Health: শরীর সুস্থ রাখতে ভারী খাবারের পাতেই রঙ-বাহারি ফল; এই অভ্যাস থেকেই হতে পারে হিতে বিপরীত!
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
Health: ফল খাওয়ার বিষয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও রয়েছে। সেটা হল- ফল সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।
#কলকাতা: খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য আনে রঙবেরঙের ফল (Fruits)। শুধু রঙেই নয়, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণেও ফলের জুড়ি মেলা ভার! সাধারণত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অথবা সুস্থ থাকতে দিনে তিন বার শাক-সবজি খেতে বলা হয়ে থাকে। আর আমরা প্রত্যেকেই জানি যে, শাক-সবজির সঙ্গে খাদ্যতালিকায় ফলমূল যোগ করাও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা ফলমূল আমাদের শরীরে নিউট্রিয়েন্টস (Nutrients) জোগায়। ফলে শরীরের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
শুধু তা-ই নয়, ফল আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড (Hydrated) রাখতেও দারুণ ভাবে সাহায্য করে এবং ফল খাওয়ার অভ্যেস আজেবাজে খাবার খাওয়া থেকে আমাদের বিরতও রাখে। তাতে ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে। তবে ফল খাওয়ার বিষয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও রয়েছে। সেটা হল- ফল সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। না-হলে কিন্তু মুশকিল!
আসলে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই ফল খাওয়া নিয়ে একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে- ভারী খাবারের সঙ্গে ফল খাওয়া। অর্থাৎ অনেকেই দুপুরের খাবার খাওয়ার সঙ্গে অথবা ব্রেকফাস্টের সঙ্গে কোনও একটা ফল খান। আবার অনেকে সন্ধ্যেবেলা স্বাস্থ্যকর অভ্যেস হিসেবে এক বাটি ফ্রুট স্যালাড খেয়ে নেন। আর ভেবে নেন যে, এতে শরীর সুস্থ থাকবে। কিন্তু এগুলো একেবারেই ভুল ধারণা!
advertisement
advertisement
কারণ ব্রেকফাস্ট অথবা লাঞ্চের সঙ্গে অথবা সন্ধ্যেবেলায় ফলমূল খাওয়া উচিত নয়। এর জেরে শরীর তো সুস্থ থাকেই না, উল্টে এর কোনও উপকারও নেই। তাই আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এই অভ্যেস যত দ্রুত সম্ভব বদলে ফেলাই শরীরের পক্ষে ভালো। শুধু তা-ই নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফল খাওয়ার পরিমাণও থাকতে হবে নির্দিষ্ট। প্রচুর পরিমাণে ফল খেয়ে নিলে শরীর ভালো থাকবে, এই ধারণাও কিন্তু ভুল।
advertisement
আয়ুর্বেদের মতে, প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রতিটি খাবার সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে খাওয়া উচিত। দুগ্ধজাত খাবার, শাক-সবজি এবং মাংস একসঙ্গে খেলে শরীরের বিভিন্ন রকম ক্ষতি হয়।
ফলের সঙ্গে অন্যান্য খাবার খেতে নেই কেন?
অন্য সব খাবারের তুলনায় ফল খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে তা তাড়াতাড়ি ভেঙে যায়। আর অন্য কোনও খাবারের সঙ্গে ফল খেলে তার জেরে শরীরে এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়। আর ওই বিষাক্ত উপাদানটি ‘আমা’ নামে পরিচিত। তাই অন্য কোনও খাবারের সঙ্গে ফলমূল খাওয়া হলে তা হজমের প্রক্রিয়াকে হ্রাস করে।
advertisement
পাকস্থলীতে যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য ভারী খাবার থাকে, ততক্ষণ ফলও পাকস্থলীতে থেকে যায়। ফলে ফল থেকে নিউট্রিয়েন্টস শোষণ করা আমাদের শরীরের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর এখানেই শেষ নয়, পাচন-রসের (Digestive Juices) কারণে পাকস্থলীর মধ্যে থাকা ফল গেঁজে উঠতে শুরু করে। সাধারণ ভাবে যা অত্যন্ত বিষাক্ত এবং অসুস্থতা ও শারীরিক জটিলতার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। তাই দুধ অথবা দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবারের সঙ্গে ফল খাওয়া উচিত নয়। এই ধরনের খাবারের সঙ্গে ফল খেলে ব্রণ (Acne), সোরাইসিস (Psoriasis), একজিমা (Eczema)-সহ নানান ধরনের ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
advertisement
ফল রান্না করতে নেই কেন?
অনেক সময় অনেকেই বিভিন্ন রকম এক্সপেরিমেন্টের জন্য ফল রান্না বা মাইক্রোওয়েভ করে নেন। কিন্তু বিশেষেজ্ঞরা বলেন, এতে কোনও লাভ নেই। ফল খেতে হলে কাঁচা ফলমূল খাওয়াই শ্রেয়। আমরা সাধারণত যে বিষয়টা লক্ষ্য করে থাকি, সেটা হল- প্রায় সব ফলই খুব উজ্জ্বল রঙের হয়। এর একটা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করা হয়। আসলে ফলের গাত্রের উজ্জ্বল রঙের অর্থ হল, আগুন বা তাপ সম্পর্কিত শক্তি। ব্যাপারটা আর একটু সহজ ভাবে বলা যাক। ফলের মধ্যে থাকে হজমকারী তাপ (Digestive Fire) এবং স্বাস্থ্যকর নিউট্রিয়েন্টস। আর ফল কোনও ভাবে রান্না করা হলে সেই পাচন তাপ বা স্বাস্থ্যকর নিউট্রিয়েন্টস নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্না করা খাবার খেলে তার কোনও পুষ্টিগুণ থাকে না অথবা তার কোনও উপযোগিতাও নেই।
advertisement
আরও পড়ুন: ওপেন হার্ট সার্জারি নয়, হৃদরোগীর নিরাময়ে ট্রান্সক্যাথিটার এওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট আদতে কী?
ফলমূল খাওয়ার সঠিক সময়:
স্বাস্থ্যকর ডায়েটে মেনে ফলমূল খাওয়া হচ্ছে, অথচ নির্দিষ্ট কোনও সময় মানা হচ্ছে না। এতে লাভের লাভ কিছুই হয় না, বরং উল্টে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। আসলে ফল কখন খাওয়া হবে, সেই ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখা উচিত। কারণ ফল খাওয়ার সময়টাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদ মতে, ফল খাওয়ার সঠিক সময় হল সকাল। আর খালি পেটেই ফল খাওয়া উচিত। কারণ ওই সময়টাতেই পাকস্থলী ফলের বেশির ভাগ নিউট্রিয়েন্টস শোষণ করে নিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সরল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারও সকালে ওয়ার্ক-আউটের আগে অথবা পরেই খাওয়া ভালো। ফ্যাট, প্রোটিন এবং লো-কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার সূর্যাস্তের পরেই খাওয়া উচিত।
advertisement
দিনের কোন সময়ে ফল খাওয়া উচিত?
দু’টো মিল (Meals) খাওয়ার মাঝে ফল খাওয়া উচিত। আসলে দু'টো মিলের মাঝে খিদে পেয়ে গেলে অনেকেই হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরান। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সময়টায় স্ন্যাকস (Snacks) হিসেবে ফল খাওয়াই ভালো অপশন। তাতে দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদাও মেটে। আবার অস্বাস্থ্যকর খাবারও খেতে হয় না। তাই সকাল ১১টা আর বিকেল ৪টে- এই সময় দু’টি হচ্ছে ফল খাওয়ার জন্য সব থেকে ভালো সময়। তবে যদি ব্রেকফাস্ট অথবা লাঞ্চ খেতে দেরি হয়, তা হলে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করে তবেই ফল খেতে হবে।
সূর্যাস্তের আগেই কেন ফল খাওয়া উচিত?
আমরা প্রায় প্রত্যেকেই এটা জানি যে, সূর্যাস্ত হয়ে গেলে আর তার পরে ফল খেতে নেই। কিন্তু নিশ্চয়ই এই প্রচলিত ধারণার পিছনে নিশ্চিত ভাবে কোনও কারণ রয়েছে। তাই জেনে নিতে হবে, এই ধারণার পিছনে ঠিক কোন কারণ রয়েছে। আসলে সন্ধ্যেবেলায় ফল খেলে আমাদের রাতের ঘুমের রুটিনে ব্যাঘাত ঘটে। শুধু তা-ই নয়, হজম প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। ফল হল, সরল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার।
আরও পড়ুন: চল্লিশেও মা হওয়া সম্ভব! বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কিত একাধিক ভ্রান্ত ধারণা সরিয়ে রেখে জেনে নিন উপায়...
অর্থাৎ ফল খাওয়ার পর তা শরীরের মধ্যে গিয়ে খুব দ্রুত ভেঙে যায়। আর সেই কারণে সঙ্গে সঙ্গেই ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জির জোগান তৈরি হয়। আর ব্লাড সুগারের মাত্রা আচমকা বেড়ে গেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। শুধু তা-ই নয়, সূর্যাস্তের পরে ফল খেলে মেটাবলিজমও ধীর গতিতে হতে থাকে। তাতে কার্বোহাইড্রেট হজম করতে পরিপাকতন্ত্রের খুবই অসুবিধা হয়। তাই সন্ধ্যেবেলা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো!
Location :
First Published :
November 23, 2021 12:57 PM IST