হোম /খবর /ফিচার /
Fathers Day 2020 | বিলেতে পাড়ি দিচ্ছেন সুকুমার রায়, জাহাজ থেকে লিখেছিলেন বাবাকে

Fathers Day 2020 | বিলেতে পাড়ি দিচ্ছেন সুকুমার রায়, জাহাজ থেকেই লিখেছিলেন বাবাকে

নিজে বিলেত না যেতে পারলেও উপেন্দ্রকিশোরের বাসনা ছিল ছেলে এই বিষয়ে লন্ডন থেকে ডিগ্রি আনুক। ১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে ২৩ বছর বয়সে গুরুপ্রসন্ন বৃত্তি নিয়ে সুকুমার বিলেতে যান

  • Last Updated :
  • Share this:

মুদ্রণ বিষয়ে অসম্ভব উৎসাহ ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়ের। লন্ডনের বিখ্যাত মুদ্রণ পত্রিকা Penrose’s Pictorial Annual-এ উপেন্দ্রকিশোরের ছবি ও লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত। নিজে বিলেত না যেতে পারলেও উপেন্দ্রকিশোরের বাসনা ছিল ছেলে এই বিষয়ে লন্ডন থেকে ডিগ্রি আনুক। ১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে ২৩ বছর বয়সে গুরুপ্রসন্ন বৃত্তি নিয়ে সুকুমার বিলেতে যান। প্রথমে লন্ডনে এক বছর কাউন্টি কাউন্সিল স্কুল অফ ফোটোএনগ্রেভিং অ্যান্ড লিথোগ্রাফি নিয়ে পড়েন। পরে মিউনিসিপালিটি স্কুল অফ টেকনোলজিতে কোমোলিথোগ্রাফি ও লিথোড্রয়িং নিয়ে শিক্ষালাভ করেন। ১৯১৩ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর ‘সিটি অব লাহোর’ নামক জাহাজে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন সুকুমার, সঙ্গে ছিলেন কালীমোহন ঘোষ। এই দুই বছরে অজস্র চিঠি চালাচালি হয়েছে সুকুমার-উপেন্দ্রকিশোরের। মুদ্রণ বিষয়ে নানা কথা বলেছেন তাঁরা। আমরা ফাদার্স ডে-তে বেছে নিলাম লন্ডন যাওয়ার পথে জাহাজ থেকে বাবাকে লেখা সুকুমার রায়ের একটি চিঠি। চিঠিটি বোনা হয়েছে এক প্রকৃত তরুণের স্বপ্ন আর দোলাচলে। একই সঙ্গে বোঝা যায় বাবা উপেন্দ্রকিশোর কতটা নির্ভরতার জায়গা ছিল সুকুমারের কাছে।

বাবা,

এখন প্রায় এডেনের কাছাকাছি এসেছি। এ পর্যন্ত সি সিকনেস হয়নি-কেবল পরশু সকালে একটু বমিভাব হয়েছিল। স্টিমারে বন্দোবস্ত খুবই ভাল-কোনও রকম অসুবিধা হয় না। এ কয়দিন পোষাক পরা, টাই বাঁধা এসবও অনেকটা অভ্যেস হয়ে এসেছে-এখন আর বেশি দেরি হয় না। স্টুয়ার্ড কেবিনের মধ্যে খাবার এনে দেয়-কারণ স্টিমারে খাওয়া এত জবরজং যে আমার ডিনার সেলুনে যেতেই ইচ্ছে করে না। মেনু থেকে বেছে দু'একটা সহজ ডিশ আনতে বলি। পোরিজ, স্ট্রু, রুটি, পুডিং এসবই বেশি খাই কখনও একটু কাটলেট বা রোস্টও আনতে বলি। হেভি মিল দিনে তিনবার। ব্রেকফাস্ট ৯টায়, লাঞ্চ ১ টায়, ডিনার সন্ধ্যার সময়-তাছাড়া দুবার টি আছে-ভোরে ও বিকেলে। আমি এর মধ্যে লাঞ্চ প্রায়ই বাদ দিই-সে সময় একটু দুধ কি ব্রদ-এই খাই। রান্না বেশ চমৎকার।

এ কয়দিন একটুও গরম বোধ করিনি।-বরং মোটের ওপর ঠাণ্ডাই বোধ হয়-তবে রেড সি-তে গেলে কি হবে জানি না। সমুদ্র তো খুব শান্ত। বোম্বে থেকে টেলিগ্রাম করাবার জন্য কুকের লোককে টাকা এবং রিটেন ইনস্ট্রাকশান দিয়েছিলাম। পাঠিয়েছিল কি?

স্টিমারে উঠবার সময় কোনও রকম মুশকিল হয়নি। কুকের লোকেই মুটে ডেকে গাড়ি ঠিক করে বন্দোবস্ত করে দিল। আমি খালি আমার জিনিসগুলি তাঁদের দেখিয়ে দিলাম। স্টিমারো এসে দেখি সব ঠিকঠাক। ট্রেনে একটু খারাপ লেগেছিল। কিছু খেলেই বমি আসত। খালি লেমনেড আর একটু ফল কিনে খেয়েছিলাম। ডাইনিং কারে ব্রেকফাস্ট খেতে গিয়েছিলাম কিন্তু একটু খেয়েই বমিবমি বোধ হল তাই আর খেলাম না। আমার কেবিনে আর একজন আছে যে পার্শি, নাম সাবাওয়ালা। বেশ লোক। সেই যে ট্রেনে একজন সাহেব ছিল আমাদের কম্পার্টমেন্টে, তার নাম সেই কি টোপাগ্লো না কি সেও বেশ মানুষ- সে কনস্ট্যানটিনোপলে যাচ্ছে, সে অনেক গল্প করল। সে বোধ হয় বুলগেরিয়ান কারণ বুলগেরিয়ার অনেক গল্প করল।

তোমরা সব কেমন আছো?

আমি বেশ আছি।

স্নেহের তাতা।P&O S.N.Co.

S.S Arabia

11.10.11

(মূল চিঠিটিতে ইংরেজি শব্দগুলি ইংরেজি হরফেই লেখা ছিল। পাঠক যাতে পড়তে বাধা না পান তা নিশ্চিত করতে আমরা ইংরেজি শব্দগুলিকে চলতি রীতিতে বাংলা হরফেই লিখেছি। আধুনিক বাংলা বানান বিধি ব্যবহার করা হয়েছে।)

Published by:Uddalak Bhattacharya
First published:

Tags: Fathers Day 2020