Weight Loss: দিনের মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা উপোস, আদৌ তরতরিয়ে কমবে ওজন
- Published by:Debalina Datta
Last Updated:
Explained: যদিও এই ধরনের ডায়েট নতুন নয়, বহু বছর আগে থেকেই চলে আসছে।
#কলকাতা: আধুনিক শহুরে জীবনযাত্রায় ক্রমেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছে মানুষ। সকাল থেকেই সামিল হতে হয় ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায়। আর কোভিড পরিস্থিতিতে তো কথাই নেই! সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ-অফিস। ফলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইন ক্লাসের জন্য ঘরে বসেই সারতে হচ্ছে সমস্ত কাজ। এর ফলে শারীরিক কসরত প্রায় হচ্ছেই না। আগে যেমন ট্রেন-বাস-ট্রামের ভিড় ঠেলে অফিস-কাছাড়ি অথবা স্কুলে পৌঁছতে হত, তাতে কিছুটা হলেও শারীরিক কসরত হত। হাঁটাচলারও অভ্যেস থাকত। কিন্তু বাড়ি থেকে কাজের জেরে সেইটুকুও হচ্ছে না। তার উপর লকডাউন এবং সংক্রমণের আশঙ্কায় মাঝে মাঝেই জিম অথবা যোগাসনের ক্লাস, পার্ক প্রভৃতি বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে ঘরে এক জায়গায় বসে একটানা কাজ করার ফলে সে রকম শারীরিক কসরতও হচ্ছে না। তাই ওজন বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগছেন বেশির ভাগ মানুষই। যার জেরে বাড়ছে জীবনধারা সংক্রান্ত নানান ধরনের সমস্যা। আর ওজনের সঙ্গে তাল পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাইফস্টাইল সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম রোগও। তাই সবার আগে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর ওজন কমানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং হাঁটা-চলা, ব্যায়াম প্রভৃতি অত্যন্ত কার্যকর।
ওজন বাগে আনার জন্য অনেকেই ডায়েটিংয়ের পথ অবলম্বন করে থাকেন। এ দিকে আবার ডায়েটেরও (Diet) একাধিক ধরন রয়েছে। যার মধ্যে ইদানীং কালে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (Intermittent Fasting)। বহু মানুষই ওজন ঝরিয়ে শেপ বজায় রাখতে এই ধরনের ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন। যদিও এই ধরনের ডায়েট নতুন নয়, বহু বছর আগে থেকেই চলে আসছে। আসলে বর্তমানে এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণও রয়েছে। এই ধরনের ডায়েটে খাবারের ক্ষেত্রে কোনও রকম বিধিনিষেধ থাকে না। যে কোনও রকম খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট যেমন- কেটো ডায়েট অথবা লো-কার্ব ডায়েটের সঙ্গেও এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং মেনে চলা যায়। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে দিনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে যা যা খাবার শরীরের জন্য প্রয়োজন, তা খেয়ে নিতে হবে। আর বাকি সময়টা অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা খাবার খাওয়া থেকে বিরতি নিতে হবে। আরও সহজ ভাবে বলতে গেলে, বাকি সময়টা উপোস (Fasting) করে কাটাতে হবে। আসলে উপোস করার চল অনেক প্রাচীন কাল থেকেই রয়েছে। তবে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের এই প্রক্রিয়া বেশ নিরাপদ হলেও এটা সবার জন্য নয়। এমনটাই জানাচ্ছেন লাইফস্টাইল এবং ওয়েলনেস কোচ লিউক কুটিনহো।
advertisement
advertisement
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কী?
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই উপোস করার সহজ পথ অবলম্বন করেন। এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হল, উপোস করার সেই সাবেক নিয়মেরই পরিবর্তিত রূপ। এটা আসলে খাবার খাওয়া এবং উপোস করার একটা চক্র। গোটা একটা দিনে বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা খাবার খেতে হবে আর উপোস করতে হবে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা। অর্থাৎ খাওয়া এবং উপোসের নিরিখে দিনকে দু'টো ভাগে ভাগ করে দিতে হয়। যাঁরা এই ডায়েট প্যাটার্ন মেনে চলছেন, খাবার খাওয়ার সময় তাঁদের দিনের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। আর দিনের বাকি অংশটায় সম্পূর্ণ ভাবে উপোস করে থাকতে হবে। এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে নিজের সুবিধামতো বিভিন্ন রকম ভাবে সময় ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। যেমন- ১৬ / ৮ অথবা ১৪ / ১০। শুধু তা-ই নয়, এক দিন অন্তরও এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং পদ্ধতি ফলো করা যেতে পারে। এই ধরনের অভ্যেস মেনে চলার অনেক উপকারও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং শরীরও ভালো থাকে।
advertisement
কেন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সবার জন্য নয়?
বেশির ভাগ মানুষই এই ডায়েট প্যাটার্ন ফলো করতে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করেন না আর। শুধু তা-ই নয়, তাড়াতাড়ি ডিনারও সেরে ফেলেন। কিন্তু লিউক জানাচ্ছেন, ব্রেকফাস্ট না-করা একেবারেই ঠিক নয়। আর এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফলে যাঁরা দিনের প্রথম মিল বা ব্রেকফাস্ট স্কিপ করছেন, তাঁরা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলেও কোনও ফল পাবেন না। আসলে ব্রেকফাস্ট দিনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার বা মিল। সকালে উঠেই স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার ব্রেকফাস্টে খেলে মেটাবলিজম বাড়ে এবং এটা এনার্জিও দেয় শরীরকে। এখানেই শেষ নয়, ভালো ব্রেকফাস্ট সারা দিন ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করে থাকে। কেউ কেউ অবশ্য ব্রেকফাস্ট না-করেও ভালো ফল পেয়ে থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন। এই বিষয়ে লিউক কুটিনহোর বক্তব্য, “প্রত্যেকটা মানুষের উচিত নিজের শরীরের কথা শোনা। শরীর কী চাইছে, সেই বুঝে তবেই খাওয়াদাওয়া অথবা কাজ করা উচিত।”
advertisement
লিউক কুটিনহোর পরামর্শ:
লিউক সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রাম (Instagram) হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “আমি এমন অনেক সুস্থ মানুষকে দেখেছি, যাঁরা ব্রেকফাস্ট করেন, আবার এমন সুস্থ মানুষও আছেন, যাঁরা ব্রেকফাস্ট করেন না। তাই বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে বেরিয়ে আসা উচিত এবং নিজের শরীর যা চাইছে, সেটা করাই শ্রেয়। অনেকেই আছেন, যাঁরা নিয়মের গেরোয় থেকে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেন ঠিকই। কিন্তু সেটা বেশি দিন ধরে রাখতে না-পেরে আবার খুব সহজেই হতাশ হয়ে পড়েন।”
advertisement
তিনি আরও বলেন যে, কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁদের সকালে প্রচণ্ড খিদে পায় আর তার জেরে তাঁরা প্রচণ্ড তিতিবিরক্ত হয়ে থাকেন। এমন হলে খাবার খেতে হবে। না-হলে গোটা দিনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আগের দিন রাতে যদি কেউ দেরিতে খেয়ে থাকেন, তা হলে সে ক্ষেত্রে হয় তো তাঁর পরের দিন সে রকম খিদে পাবে না। ফলে সকাল ১০টার পর ব্রেকফাস্ট করতে হবে। আর যাঁরা আগের দিন সূর্যাস্তের আগেই ডিনার করে থাকেন, তা হলে তাঁদের সকালে প্রচণ্ড খিদে পেয়ে যাওয়ার কথা। তাই লিউকের পরামর্শ, “কারও নিজের যা মনে হচ্ছে, সেই অনুযায়ী দিনের খাদ্যাভ্যাসের পরিকল্পনা বানাতে হবে। অর্থাৎ যাঁর খিদে পেয়েছে, তিনি খাবেন আর না-হলে অপেক্ষা করতে হবে।”
advertisement
সব শেষে এটাই বলা যায় যে, ইন্টারমিটেন্ট ডায়েট একটি অত্যন্ত নিরাপদ এবং কার্যকরী ডায়েট প্ল্যান। রুটিনমাফিক এই অভ্যেস মেনে চললে নিঃসন্দেহে ওজন ঝরবে এবং শরীরও ভালো থাকবে। যদিও এই খাদ্যাভ্যাস সবার শরীরে সমান ভাবে কাজ করবে না। আসলে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা, ফলে সবার শরীরের ধরন এক রকম হয় না। কোনও এক জনের শারীরিক অবস্থা অথবা শারীরিক প্রয়োজন- সবটাই অন্যের তুলনায় ভিন্ন হয়। তাই অন্যের শরীরের ক্ষেত্রে ইন্টারমিটেন্ট ডায়েট প্ল্যান ভালো কাজ করছে মানেই আমার শরীরের জন্যও ভালো কাজ করবে, এমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। তাই নিজের শরীর যেটা চাইছে, সেটাই করতে হবে।
Location :
First Published :
November 09, 2021 5:17 PM IST