#কলকাতা: সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে টানা ৭৫ দিনের রাজনৈতিক জনসংযোগ কর্মসূচির সূচনা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম 'বাংলার গর্ব মমতা৷'
সমস্ত বিধানসভা এলাকার বিধায়কদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় দলের তরফে। সেই মতো ইতিমধ্যেই নির্দেশ পালন করা শুরু করে দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকায় কার মাধ্যমে এই কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরে তৃণমূল নেতৃত্ব।
শেষমেষ দলীয় স্তরে সিদ্ধান্ত হয়, বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অবর্তমানে এই জনসংযোগ কর্মসূচির যাবতীয় কাজ দেখভাল করবেন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। শনিবার বেহালার শরৎ সদনে দলীয় এক কর্মী সম্মেলনের পর রত্না চট্টোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে আনুষ্ঠানিক সেই ঘোষণা করলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
পার্থ এদিন বলেন, 'শোভন চট্টোপাধ্যায় নিষ্ক্রিয় থাকতে পারেন। কিন্তু তা বলে দল তো আর নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকতে পারে না। তাই তাঁর অবর্তমানে আজ থেকেই জনসংযোগ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন রত্না।'
দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করার নির্দেশ পাওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রত্না চট্টোপাধ্যায় শুধু বলেন, 'দল যা নির্দেশ দিয়েছে আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।' শোভন চট্টোপাধ্যায় কী দলে ফিরছেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, 'সেটা তো উনিই ভাল বলতে পারবেন'।
দরজায় কড়া নাড়ছে পুরভোট। ফলে সাড়ে আট বছর কলকাতার মেয়র পদ সামলানো শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েও চর্চা বাড়ছে রাজনৈতিক শিবিরে। ২১ ফেব্রুয়ারি সে চর্চা লাফিয়ে বেড়েছিল। প্রায় গোটা দক্ষিণ কলকাতা ভরে গিয়েছিল শোভনের ছবি এবং বিজেপির প্রতীক সম্বলিত ব্যানারে। ‘বেহাল’ কলকাতাকে ‘স্বমহিমায়’ ফেরাতে আপনি ফিরে আসুন— শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি এই রকম আহ্বান জানানো হয়েছিল সেই সব ব্যানারে। ওই ব্যানারকে ঘিরে রাজনৈতিক শিবিরে তুমুল কৌতুহল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া শোভন দেননি।
ব্যানার-কাণ্ডের পরে যে তিনি সক্রিয় হয়ে উঠলেন, এমন কোনও বিষয়ও প্রকাশ্যে আসেনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজ্যের শাসক দলে ফেরার পথ আর অতটা মসৃণ হবে না শোভনের পক্ষে। দলে শোভনের যে আর ঠাঁই হবে না, এমনও নয়। কেন না, রাজনীতিতে অসম্ভব নয়, এমন কিছু হয় না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে শনিবার যে ভাবে রত্না চট্টোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন খোদ মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাতে রাজনৈতিক মহলে এখন তুঙ্গে জল্পনা। শোভনের পরবর্তী কাউন্সিলর এবং বিধায়ক হিসেবে কি তাহলে রত্না চট্টোপাধ্যায়কেই মুখ হিসেবে প্রজেক্ট করছে দল? এই প্রশ্ন নিয়েও এখন রাজনৈতিক মহলে চর্চা তুঙ্গে।
গত কয়েক মাস ধরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে ভাবে লাগাতার শোভনের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন, তাতে এ-ও স্পষ্ট যে, বিজেপির হয়ে পুর-যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়লে তিনি যথেষ্ট গুরুত্বই পেতেন। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শোভনের যে মতান্তর হয়েছিল, তা কাটানোর চেষ্টাও শুরু করেছিলেন এ রাজ্যের একাধিক নেতা। অন্তত প্রকাশ্যে শোভন বা বৈশাখী সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি বিজেপির কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাই। বরং মেয়র হিসেবে শোভনের কাজের প্রশংসা বা শোভনের নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতার কথাই বারবার শোনা যাচ্ছিল বিজেপির রাজ্য নেতাদের মুখে।
তারপরেও শোভনকে হাজির করানো যায়নি কলকাতার শহিদ মিনারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মঞ্চে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কথায়, শোভনের দলে ফেরার সম্ভাবনা শেষ নয় হয়তো, তবে যে ক্ষীণ, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তৃণমূলের তরফে বার্তা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জন্য।
রাজনৈতিক মহলের মতে, 'বাংলার গর্ব মমতা' -- এই জনসংযোগ কর্মসূচিকে সামনে রেখে আসলে বেহালার শরৎ সদনে পুরভোটের প্রস্তুতি শুরুর লক্ষ্যেই দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এদিন বৈঠক করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । যেখানে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রকে যে টিকিট দেওয়ার ভাবনা আপাতত নেই, স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কেকে দায়িত্ব দিয়ে সেই বার্তাও বেশ স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলের মহাসচিব। তবে শেষ পর্যন্ত দল রত্না চট্টোপাধ্যায়কে পুরভোটে প্রার্থী করে কিনা কিংবা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ছেঁটে ফেলে রত্নার ওপরই দল বেশি ভরসা করছে কিনা তার উত্তর দেবে সময়ই।
VENKATESWAR LAHIRI
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Ratna Chatterjee, Sovan Chatterjee, TMC