EXPLAINED: কোভিড-যুদ্ধে ঝুঁকিপ্রবণ এই জিনটিই ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের, আশঙ্কার মুখে ভারত!
- Published by:Raima Chakraborty
Last Updated:
ভারত এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য এই গবেষণা রিপোর্ট একেবারেই স্বস্তির হাওয়া বয়ে আনছে না! (Coronavirus)
#কলকাতা: দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারীদের শরীরে এমন একটা জিন (Gene) রয়েছে, যার কারণে এই কোভিড পরিস্থিতিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই জিন দক্ষিণ এশীয় (South Asia) বংশোদ্ভূতদের জন্য কোভিডের (Covid 19) ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে। অর্থাৎ ঝুঁকির মুখে রয়েছে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশ! এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফলে ভারত এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য এই গবেষণা রিপোর্ট একেবারেই স্বস্তির হাওয়া বয়ে আনছে না!
সম্প্রতি ব্রিটিশ গবেষকদের এক সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার বংশোদ্ভূত বেশির ভাগ মানুষের শরীরে মিলেছে এক ধরনের জিন। যার জেরে তাদের মারাত্মক কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। ব্যাপারটিকে আরও সহজ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ওই গবেষকরা। তাঁদের দাবি, ব্রিটেনে যখন ভয়াবহ হারে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, তখন দেখা গিয়েছিল যে, উপমহাদেশের মানুষই তুলনামূলক ভাবে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে করোনা সংক্রান্ত জটিলতাতেও ভুগেছিল। আর তাই মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির নিরিখে এগিয়েছিল উপমহাদেশের মানুষেরাই। শুধু তা-ই নয়, আরও অনেক বিষয় রয়েছে। যা করোনার জটিল কেসগুলির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
advertisement
আরও পড়ুন: আসছে শীতের মরশুম, ফ্লু-র টিকা কি কোভিড সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে পারবে?
এই জিনটা আদতে কী?
advertisement
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ওই জিনটিকে ইতিমধ্যেই শনাক্ত করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, তুলনামূলক ভাবে কম আলোচিত হওয়া এই জিনটির নাম এলজেডটিএফএল১ (LZTFL1)। আর এই জিনটির কারণেই কোভিডে আক্রান্তদের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় এবং রেসপিরেটরি ফেলিওর হওয়ার সম্ভাবনাও এর কারণে দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
advertisement
গবেষণার রিপোর্ট বলছে, এই ঝুঁকিপ্রবণ জিনের কারণে ফুসফুস এবং বায়ুপথের আস্তরণ হিসেবে থাকা কোষগুলি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। আর চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এই জিন পাওয়া গিয়েছে ৬০ শতাংশ দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষের শরীরে। সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ পাওয়া গিয়েছে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের শরীরে। তাই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার জন্য ওই জিনকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গোড়ার দিকে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল, যা রীতিমতো মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। দিকে দিকে ছিল অক্সিজেন এবং হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার। মৃত্যুর হারও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অন্য দিকে আবার ব্রিটেনে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় দেখা গিয়েছিল যে, মারাত্মক ভাবে করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দক্ষিণ এশীয়রা। তাদের ক্ষেত্রে রোগের জটিলতা ছিল তুলনামূলক ভাবে বেশি। আর এই সব কিছুর পিছনে হাত ছিল ওই জিনেরই, এমনটাই দাবি করেছেন গবেষকেরা। রিপোর্ট বলছে, এই জিনটি একটা ট্রিগারের মতো কাজ করে কি ডিফেন্স মেকানিজমকে সক্রিয় করে তোলে। যার জেরে ফুসফুসের উপরে আস্তরণ হিসেবে থাকা কোষগুলির মধ্যে কোভিড-১৯ ভাইরাস ঢুকে পড়তে পারে না। কিন্তু এই জিনের ঝুঁকিপ্রবণ সংস্করণ নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ খর্ব করে এবং যার কারণে কোভিড সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পড়ে। আর এর ফলে করোনা ভাইরাস ফুসফুসের কোষে ঢুকে পড়ে এবং তার পরে অনেকটা সময় ধরে মারাত্মক ক্ষতি করে দেয়। আর এই ক্ষতি হয় দীর্ঘমেয়াদী।
advertisement
এই গবেষণার রিপোর্ট কী ভাবে সাহায্য করতে পারে?
বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যেই অনেক গবেষণা হয়েছে, আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে, মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে জেনেটিক লেভেল-সহ আরও নানা বায়োলজিক্যাল বা জৈবিক পার্থক্য রয়েছে। যার থেকে বোঝা যায় যে, পুরুষ এবং মহিলা- দু’ক্ষেত্রেই কোভিড সংক্রমণে সমান ভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ থেকে মারাত্মক জটিলতা এবং মৃত্যুর প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছে।
advertisement
ইউকে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (UK Research and Innovation / UKRI) জানাচ্ছে যে, ধরা যাক, দু’টি মানুষের জিনোম ৯৯.৯ শতাংশ সমান, কিন্তু বাকি পড়ে থাকে ০.১ শতাংশ। আর সেই বাকি পড়ে থাকা অংশটাই তফাৎ তৈরি করে দেয়। আর এই তফাৎ থেকে বোঝা যায় যে, কোনও নির্দিষ্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক-একটা মানুষের ক্ষমতা এক-এক রকম হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: শিশুরা করোনার সুপারস্প্রেডার হতে পারে, কেন এমন বলছে সমীক্ষা?
ওই গবেষণার সহ-প্রধান জেমস ডেভিস জানাচ্ছেন, যদিও আমরা নিজেদের জেনেটিক্স বদলে ফেলতে পারি না। তবুও গবেষণার রিপোর্ট দেখে এটুকু বলতে পারি যে, “যাঁদের দেহে ঝুঁকি প্রবণ জিন রয়েছে, টিকাকরণ হলে তাঁদের ঝুঁকির মাত্রা অনেকটাই কমে যাবে।”
করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু কি জিনের মাধ্যমে বোঝা যাবে?
advertisement
ব্রিটেনে শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয়রাই বিশ্বব্যাপী মহামারির কোপে পড়েছিল, এমনটা নয়। তার পাশাপাশি, ব্রিটেনের কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু এথনিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও মৃত্যুহার ছিল উপরের দিকেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আফ্রিকান-ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত শুধুমাত্র ২ শতাংশ মানুষ এবং পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত ১.৮ শতাংশ মানুষের মধ্যেও এই জিনটি পাওয়া গিয়েছে। ফলে এদের ক্ষেত্রে উচ্চ মৃত্যুহারের জন্য জেনেটিক ফ্যাক্টরকে পুরোপুরি ভাবে দায়ী করা যায় না।
রিপোর্ট বলছে, ইংল্যান্ডে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ জনসংখ্যার নিরিখে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল প্রায় তিন-চার গুণ। আবার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল আড়াই থেকে তিন গুণ। আর সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল দেড় থেকে দ্বিগুণ।
শুধু তা-ই নয়, আর্থ-সামাজিক দিকটাও খতিয়ে দেখেছেন ওই গবেষকরা। তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন, কোভিডের ক্ষেত্রে এই আর্থ-সামাজিক বিষয়টারও প্রভাব রয়েছে। ডেভিস জানাচ্ছেন, “কৃষ্ণাঙ্গ এবং সংখ্যালঘু এথনিক সম্প্রদায়ের মধ্যেই সাধারণত ঝুঁকি প্রবণ ডিএনএ কোড পাওয়া যায়। কিন্তু অন্যদের মধ্যে তা পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু সম্প্রদায় যে মারাত্মক ভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল, তার পিছনে অবশ্য প্রকট হয়ে উঠেছে আর্থ-সামাজিক কারণটাই।”
আরও পড়ুন: শীতের শুরুতেই ভাইরাল জ্বর? দ্রুত মুক্তি পাবেন কী ভাবে? এই পদক্ষেপগুলি জরুরি...
view commentsকোভিড-১৯ কেসের ক্ষেত্রে বিশ্বে আমেরিকার পরেই রয়েছে ভারতের স্থান। আর মৃত্যুর নিরিখে ভারত রয়েছে তৃতীয় স্থানে। আমেরিকা ও ব্রাজিলের পরেই রয়েছে ভারত। জনসংখ্যার অনুপাতে ভারতের কোভিড কেস আমেরিকার তুলনায় অনেকটাই কম রয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। গত ৩ নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে যে, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার প্রতি দশ লক্ষের মধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোভিড কেস দেখা গিয়েছে। সেখানে সেই নিরিখে ভারতে ২৫ হাজার কেস দেখা যায়। আর কোভিড মৃত্যুর ক্ষেত্রে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে প্রতি দশ লক্ষে মারা গিয়েছে ২০০০ মানুষ। ওই হিসেবের নিরিখে সেখানে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৩০।
Location :
First Published :
November 10, 2021 6:00 PM IST

