#কলকাতা: আজকাল পরিবার বড় করার প্ল্যানিং, সন্তানকে নিজেদের জীবনে আনার প্ল্যানিং বহু মানুষ দেরিতে করে থাকে। ৩০-এর কোটার শেষের দিকে বা ৪০-এর শুরুতে অনেকেই সন্তান আনার কথা ভাবে। তবে, এই বয়সে সন্তানধারণে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। অনেকের সন্তানধারণের ক্ষমতাও কমে যায় ফলে স্বাভাবিক উপায়ে সন্তানধারণ করা যায় না। চিকিৎসকরা বলছেন, এই বয়সে অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই ডিম্বাণু কমতে থাকে ফলে স্বাভাবিকভাবে সন্তানধারণে সমস্যা হয়। অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েন। অনেকে এর জন্য মানসিক অবসাদেও চলে যান। কিন্তু কলকাতার উত্তম কুমার সরণির Nova IVF Fertility East-এর ফার্টিলিটি কনসালট্যান্ট ড. ঐন্দ্রী সান্যাল (Dr. Aindri Sanyal) বলছেন, এই বয়সেও সন্তানধারণ সম্ভব। তাঁর কথায়, এই বয়সে অনেকে আবার নানা রকম সমস্যায়ও ভোগেন যা অল্প বয়সে দেখা যায় না।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে নামিয়ে আনে! কোভিড নিয়ন্ত্রণে এই ক্যাপসুল এখন গেমচেঞ্জার
দেরিতে সন্তানধারণের পরিকল্পনা করার একাধিক ভালো ও একাধিক খারাপ দিক রয়েছে। যা পূর্বে বহুবার আলোচনা হয়েছে বহু স্তরে। কিন্তু দেরিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কারও অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে, যা পেরিয়ে পরিবারের পরিকল্পনা করতে সময় লেগে যায়। আবার কেউ দেরিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াকেই সুবিধার মনে করে।
৪০ বছর বয়সে প্রেগনেন্ট হওয়ার কিছু সুবিধা আছে
প্রথমত, বয়স যখন ৪০ তখন আগের থেকে অনেক বেশি আর্থিকভাবে যে কেউ শক্তপোক্ত থাকে। যা সন্তানকে বড় করে তুলতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এমন বয়সে যে কেউ নিজের সঙ্গীর সঙ্গে অনেক বেশি ভালোভাবে মিশতে পারে, থাকতে পারে। ফলে অনেকেই এমন বয়সে মনে করে এবার তার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে পরবর্তী ধাপে পা দেওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ৪০ বছর বয়স মানে জীবনে ৪০টি বসন্ত পেরিয়েছে এবং একাধিক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে নিজেকে শক্ত করে সমাজে এবং নিজের পরিবারে একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। অভিজ্ঞতাও হয়েছে অনেক, ফলে এই সময়ে সেই সব কিছু মা হিসেবে সন্তানকে বড় করে তোলা অনেকটা সাহায্য করে। এছাড়াও যেহেতু মহিলারাই সন্তানধারণ করেন ফলে তিনি কবে সন্তানের মা হতে চান তার সম্পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা থাকা উচিত। এমন বয়সে নিজের জীবনের অন্যতম এই বড় সিদ্ধান্ত সমাজে অবশ্যই সেই স্বাধীনতা ও অধিকারের পক্ষে বার্তা দেয়। এছাড়াও মহিলা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পর, নিজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াই যেতে পারে। এতে নিজের স্বপ্ন পূরণও হয়।
আরও পড়ুন: কোভিড, ডেঙ্গু, জিকা- রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা কিন্তু আলাদা, জেনে নিন
এই বয়সে ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যেসও অনেকটা কমে যায় ফলে সন্তানধারণ খুব একটা ঝক্কির হয় না। এর পরও ৩০-এর শেষ বা ৪০- এ যদি কারও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দেয় তা হলে তার জন্য রয়েছে অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজিস (ART)। যা এই বয়সেও যে কাউকে সন্তানধারণে সাহায্য করে।
৩০-এর শেষে বা ৪০ এর শুরুতে প্রেগনেন্ট হওয়ার একাধিক ভালো দিক নিয়ে আলোচনা হল। একাধিক ভালো দিক থাকলেও পূর্বেই বলা হয়েছে খারাপ দিকও রয়েছে। খারাপ বলার চেয়ে এক্ষেত্রে রিস্কের বলা ঠিক হবে। এই বয়সে প্রেগনেন্ট হওয়া কারও কারও ক্ষেত্রে রিস্কের হতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া এবং সন্তান প্রসবের সময় অল্প বয়সের মহিলাদের থেকে অনেক বেশি সমস্যা পড়েন বেশি বয়সের মহিলারা। কারণ, প্রথমত বয়স, তাছাড়াও রয়েছে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি। এই বয়সে বহু মহিলা এমন সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং এটা খুবই কমন। তবে, এটাও ঠিক এই সমস্যা আছে বলেই প্রেগনেন্সিতে সমস্যা হবে তা বলা ভুল। এমন বয়সে প্রেগনেন্ট হতে চাইলে, দেরিতে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে সচেতন থাকতে হবে এবং সন্তানধারণের আগেও সচেতন থাকতে হবে।
সন্তানদের মধ্য়ে মানসিক এবং শারীরিক অস্বাভাবিকতা
৩৭ বছর বয়সের পর থেকেই ডিম্বাণুর সংখ্য়া কমতে শুরু করে। যা DNA ভেঙে দিতে পারে। যার ফলস্বরূপ অনেকে বাচ্চারই ক্রোমোজোমাল অ্যাবনরমালিটি দেখা দেয় এবং বাচ্চারা ডাউন সিনড্রোমে ভোগে। তবে, অনেক এমন পদ্ধতি রয়েছে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে যার দ্বারা সন্তান জন্মের পূর্বেই এই অস্বাভাবিকতা বোঝা যায়।
মিস ক্যারেজের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
এই বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হলে মিস ক্যারেজের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে নিজের অতিরিক্ত যত্ন এই সময়ে নিতে হবে। বেড রেস্টে থাকতে হবে, সঙ্গীকেও যত্নের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। চিকিৎসকের প্রয়োজনে পরামর্শ নিতে হবে।
এই সময় স্টিল বার্থের প্রবণতাও থাকে ফলে নিয়মিত মনিটরিং করা প্রয়োজন বাচ্চার মুভমেন্ট। বিশেষ করে ডেলিভারি ডেট পেরিয়ে যাওয়ার পর। যদি কখনও মনে হয়, বাচ্চা নড়ছে না বা মুভমেন্ট কমে গিয়েছে তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বা যে কোনও হাসপাতালের যে কোনও মেটারনিটি ওয়ার্ডে দেখাতে হবে।
মহিলাদের মানসিক অবস্থার প্রতি নজর
যে সকল মহিলারা দেরিতে সন্তানধারণের কথা পরিকল্পনা করেন এবং দেরিতে মা হওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা যদি স্বাভাবিক উপায়ে মা না হতে পারেন তা হলে একটা মানসিক চাপ থাকে। অনেকে সমাজের চাপও এই সময় মাথায় নিয়ে ফেলেন, যেগুলো একেবারেই উচিত নয়। কারণ এর ফলে অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। এছাড়াও অনেকেই যেহেতু এই সময় শারীরিকভাবে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তাই সেখান থেকেও মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং মানসিক অবসাদ আসতে পারে। যা পরবর্তীকালে বাচ্চাকে বড় করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে বা নিজের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে পারে।
৪০ বছর বয়সে প্রেগনেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা
৪০ বছর বয়সে স্বাভাবিক উপায়ে প্রেগনেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে কারণ ফার্টিলিটি রেট কমতে থাকে। যাঁরা স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান ধারণ করতে পারছেন না তাঁরা ART, IVF, IUI এই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। এই ধরনের আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে এই বয়সে অনায়াসেই একজন সন্তানের জন্ম দিতে পারে।
যদি নিজের ডিম্বাণু কাজ না করে সেক্ষেত্রে যে কোনও দম্পতি ডিম্বাণু দত্তক নিতে পারেন। তবে, এসব বাদ দিলে যেটা সবার প্রথম মাথায় রাখা দরকার তা হল স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চলা, ভালো খাওয়াদাওয়া করা। তা হলে যে কোনও বয়সেই মা হওয়া যেতে পারে। সঙ্গে অবশ্যই প্রতি দিন ব্যায়াম, ব্যালেন্সড ডায়েট করতে হবে। ছাড়তে হবে ধূমপান ও মদ্যপান এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
মা হওয়ার পূর্বে বা সন্তানের পরিকল্পনার পূর্বে নিজের সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের সঙ্গীর কথাটাও ভাবতে হবে কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের সঙ্গে পুরুষরাও এই একই সমস্যায় ভুগতে পারেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।