশ্বব্যাপী ডক্সিসাইক্লিন স্টাডির সাফল্যের কথা ঘোষণা করল সিকে বিড়লা হসপিটালস - সিএমআরআই। ওই গবেষণাটি হয়েছিল সিকে বিড়লা হাসপাতালের পালমোনোলজি বিভাগের ডিরেক্টর এবং এইচওডি ডা. রাজা ধরের তত্ত্বাবধানে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক এবং ফিজিশিয়ানরাও।
বিগত তিন বছর ধরে সারা বিশ্বে রীতিমতো তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল মারণ করোনাভাইরাস। এর জেরে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব তো পড়েছেই, তার সঙ্গে মৃত্যু এবং রোগের প্রকোপ শীর্ষে পৌঁছেছিল। অন্য দিকে আবার স্বাস্থ্যগত অর্থনীতি এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরেও আঘাত নেমে এসেছে। আর সেখানে ডক্সিসাইক্লিন হল খুবই কম দামি একটি অ্যান্টিবায়োটিক। যা বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সব থেকে বড় কথা হল, এটি সম্পূর্ণ রূপে নিরাপদ। আসলে অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যা টিস্যুকে রক্ষা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেটিভ হিসেবে কাজ করে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের জটিলতা রুখতে এবং রোগীকে যাতে হাসপাতালে ভর্তি হতে না-হয়, সেই বিষয়ে বেশ সহায়ক ডক্সিসাইক্লিন - মূলত এই হাইপোথিসিস প্রমাণ করার জন্যই ট্রায়াল করা হয়েছিল। ২০২০ সালের শেষ দিকে মোট ৬টি হাসপাতাল থেকে এই গবেষণা শুরু হয়। আর তা চলেছিল ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। আর সবথেকে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছিল ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে। কারণ ওই সময়টায় মারণ কোভিডের তাণ্ডব পৌঁছেছিল তুঙ্গে। কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালের পালমোনোলজি বিভাগের ডা. রাজা ধর ছিলেন প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর। আর তিনিই গোটা গবেষণার প্রক্রিয়াটাকে দেখভাল করেছিলেন। এ-ছাড়াও এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিল পুণের রুবি হল ক্লিনিক, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের যশোদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, দিল্লির সরোজ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতাল, বডোডরার কল্যাণ হাসপাতাল ও স্টার্লিং হাসপাতাল এবং হায়দরাবাদের যশোদা হাসপাতাল।
আরও পড়ুন- অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ভারত, দলের একাদশে প্রথম ছয়ের জায়গা পাকা, কিন্তু বাকি ৫?
আর এই গবেষণার অ্যাপটি ডিজাইন করেছেন বাসেলের ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজিস্ট ও রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ডা. স্টিফান ডি. গ্যাডোলা, কেমব্রিজের সিনিয়র প্রিন্সিপাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সায়েন্টিস্ট জন কার্ক প্যাট্রিক, সাউথহ্যাম্পটন এনআইএইচআর বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের রেস্পিরেটরি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ারের প্রধান অধ্যাপক র্যাটকো জুক্যানোভিচ। ডা. স্টিফান গ্যাডোলার সঙ্গে ডা. রাজা ধর হাত মিলিয়ে এই গবেষণার তত্ত্ব তৈরি করেন এবং তা দেখভাল করেন। আর সেই সঙ্গে গবেষণাপত্রটিও লিখেছেন। অতীব দক্ষ এক স্ট্যাটিস্টিক্যাল বিজ্ঞানী জন কার্কপ্যাট্রিক এই গবেষণার সমস্ত পরিসংখ্যানের হিসেব করেন। এর পাশাপাশি ব্রিটেনের সিনিয়র বিজ্ঞানী লরা গিলবার্ট এবং জার্মানির মার্সেল স্টার্ন ও অলিভার টি. কেপলার এই গবেষণার সমস্ত বৈজ্ঞানিক ইনপুট প্রদান করেছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, সারা বিশ্বের দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন। সব থেকে বড় কথা হল, প্রায় ৩৮৭ অংশগ্রহণকারী এই গবেষণাটিতে অংশ নিয়েছিলেন। ডক্সিসাইক্লিন সব রোগীদের জন্য উপযুক্ত ছিল। প্রতিকূল অবস্থার জেরে এক জন রোগীরও চিকিৎসা বন্ধ করতে হয়নি।
শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছিল যে, সারা বিশ্বেই কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ডক্সিসাইক্লিন খুবই নিরাপদ ছিল। আর এটা এমন কিছু দামি চিকিৎসা পদ্ধতিও নয়। শুধু তা-ই নয়, আইসিইউ-তে ভর্তির ঝুঁকিও কমে গিয়েছিল। ইলেকট্রনিক কেস রেকর্ড ফর্ম উপস্থাপন করা হয়েছিল অ্যামাজন ওয়েব পরিষেবায়। এর ব্যবহারের নির্দেশ সমস্ত অংশগ্রহণকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল এবং বিভিন্ন অনলাইন ট্রেনিং সেশনেরও আয়োজন করা হয়।
ডা. রাজা ধর এই ট্রায়ালের বিষয়ে বলেন, ভারতে কোভিড-১৯ এর মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েই এই গবেষণা করা হয়েছিল। ফলে পরিস্থিতি হয়তো আর এর থেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং হতে পারত না। তবে বিভিন্ন মহাদেশের সমস্ত বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের ফলে এই গবেষণায় একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আবহ তৈরি হয়েছিল। আর সুপরিচিত এবং সহজলভ্য অ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজ মেলার ফলে আমরাও উৎসাহিত হয়ে পড়েছি।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus