Explained: ভারতের আকাশ কী ভাবে সুরক্ষিত রাখবে রাশিয়ান এস- ৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম?
- Published by:Dolon Chattopadhyay
Last Updated:
এই সিস্টেমটিতে মাল্টি-ফাংশন র্যাডার রয়েছে। তাই শুধু মিসাইল নয়, এই প্রযুক্তির সাহায্যে শত্রুর বিমান এবং ড্রোনও ধ্বংস করা যাবে।
#নয়াদিল্লি: সম্প্রতি, রাশিয়া (Russia) জানিয়েছে যে ভারতকে তারা প্রথম এস- ৪০০ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম (S-400 Triumf Defence Systems) পাঠানো শুরু করেছে। এস-৪০০ বর্তমানে বিশ্বের যে কোনও স্থানে মোতায়েন করা সবচেয়ে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি। ড্রোন (Drones) থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইল (Ballistic Missiles), সব কিছুই নিমেষে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই সিস্টেম।
এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম চুক্তি কী?
২০১৮ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে পাঁচটি এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ভারত। যা সেই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। এই এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম রাশিয়ার আলমাজ সেন্ট্রাল ডিজাইন ব্যুরো (Almaz Central Design Bureau) তৈরি করেছে। এই উন্নত মিসাইল সিস্টেমের উন্নয়ন ১৯৯৩ সালে করা হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের (Soviet Union) পতনের পর পরই। এটা আগের এস-৩০০ মিসাইল সিস্টেমের (S-300 Missile Defence System) উন্নত সংস্করণ। ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে বা ২০০০ সালের প্রথম দিকে এই সিস্টেমের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। এবং ২০০৭ সালে প্রথম রুশ বাহিনীতে এস-৪০০ অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৪ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নয়াদিল্লি।
advertisement
advertisement
সিস্টেমের ক্ষমতা কী কী?
এই সিস্টেমটিতে মাল্টি-ফাংশন র্যাডার (Multifunction Radar) রয়েছে। তাই শুধু মিসাইল নয়, এই প্রযুক্তির সাহায্যে শত্রুর বিমান এবং ড্রোনও ধ্বংস করা যাবে। এতে অটোনোমাস ডিটেকশন, টার্গেটিং সিস্টেম, বিমান-বিধ্বংসী মিসাইল ব্যবস্থা, লঞ্চার এবং কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার রয়েছে। এতে রয়েছে তিনটি ভিন্ন ধরনের মিসাইল প্যাক। যা ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় ও ৪০০ কিলোমিটার দূরের যে কোনও লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই মিসাইল সিস্টেম একই সঙ্গে ৩৬টি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে। এই মিসাইল সিস্টেম আগের রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে দ্বিগুণ কার্যকর এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্থাপন করা যেতে পারে।
advertisement
এটি আগের রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে দ্বিগুণ কার্যকর। এটি বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর বিদ্যমান এবং ভবিষ্যত প্রতিরক্ষা ইউনিটে ইন্ট্রিগ্রেড করা যেতে পারে। বহুবিধ লক্ষ্যকে টার্গেট করতে এই মিসাইল সিস্টেম থেকে চার ধরনের মিসাইল নিক্ষেপ করা যায়। প্রথমে রয়েছে 48N6DM মিসাইল, যা ২৫০ কিমি রেঞ্জের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এর পর রয়েছে 40N6, এই মিসাইলের রেঞ্জ ৪০০ কিমি এবং এটি বহু কিমি দূরত্বে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে আটকাতে সক্রিয় র্যাডার হোমিং ব্যবহার করে।
advertisement
তার পরে রয়েছে 9M96E এবং 9M96E2 মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ মিসাইল, যা দ্রুত গতিশীল লক্ষ্যবস্তু, যেমন যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করে দিতে পারে। 9M96 মিসাইলের রেঞ্জ হল ১২০ কিমি। আরেকটি মিসাইল 77N6-এর বর্তমানে পরীক্ষা চলছে, যার একটি হিট-টু-কিল (Hit-to-kill) ক্ষমতা ব্যালিস্টিক মিসাইল ওয়ারহেড ধ্বংস করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। 'হিট-টু-কিল' বলতে গতিশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি লক্ষ্যকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা বোঝায়। অর্থাৎ, এই অস্ত্র বিস্ফোরক বহন করার পরিবর্তে উচ্চ বেগে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে সেটিকে ধ্বংস করে দেয়।
advertisement
অন্য মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের থেকে এটা কী ভাবে আলাদা ?
Globalsecurity.org-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এস-৪০০ সম্ভবত রাশিয়ার থিয়েটার ও এয়ার মিসাইল ডিফেন্সের মূল ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে। আর এই সিস্টেম ক্লোজ-রেঞ্জ, মিড-রেঞ্জের পাশাপাশি লং-রেঞ্জ জোনেও প্রতিরক্ষা দেবে। রাশিয়া দাবি করেছে যে সামর্থ্যের দিক থেকে এস-৪০০-কে টক্কর দেওয়ার মতো আর কোনও মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বিশ্বে নেই। এমনকী আমেরিকার টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (THAAD)-এর পাল্লা এস-৪০০-র থেকে কম। আমেরিকার এই মিসাইল সিস্টেম দিগন্তের বাইরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে অক্ষম। এটি শুধুমাত্র একটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেম, যা আকাশ থাকা অন্য লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করতে পারে না। এস-৪০০-র আরেকটি বহুল আলোচিত ক্ষমতা হল 'ফায়ার-এন্ড-ফরগেট ক্ষমতা', যাতে একটি হোমিং ডিভাইজের সঙ্গে মিসাইল লাগানো হয়, যা একটি লক্ষ্যবস্তুকে নির্দিষ্টভাবে লক করে ধ্বংস করে।
advertisement
রাশিয়ান সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেছে যে এস-৪০০ মার্কিন (USA) সিস্টেমের থেকে দূরে ও উচ্চতায় ব্যবহার করা যায়। যদিও এটি সর্বোচ্চ ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে মিসাইল নিক্ষেপ করতে পারে। এটি ২৭ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকা বস্তুকে টার্গেট করতে পারে। এটি ভূমি থেকে ১০ মিটার উচ্চতায় ক্রুজ মিসাইল বা শত্রুপক্ষের যে কোনও বিমানকে ধ্বংস করতে সক্ষম। আর এখানেই অন্যদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে রাশিয়ার এই ডিফেন্স সিস্টেম। এই বছরের শুরুর দিকে একটি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ORF) রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি সত্ত্বেও ভারতের জন্য দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের কোনও বিকল্প নেই। এতে বলা হয়েছে যে এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের ক্ষমতা পশ্চিমি সিস্টেমগুলির সঙ্গে তুলনা করা যায় না। পশ্চিমি মিসাইল সিস্টেমের প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া এস-৪০০ অনেক কার্যকরী।
advertisement
কোন কোন দেশের হাতে এস-৪০০ আছে?
ভারত ছাড়াও বেলারুশ, আলজেরিয়া, চিন এবং তুরস্ক সহ কয়েকটি মুষ্টিমেয় দেশের কাছেই এই সিস্টেমটি বিক্রি করেছে মস্কো। ২০১৫ সালে আলজেরিয়া এস-৪০০ কেনে। ২০১৬ সালে কেনে রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুশ। চিন ২০১৮ সালে দু'টি সিস্টেম কেনে। ২০১৯ সালে তুরস্ক তার প্রথম ব্যাটেলিয়ন পায়। অন্য দেশকে অস্ত্র বিক্রি থেকে রাশিয়াকে রুখতে ২০১৭ সালে কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভার্সারিস থ্রু স্যাংশন অ্যাক্ট (CAATSA) নিষেধাজ্ঞা আইন আনে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসন। যার আওতায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা খাতের সঙ্গে কোনও দেশ জড়িত হলে সেই দেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। এই আইনের বলেই উত্তর কোরিয়া ও চিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তবে, বেলারুশ ও আলজেরিয়া CAATSA-এর অধীনে নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। কারণ, তারা আইন আনার আগেই এস-৪০০ সিস্টেম সংগ্রহ করেছিল। ভারতও যুক্তি দেয় যে তারা এই মিসাইল সিস্টেম কেনার জন্য ২০১৬ সালে আলোচনা শুরু করে। তাই, তারা CAATSA-র অধীনে নিষেধাজ্ঞার যোগ্য নয়।
এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কিনলেও ভারতের উপর যেন নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনকে (President Joe Biden) চিঠি লিখে এই সওয়াল করেছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সেনেটর মার্ক ওয়ার্নার (Mark Warner) এবং রিপাবলিকান পার্টির সেনেটর জন কর্নিন (John Cornyn)।
Location :
First Published :
November 21, 2021 9:41 AM IST