হাওড়া: বাংলার শঙ্খ শিল্পী বা শাখা তৈরির কারিগরদের একসময়ের জগৎজোড়া নাম ছিল। তাঁদের হাতের সেই অনবদ্য সূক্ষ কাজ দেখে অনেক নামিদামি মানুষ, রাজা-মহারাজারা পর্যন্ত তারিফ করতেন। বাগনানের শাঁখারী পাড়াতে এক সময় এমন বহু শিল্পী থাকতেন। কিন্তু দিন বদলেছে। এখন শাঁখা তৈরি ও তার উপর কারুকাজ মেশিন করে। তাকে শুধু দক্ষভাবে চালানোর জন্য প্রয়োজন পড়ে শঙ্খ শিল্পীর। তবে দিন বদলালেও চোদ্দ পুরুষের পেশা ছেড়ে যেতে পারেননি লালটু দত্তরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তন করে তাঁরাও এখন মেশিন দিয়েই তৈরি করছেন শাঁখা।
হাওড়ার বাগনানের শাঁখারী পাড়ায় প্রায় ৫০০ বছর আগে শাঁখা তৈরি শুরু হয়। ধীরে ধীরে এখানকার শঙ্খ শিল্পীদের নাম ভারত বিখ্যাত হয়ে ওঠে। লোহার ফাইল করাত ও ছোট ছোট হাতুড়ির সাহায্যে তাঁরা কী নিপুণ দক্ষতায় শরু শরু শাঁখার উপর অনবদ্য সব নকশা ফুটিয়ে তুলতেন। এই গ্রামের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শাঁখা তৈরিকেই জীবিকা হিসেবে বেছে এসেছে। কিন্তু কিছু বছর আগে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিনে এসে গোটা ছবিটাই বদলে দেয়।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রি ওয়াইফাই জোন! খুশি গবেষক থেকে পড়ুয়ারা
মেশিনের শাঁখা তৈরি শুরু হলে বাগনানের শাঁখারী পাড়ার শিল্পীদের কাজের বরাত ক্রমশ কমতে থাকে। শেষমেষ এই গ্রামের যুবক লালটু দত্ত ওড়িশায় গিয়ে মেশিনের শাঁখা তৈরি করা শিখে আসেন। তাঁর হাত ধরেই শাঁখারী পাড়ায় শুরু হয় মেশিনে শাঁখা তৈরির কাজ। ধীরে ধীরে এলাকার বাকি শঙ্খ শিল্পীরাও মেশিনে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।
এদিকে এর আগে শাঁখা তৈরির প্রধান মাল শাঁখ বা শঙ্খ শ্রীলঙ্কা থেকে মূলত আসত। কিন্তু সেখান থেকে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কাঁচামালের জোগান নিয়ে একটা সঙ্কট দেখা দেয়। পরবর্তীতে অবশ্য সেই সঙ্কট কেটেছে। বর্তমানে বিশাখাপত্তনম ও রামেশ্বরম থেকে শঙ্খ আসে।
লালটু দত্ত জানালেন, বর্তমানে একটি শঙ্খর দাম ৬০০-৮০০ টাকা পড়ে। মূলত তিন ধরনের শঙ্খ পাওয়া যায়- খোগা, তিতকুটি ও শিঙ্গি। খোগার সরবরাহ সবচেয়ে বেশি। যদিও এর দাম তিতকুটি ও শিঙ্গির তুলনায় কম। রামেশ্বরম ও বিশাখাপত্তনম থেকে কলকাতায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা শঙ্খ নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই চাহিদা মত শাঁখা ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল কেনেন। প্রথমে হাতুড়ির ঘায়ে শঙ্খগুলোর মুখ ভেঙে দিতে হয়। এরপর শঙ্খগুলিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হয়। পরবর্তী পর্যায়ে হয় শঙ্খ কাটিং।
শাঁখা তৈরির প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে গিয়ে লাল্টু দত্ত জানান, মোটা শঙ্খ থেকে দুটি অর্থাৎ একজোড়া শাঁখা তৈরি হয়। শরু শঙ্খ থেকে চারটি শাঁখা পাওয়া যায়। কাটিংয়ের পর শাঁখাগুলিকে গোল করতে হয়। কাজের উপযোগী হলে সেগুলো উপর নকশা অংকন করা হয়। সাধারণ নকশার শাঁখার দাম তুলনামূলকভাবে কম। তবে সোনা বাঁধানো শাঁখার দাম ৫০০-৬০০ টাকা থেকে ২০০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে গোটাটাই নকশার ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ হয় বলে তিনি জানান। লাল্টু দত্তের কথায়, একজন দক্ষ শঙ্খ কারিগর দৈনিক ৫০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। তবে মহিলারা দৈনিক ২০০ টাকা করে সাধারণত উপার্জন করেন।
রাকেশ মাইতি
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।