Molnupiravir Capsule: মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে নামিয়ে আনে! কোভিড নিয়ন্ত্রণে এই ক্যাপসুল এখন গেমচেঞ্জার
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
বলা হচ্ছে, এই ক্যাপসুল হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে নামিয়ে আনে।
#কলকাতা: বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কোভিড-১৯ (Covid-19) অ্যান্টিভাইরাল ক্যাপসুলের (Antiviral Capsule) অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটেন (UK)। আমেরিকার মার্ক অ্যান্ড কো ইনকর্পোরেটেড (Merck) এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস (Ridgeback Biotherapeutics LP) যৌথভাবে এই ক্যাপসুল তৈরি করেছে। এর নাম 'মোলনুপিরাভির' (Molnupiravir)।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এই ক্যাপসুল গেমচেঞ্জার হিসাবে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, এই ক্যাপসুল হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে নামিয়ে আনে।
মোলনুপিরাভির কী?
advertisement
কোভিডে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৫ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। যদিও অতিমারীর শেষ এখনও দেখা যাচ্ছে না। জোরদার চলছে টিকাকরণ। কারণ, এটাই বর্তমানে সুরক্ষিত থাকার সর্বোত্তম উপায়। তবে, করোনাভাইরাসে নতুন প্রজাতির উদয় হলে সমস্যা আবারও বাড়তে পারে। তাই এমন একটি ওষুধের খোঁজ দীর্ঘদিন ধরেই করছিলেন বিজ্ঞানীরা, যা নির্ভরযোগ্যভাবে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিরাময়ের প্রতিশ্রুতি দেয়।
advertisement
আরও পড়ুন- ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ নিয়ে ঘরে থাকলেও করোনা হওয়ার আশঙ্কা, চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা
মোলনুপিরাভির হল কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে পাওয়া প্রথম ওষুধ যা একজন রোগী মুখ দিয়ে খেতে পারেন। মার্ক অ্যান্ড কো ইনকর্পোরেটেড এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস যৌথভাবে এটি তৈরি করেছে। এই ওষুধ করোনায় সংক্রমিত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয় বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
advertisement
৭৭৫ জনের উপরে চালানো হয়েছিল ট্রায়াল। যে সব রোগী কোভিডের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে ওষুধ সেবন করেছিল, সেই সব রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর হার প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। ৭৭৫ জনের মধ্যে মাত্র ৭.৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তবে কারোর মৃত্যু হয়নি। আর বাকি যাদের শুধুমাত্র প্ল্যাসিবো দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ১৪ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এছাড়াও ৮ জনের মৃত্যুও হয়।
advertisement
এটা কী ভাবে কাজ করে?
আরএনএ প্রতিলিপির (RNA Replication ) মাধ্যমে ভাইরাস একজন ব্যক্তিকে সংক্রামিত করার পরে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে। আর এখানেই ওষুধটি ভাইরাসকে ধোঁকা দেয়। ওষুধটি ভাইরাসের প্রতিলিপিগুলিকে একত্রিত করে, অবশেষে এটি সেগুলিকে অক্ষম করে দেয়।
শরীরে ভাইরাসের মাত্রা কম রেখে পিলটি এইভাবে রোগের তীব্রতা কমাতে সক্ষম। মার্ক অ্যান্ড কো ইনকর্পোরেটেড বলেছে, প্রাক-ক্লিনিকাল এবং ক্লিনিকাল ডেটা থেকে জানা গিয়েছে যে ডেল্টার (Delta) মতো কোভিডের সবচেয়ে সাধারণ রূপের বিরুদ্ধে কার্যকর মোলনুপিরাভির।
advertisement
আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক বলেছে যে এই বড়িটি ল্যাগেভরিও নামেও পরিচিত। ব্রিটেনে এই নামে ব্র্যান্ড করা হবে। এটি সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা উচিত উপসর্গ দেখা যাওয়ার পরে। হালকা থেকে মাঝারি কোভিড আক্রান্ত এবং সেই সঙ্গে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো গুরুতর অসুস্থতার মধ্যে একটি অন্তত আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার করা যাবে।
advertisement
সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যাপসুল নেওয়া হলে তা সবচেয়ে কার্যকর হবে। ভাইরাল রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। পাঁচদিন ধরে দিনে দু'বার চারটি করে ওষুধ খেতে হবে। প্রতিদিন আটটি ক্যাপসুল খেতে হবে, যার মধ্যে সকালে চারটি ও রাতে চারটি। অর্থাৎ পাঁচদিনে মোট ৪০টি ক্যাপসুল খেতে হবে।
advertisement
এটা কী ভাবে সাহায্য করবে?
কোভিড নিরাময়ের জন্য এখনও পর্যন্ত ব্যবহৃত সমস্ত প্রধান থেরাপিগুলি দেওয়া হয় শিরার মাধ্যমে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে। যার অর্থ হল একজন রোগীকে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা পেশাদারদের উপর নির্ভর করতে হবে। মোলনুপিরাভিরের ক্ষেত্রে তার দরকার নেই।
রোগী নিজেই ওষুধটি নিতে পারবেন, অন্য ওষুধের মতো। রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস-র সিইও ওয়েন্ডি হোলম্যান (Wendy Holman) বলেছেন, "সংক্রমণ রুখতে বিপুল পরিমাণে এমন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন, যা মানুষ বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন।"
কখন ওষুধটি পাওয়া যাবে?
ফার্মা সংস্থা মার্ক জানিয়েছে যে তারা ঝুঁকির মধ্যে মোলনুপিরাভির তৈরি করছে। চলতি বছরের শেষে ১০ মিলিয়ন ওষুধ তৈরি করার আশা করছে। ওষুধ নিয়ন্ত্রকের থেকে জরুরি অনুমোদন পাওয়ার পর সংস্থাটি ইতিমধ্যেই ১.৭ মিলিয়ন ট্যাবলেট সরবরাহের জন্য মার্কিন সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলির সঙ্গেও তাদের কথা চলছে ওষুধ সরবরাহের জন্য। রোগীদের পাঁচদিন ধরে দিনে দু'বার চারটি করে ওষুধ খেতে হবে।
দাম কত হবে?
এই ওষুধের পুরো কোর্সের দাম কত হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। আর এই বিষয়ে মার্ক বিশদে কিছু জানায়নি। তবে তারা বলেছে যে বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী দেশগুলির আয়ের মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে ওষুধের পুরো কোর্সের মূল্য ঠিক করা করার পরিকল্পনা করছে তারা। সংস্থাটি এটিও বলেছে বিশ্বের সমস্ত অংশে যাতে ওষুধ উপলব্ধ হয়, তা নিশ্চিত করতে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে লাইসেন্সিং চুক্তি করা হবে।
ভারতে কি এই ওষুধ পাওয়া যাবে?
মোলনুপিরাভিরের অনুমোদন দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে ভারত। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মার্কের তৈরি ওষুধটির অনুমোদন দিতে পারে ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI)। কেন্দ্রের কোভিড স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান রাম বিশ্বকর্মা (Ram Vishwakarma) বুধবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন।
চোখ রয়েছে ফাইজারের (Pfizer) তৈরি একই ধরনের ওষুধেও। প্যাক্সলোভিড (Paxlovid) নামের এই ওষুধের ক্ষেত্রে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে। এই দু'টি ওষুধ টিকার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলেও জানিয়েছেন রাম বিশ্বকর্মা। তিনি বলেন, যেহেতু করোনা অতিমারী (Pandemic) পর্যায় থেকে ধীরে ধীরে স্থানীয় স্তরে (Endemic) বদলে যাচ্ছে, ফলে টিকাকরণের থেকেও এই ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।"
ওষুধ দু'টিকে তিনি করোনাভাইরাসের 'কফিনে শেষ পেরেক' বলেও উল্লেখ করেছেন। কোভিড স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান জানান, সম্ভবত আমরা মোলনুপিরাভির পেতে চলেছি। ওষুধ নির্মাতাদের সঙ্গে পাঁচটি সংস্থা আলোচনা করছে। মনে হয়, যে কোনও দিন আমরা মোলনুপিরাভিরের অনুমোদন পেয়ে যাব।
ভারতে এই ওষুধের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্কের এই ওষুধের জন্য নির্ধারিত ৭০০ ডলারের চেয়ে অনেক কম দাম থাকবে ভারতের বাজারে। কারণ উৎপাদনের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন কারণে এটি ব্যয়বহুল। ভারতের বাজারে মোলনুপিরাভিরের দাম হতে পারে প্রতি কোর্স ২, ৩ অথবা ৪ হাজার টাকা। পরে কমে ৫০০, ৬০০ বা ১ হাজার টাকা হতে পারে।
Location :
First Published :
November 13, 2021 5:41 PM IST