Bengali Ritual : নারকেল দিয়ে চালকুমড়ো, ইলিশ কচুশাক-সহ পান্তা, চালতার টক, অরন্ধনের নিমন্ত্রণ আজও আসে

Last Updated:

হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও ভাদ্র সংক্রান্তিতে অরন্ধনের (Arandhan) আয়োজন না করলে মন ভরে না ৷

মহা সমস্যা বেঙ্গালুরুবাসী মোনালিসা সাহার ৷ সে শহরে চালকুমড়ো বা চালতা, কোনওটাই ভাল পাওয়া যায় না ৷ অথচ ভাদ্রমাসের অরন্ধনে (Bengali Ritual) এই দু’টি জিনিস লাগবেই ৷ হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও ভাদ্র সংক্রান্তিতে অরন্ধনের (Arandhan) আয়োজন না করলে মন ভরে না ৷ কলকাতায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে মহা ধুম করে এই রীতি পালিত হয় ৷  স্বামীর কর্মোপলক্ষে বেঙ্গালুরুবাসী হয়ে অনেক নিয়ম ভুলতে হলেও এটা করা চাই-ই চাই ৷
মোনালিসার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ম, ভাদ্র সংক্রান্তির আগের দিন উনুনকে পুজো করা হবে ৷ তার পর সারারাত তাতে রান্না করা হবে কচুর শাক, চালকুমড়োর ঘণ্ট, মটর ডাল এবং চালতার টক ৷ সঙ্গে ইলিশ ও চিংড়ির পদ ৷ ভাত রান্না করে সারারাত জল ঢেলে ভিজিয়ে রাখা হবে ৷ কোনও খাবারেই পেঁয়াজ রসুন দেওয়া হবে না ৷ রান্নার পর ফ্রিজেও তোলা হবে না ৷ পান্তাভাত-সহ সব রান্না খাওয়া হবে পর দিন, অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মা পুজোতে ৷ সে দিন উনুন ধরা বা ছোঁওয়া যাবে না ৷ যেমন উনুন, পড়ে থাকবে তেমনই ৷ তার পরের দিন উনুন আবার ফিরবে চেনা ব্যস্ততায় ৷
advertisement
অনেক নিয়মই পালন করা সম্ভব হয় না ৷ মোনালিসার কথায়, ‘‘অরন্ধনের রান্নার নিয়ম হল উনুনের আঁচ একটানা জ্বলবে ৷ বন্ধ করা যাবে না ৷ এখন তো গ্যাসে সেটা সম্ভব নয় ৷ আমি সব যোগাড় করে তার পর গ্যাস জ্বালাই ৷ যে আভেনে রান্না শুরু হয়, সেটা জ্বলতেই থাকে ৷ পর পর সব রান্না করে নিই ৷ অন্য আভেন অবশ্য যখন যেমন প্রয়োজন সেরকমই জ্বালাই ৷’’ সঙ্গে জানাতে ভুললেন না, অরন্ধনের সব রান্নাই করা হয় জল কম দিয়ে ৷ যাতে গরমে নষ্ট না হয়ে যায় ৷
advertisement
advertisement
রকমারি রান্নার পাশাপাশি পান সুপারি দিয়ে পুজো গ্যাসের আভেনকে, ছবি সৌজন্য-মোনালিসা সাহা
আরও পড়ুন : সাবুদানা, ইসবগুল, গদের আঠা দিয়ে অ্যারারুট জ্বাল, তাতে মিশত বাতিল টিউবলাইটের মিহি চূর্ণ
অরন্ধন বা রান্নাপুজোয়  পূজিতা হন মনসাদেবীও ৷ মনে পড়ছে আর এক বেঙ্গালুরুবাসী শ্রাবণীর ৷ তাঁর বাঙাল শ্বশুরবাড়িতে এই রীতি পালিত হয় না ৷ তবে ছোট থেকে অরন্ধন দেখে এসেছেন নিজেদের ঘটি রীতিনীতিতে ৷ বললেন, ‘‘অরন্ধন কিন্তু ঘটি বাঙাল দু’ বাড়িতেই পালিত হয় ৷বেশিরভাগই সংক্রান্তির আগের দিন রান্না করে পরের দিন খায় ৷ আমাদের বাড়িতে হত ইচ্ছে অরন্ধন ৷ আমরা ব্রত পালন করে বাসি খেতাম সংক্রান্তি অর্থাৎ বিশ্বকর্মাপুজোর (Vishwakarma Puja) আগের দিন ৷’’
advertisement
মশারির ভিতর রাতভর রান্নাপুজোর খাবার, ছবি সৌজন্য-ঋতুপর্ণা মজুমদার
শ্রাবণীদের পরিবারে উনুনকে মনসাদেবীর প্রতীক বলে পুজো করা হয় ৷ উনুনের পাশে আঁকা হয় ৫ টা সাপ ও ৫ টা পদ্ম ৷ সর্পদেবীর আরাধনা বলে এই পুজোয় ধূপ ও ধুনোর ব্যবহার নৈব নৈব চ ৷ উনুনে বসানো হয় ফণীমনসার ডাল ৷ প্রসাদ হিসেবে সাজিয়ে দেওয়া হয় পান্তা ভাত, ছোলার ডাল, মটর ডাল, চিংড়ি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ো, নারকেল দিয়ে চালকুমড়ো, শাপলা বা কচুর কোন পদ ৷ শ্রাবণীর কথায়, ‘‘আমি যতদূর জানি, ইচ্ছে অরন্ধনে মাছের পদ দেওয়া যায় ৷ অন্য অরন্ধন ব্রতের রান্না হয় মাছহীন সম্পূর্ণ নিরামিষ ৷ তবে এটা পরিবার হিসেবে ব্যতিক্রমও আছে ৷ তবে দু ক্ষেত্রেই পুরোহিতের বদলে বেশিরভাগ পরিবারে বাড়ির গৃহিণীই পুজো করেন ৷’’
advertisement
কিন্তু অরন্ধনে বা মনসা পুজোয় ঠান্ডা খাবারই কেন খেতে হবে? ব্যাখ্যা দিলেন দেবস্মিতা সাহা৷ জানালেন, সাপ গরম খাবার সহ্য করতে পারে না ৷ তাই তাদের দেবীর পুজোয় শীতল খাবারই প্রসাদ ৷ দেবস্মিতার বাড়িতে মনসাদেবী প্রতিষ্ঠিত ৷ জানালেন, ভাদ্র বা বছরের অন্য যে কোনও সময়ে মনসাদেবীর পুজো হলেও ধূপ ধুনোর প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ ৷ রান্নাপুজোর ভোগ নতুন বাসনে, নতুন চালে রান্না করাই বাঞ্ছনীয় ৷
advertisement
আরও পড়ুন : গোবরজলের ছড়া দিয়ে মাটির উঠোন তকতকে করে শুরু দিন, ঠাকুমা পুষ্পরানি জানালেন সুস্থতার চাবিকাঠি
শুধু বিশ্বকর্মা বা মনসাপুজোর সঙ্গেই নয় ৷ ভাদ্রমাসের লক্ষ্মীপুজো এবং চাপড়া বা মন্থনষষ্ঠীর সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অরন্ধন রীতি ৷ মন্থন হল মথিত করা ৷ বললেন চিত্তরঞ্জন এবং মনোরঞ্জন দাস ৷ প্রবীণ দুই ভাই শৈশব ফেলে এসেছেন মেদিনীপুরের শিলদায় ৷ সেখানেই ছোটবেলায় কাকভোরে উঠে বাঁশপাতা সংগ্রহ করতে যেতেন ৷ কারণ মন্থন বা চাপড়া ষষ্ঠীর পুজোর অন্যতম উপকরণ এই বাঁশপাতা এবং ভিজিয়ে রাখা পাঁচরকম কলাই ৷ দু’জনেই স্মৃতিচারণা করলেন, ‘‘ যে দণ্ড ঘুরিয়ে দুধ মন্থন করে দই বা ননী তৈরি হয়, সেই দণ্ডকেই পুকুরের মধ্যে পুঁতে জলে দাঁড়িয়ে পুজো করা হয় ৷ এই ষষ্ঠীব্রতেরও অন্যতম অঙ্গ অরন্ধন, অর্থাৎ আগের দিন রেঁধে পরের দিন খাওয়া ৷ ষষ্ঠীর দিন সব রান্না করে পরের দিন খাওয়া হবে ৷’’ মূলত নিরামিষ হলেও, অনেক বাড়িতে রান্নার তালিকায় যুক্ত হয় মাছও ৷ তবে অবশ্য-উপস্থিতি হয় আমড়ার চাটনির ৷ ঘটিবাড়ির ডাকে ‘আমড়ার টক’ বলে৷
advertisement
তবে ব্রত যে বাড়িতেই হোক না কেন, নিমন্ত্রণ থাকে প্রিয়জনদের জন্য ৷ যেমন ছিল কুমুর বাড়ির দাওয়ায়, তাঁর ‘হীরেন দার’ জন্য ৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অরন্ধনের নিমন্ত্রণ’-এ ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Bengali Ritual : নারকেল দিয়ে চালকুমড়ো, ইলিশ কচুশাক-সহ পান্তা, চালতার টক, অরন্ধনের নিমন্ত্রণ আজও আসে
Next Article
advertisement
সঞ্জীব কুমারকে ভালবেসেছিলেন, কিন্তু বিয়ে হয়নি, নিয়তির আশ্চর্য সমাপতন, নায়কের মৃত্যুদিনেই শেষ নিশ্বাস ফেললেন আজীবনের প্রেমিকা সুলক্ষণা পণ্ডিত
সঞ্জীব কুমারকে ভালবেসেও বিয়ে হয়নি,নায়কের মৃত্যুদিনেই শেষ নিশ্বাস ফেললেন আজীবনের প্রেমিকা
  • সঞ্জীব কুমারকে ভালবেসেছিলেন, কিন্তু বিয়ে হয়নি

  • নিয়তির আশ্চর্য সমাপতন

  • নায়কের মৃত্যুদিনেই শেষ নিশ্বাস ফেললেন আজীবনের প্রেমিকা

VIEW MORE
advertisement
advertisement