No Cost EMI: নো-কস্ট বললেও ইএমআই-এর বিজ্ঞাপনের আড়ালেই লুকনো রয়েছে চার্জ, বিষয়টি ঠিক কী?
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
বাস্তবে, কিছু অতিরিক্ত চার্জও ধরা হয় ইএমআই-র মধ্যে। আর পুরোটাই পরিশোধ করতে হয় গ্রাহককে।
#কলকাতা: শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের মরসুম। আর উৎসবের মরসুম মানেই দেদার কেনাকাটা। যেন সারা বছরের কেনাকাটা এই সময়ে করার তাগিদ। উৎসবের মরসুমে শুধু বিভিন্ন দোকান, ব্র্যান্ড বা ই-কমার্স কম্পানি নয়, ব্যাঙ্কগুলিও নানা অফার দেয়।
উৎসবের মরসুমে খুচরো বিক্রেতা এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি ল্যাপটপ, ফোন, রেফ্রিজারেটর এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য নো-কস্ট ইএমআই-এর (No Cost EMI) বিজ্ঞাপন দেয়। এটি অবশ্যই এমন ক্রেতাদের জন্য একটি লাভজনক বিকল্প, যারা এই আইটেমগুলি কিনতে চাইছে। কিন্তু কেনার জন্য ওই সময়ে হাতে পর্যাপ্ত নগদ নেই। তাই তাদের জন্য বিনা খরচে এই স্কিমটি একটি বিকল্প তো বটেই!
advertisement
এই ধরনের ইএমআই সাধারণ ইএমআই-র (EMI) থেকে আলাদা। যাই হোক, এই ধরনের পেমেন্ট মোডের ক্ষেত্রে গ্রাহক মনে করে যে সে একটি পণ্য কিনছে, যার মূল্য আগামীদিনগুলিতে মিটিয়ে যেতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত কোনও অর্থ দিতে হবে না। বাস্তবে, কিছু সুদের উপাদান এবং অতিরিক্ত চার্জও ধরা হয় ইএমআই-র মধ্যে। আর পুরোটাই পরিশোধ করতে হয় গ্রাহককে।
advertisement
advertisement
আমাদের প্রথমে জানতে হবে ইএমআই কি? ইএমআই বা সমমানের মাসিক কিস্তি হল ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতিমাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে ঋণের কিছু অংশ ও বকেয়া টাকার সুদ হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঋণদাতাকে ফেরত দেওয়া।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, ইএমআই হল একটি সুবিধা, যাতে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি গ্রাহকদের তাৎক্ষণিক নগদের চাহিদা পূরণের জন্য ঋণ দেয়। তার পরে একটি নির্দিষ্ট সুদের হারে ঋণ কিস্তিতে কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়। গ্রাহককে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ইএমআই দিতে হয়।
advertisement
ইএমআই-র মূল ভিত্তিগুলি কী কী?
ঋণের পরিমাণ: এটার ভিত্তিতেই ইএমআই কত হবে, তা ঠিক হয়। গ্রাহক কতটা ঋণ করতে চাইছে তার উপর নির্ভর করে ইএমআই পরিমাণ হিসেব করা হয়। ওই হিসেব অনুযায়ী প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়। ঋণের পরিমাণ বেশি হলে ইএমআই বৃদ্ধি পাবে।
সুদের হার: মূল ঋণ ছাড়াও সুদের হারে উপরে নির্ভর করে ইএমআই।
ঋণের সময়কাল: ঋণের মেয়াদ সেই সময়কে বোঝায় যার মধ্যে সুদ সহ পুরো ঋণ পরিশোধ করতে হয়। যদি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ে, তবে বেশি ইএমআই দিতে হবে।
advertisement
নো-কস্ট ইএমআই ঠিক কী?
নো-কস্ট ইএমআই অপশন হল এমন একটি অপশন যার দ্বারা কোনও ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই বাজার থেকে একটি ব্যয়বহুল জিনিস কেনা যায়। পরিবর্তে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়, যেমন ভাবে নিয়মিত ইএমআই দেওয়া হয়। নো-কস্ট ইএমআই স্কিমের অধীনে কোনও পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকের উপর কোনও সুদ ধার্য করা হয় না। এর অর্থ হল গ্রাহককে কিস্তিতে কিস্তিতে পণ্যের প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যাকে ইএমআই (মাসিক কিস্তি) বলা হয়।
advertisement
আরও পড়ুন- ট্যাক্স বাঁচাতে কোথায় বিনিয়োগ করবেন? জেনে নিন!]
নো-কস্ট ইএমআই হল খুচরা বিক্রেতা, ব্যাঙ্ক এবং গ্রাহকের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক। তিন পক্ষই এই স্কিম থেকে উপকৃত হয়। নো-কস্ট ইএমআই ব্যবহার করে গ্রাহক ব্যয়বহুল পণ্য কিনতে পারে এবং এর জন্য কোনও অতিরিক্ত সুদ ছাড়াই মাসিক কিস্তিতে টাকা মেটানো যায়। নো-কস্ট ইএমআই স্কিমের অধীনে ব্যাঙ্ক আয়ের একটি নতুন উৎস পায় এবং খুচরা বিক্রেতা তার মার্জিনের একটি অংশের ভাগ দেয় ব্যাঙ্ককে। অন্য দিকে, খুচরা বিক্রেতার ব্যয়বহুল পণ্যের বিক্রি বাড়ে। কারণ এই স্কিমে গ্রাহকদের কেনার ক্ষমতা বেড়ে যায়, যেহেতু কেনার সময় নগদ দিতে হচ্ছে না।
advertisement
এটা কী ভাবে কাজ করে?
মনে রাখতে হবে যে এই নো-কস্ট ইএমআই স্কিমের জন্য সব সময় একটি খরচ বহন করতে হয়। বেশিরভাগ অফলাইন এবং অনলাইন খুচরা বিক্রেতারা নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে, যারা পণ্য কেনার জন্য উপভোক্তাদের ঋণ দেয়। যদিও এগুলি নো-কস্ট ইএমআই হিসাবে বিজ্ঞাপন করা হয়। তবে, এতে প্রকৃত সুদের হার সাধারণত ১৬ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যে থাকে, যা একটু বেশিই।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India) ২০১৩ সালে তার সার্কুলারে বলেছিল যে শূন্য শতাংশ সুদের ধারণার কোনও অস্তিত্ব নেই। আদতে, শূন্য শতাংশ ইএমআই স্কিমগুলিতে সুদের উপাদান প্রায়ই লুকিয়ে থাকে। প্রসেসিং ফি হিসাবে গ্রাহকদের কাছে তা নেওয়া হয়।
নো-কস্ট ইএমআই অপশন স্কিমে গ্রাহকদের জন্য দু'টি বিকল্প রয়েছে। এক- ইএমআই সুদের সঙ্গে ডিসকাউন্ট মিলিয়ে দেওয়া এবং বিল্ট ইন ইন্টারেস্ট। প্রথমটিতে খুচরো বিক্রেতা কোনও গ্রাহককে ছাড় দেয় না এবং পণ্য সম্পূর্ণ দামে নো-কস্ট ইএমআই স্কিম সহ বিক্রি করে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনও গ্রাহক ১৫ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন কিনতে চাইছে এবং সে ১০ শতাংশ ছাড়ে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে চাইছে। তাহলে বিক্রেতা নো-কস্ট ইএমআই স্কিমে গ্রাহককে ছাড় দেয় না এবং পরিবর্তে গ্রাহককে নো কস্ট ইএমআই ট্যাগের আওতায় মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে পুরো মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ দেয়। তবে সেই সুযোগ দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
বিল্ট ইন ইন্টারেস্ট: কখনও কখনও খুচরা বিক্রেতারা পণ্যের প্রকৃত মূল্যে সুদের হার ধার্য করে এবং ফ্লেক্সিবল পেমেন্ট অপশনের সুবিধা নিতে নো-কস্ট ইএমআই-এর বিকল্প দেয়। উদাহরণস্বরূপ, খুচরো বিক্রেতা ১৫ হাজার টাকার একটি মোবাইল গ্রাহককে নো-কস্ট ইএমআই স্কিমে বেচতে চাইছে। এখানে ইএমআই-র পরিমাণ ব্যাঙ্কের ঠিক করা সুদের হারের উপর নির্ভর করে। এখানে খুচরো বিক্রেতা ওই পরিমাণ মূল্য যোগ করবে। ধরা যাক, তাতে ফোনের দাম দাঁড়াল ১৬ হাজার ৫০০ টাকা (১৫,০০০+১,৫০০)। এই ভাবে, গ্রাহককে নো-কস্ট ইএমআই ট্যাগের অধীনে মোবাইলের দাম ১৬ হাজার ৫০০ টাকা মাসিক কিস্তিতে শোধ করতে হবে।
নো-কস্ট ইএমআই-এর সুবিধা: নো-কস্ট ইএমআই গ্রাহককে ব্যয়বহুল পণ্য কেনার সময় নগদ না থাকলেও অন্য বিকল্প দেয়। যাদের নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক উপার্জন আছে, তারা এই স্কিম ব্যবহার করে ব্যয়বহুল পণ্য কিনে থাকে।
নো-কস্ট ইএমআই-র নেতিবাচক দিক: যে কোনও স্কিমের মতোই নো-কস্ট ইএমআই-র বিভিন্ন শর্তাবলী রয়েছে। সব খুচরা বিক্রেতা এবং ব্যাঙ্ক নো-কস্ট ইএমআই পরিষেবা দেয় না। আসলে, এই ধরনের অফার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যয়বহুল পণ্যের জন্য প্রযোজ্য।
ক্রেডিট কার্ড থাকলেই কিছু স্কিম প্রযোজ্য হবে। কোনও কিছু কেনাকাটার জন্য গ্রাহককে প্রসেসিং ফি দিতে হতে পারে। ব্যাঙ্কগুলিও লেনদেনের জন্য পরিষেবা কর এবং অন্যান্য করও নেয়। যদি পণ্যটি কিনে তা আবার ফেরত দেওয়া হয়, তবে গ্রাহক সুদ বাদ দিয়ে টাকা ফেরত পায়। সময়মতো ইএমআই না দিলে আবার ক্রেডিট স্কোরও প্রভাবিত হবে। তাতে আগামী দিনে ঋণ না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
Location :
First Published :
October 07, 2021 1:02 AM IST