Flu Shot To Prevent Covid-19: আসছে শীতের মরশুম, ফ্লু-র টিকা কি কোভিড সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে পারবে?
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
কঠোর কোভিড বিধি গত বছর ফ্লু হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করেছিল।
#কলকাতা: এই মুহূর্তে কোভিড টিকা দেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই ফ্লু টিকা (Flu Vaccine) দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্লু ও কোভিড সংক্রমণের কারণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই টিকা নেওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্লু ও কোভিড, দু'টিই শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতায় পরিণত হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাল সংক্রমণ। সম্প্রতি, ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনের কারণে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। যেমন ডেঙ্গু, সোয়াইন ফ্লু, সাধারণ জ্বর ইত্যাদি।
আরও পড়ুন- ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে অ্যালকোহল! জানুন কারণ
প্রতি বছরই সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই ধরনের রোগ দেখা দেয়। যেহেতু এই সময়ে ঋতু ও আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়, সে কারণে এই রোগগুলির প্রাদুর্ভাব ঘটে। তবে, নির্দিষ্ট সময় পর নিজে থেকেই এই রোগগুলি চলে যায়।
advertisement
advertisement
আমাদের আশপাশে অনেকেই ফ্লু-তে (Flu) আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যে-ই কোভিড সম্পর্কে একটু কম চিন্তিত হতে শুরু করেছি, ঠিক সেই সময় ফ্লু-র বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
সাধারণত শীতকালে এবং বর্ষার শেষে ফ্লু-র প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সাধারণ সর্দি-জ্বর ও ফ্লু-র উপসর্গ একইরকম হওয়ায় মানুষ অনেক সময় দু'টির পার্থক্য করতে পারে না।
আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ ফ্লু'তে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ বিশ্বে প্রতিব ছর প্রায় একশো কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয় তিন-পাঁচ লাখ মানুষের।
advertisement
ফ্লু-র উপসর্গগুলি কী কী?
সাধারণ উপসর্গ: জ্বর এবং ঠাণ্ডা লাগা, কাশি, গলা ব্যথা এবং নাক দিয়ে সর্দি ঝরা বা বন্ধ নাক, পেশিতে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়া।
গুরুতর উপসর্গ: শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, বুকে ব্যথা, বিভ্রান্তি বা মাথা ঘোরা, অনবরত বমি ইত্যাদি।
advertisement
কারা কারা এই রোগে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে?
সব বয়সের মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হয়। তবে, ৬ মাস থেকে ৫ বছরের মধ্যে শিশু, গর্ভবতী মহিলা, ৬৫ বছর বা তার বেশ বয়সের ব্যক্তি, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ক্যানসার, ইমিউনোসাপ্রেশন ইত্যাদির মতো রোগে ভোগা মানুষ বেশি আক্রান্ত হন।
ফ্লু প্রতিরোধের ব্যবস্থাও কি কোভিডের ঝুঁকি কমাতে পারে?
advertisement
ফ্লু এবং কোভিড টিকা উভয়ই বিভিন্ন ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে । তা সত্ত্বেও, এটি দীর্ঘ দিন ধরে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। যেমন কঠোর কোভিড বিধি মেনে চলার কারণে তা গত বছর ফ্লু হওয়ার ঝুঁকি কমতে সাহায্য করেছিল।
ঠিক সেই ভাবেই সময় মতো ফ্লু-র টিকা নেওয়া থাকলে নির্দিষ্ট কয়েকটি কোভিড উপসর্গের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ হয়। রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এই সত্যটি এখন সবাই স্বীকার করছে যে এমন অনেকেই আছে যারা কোভিড টিকা নেয়নি বা একটি টিকা নিয়েছে। তাই আমরা আসন্ন শীতকালে ফ্লু-কোভিড উভয় সংক্রমণ বৃদ্ধি দেখতে পাব।
advertisement
ফ্লু-র টিকা কি সংক্রমণের তীব্রতা ও ঝুঁকি কমাতে পারে? গবেষকরা কী বলছেন?
সব চেয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা, যা মেডিক্যাল জার্নালে PLOS-এ প্রকাশিত হয়েছে। এই সমীক্ষা ৩৭ হাজার জনেরও বেশি রোগীর উপর চালানো হয়েছে। সমীক্ষায় ফ্লু-র টিকা নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে কোভিড পজিটিভ রোগীদের স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কতটা রয়েছে তা পরীক্ষা করা হয়।
advertisement
লক্ষ্য করা হয়েছিল, শুধুমাত্র ফ্লু-র টিকা নেওয়া উল্লেখযোগ্য ভাবে কার্যকর ছিল, না কি, এটি টিকা দেওয়ার পরে ১২০ দিন পর্যন্ত কোভিডের গুরুতর ঝুঁকি কমাতে পেরেছিল। বিশেষ করে, ফ্লু-র টিকা নেওয়া কয়েকজন লোকের হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি এড়ানো গিয়েছিল তা সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এছাড়া এটিও দেখা গিয়েছে যে টিকা নেওয়ার ফলে সেপসিস, ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের ঝুঁকি কমে যেতে পারে।
টিকা নিলে কারা কারা উপকৃত হতে পারে?
এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ফ্লু-র টিকা নিলেই কোভিডের সমস্ত ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে কম হয় না। এমন কিছু লোক থাকতে পারে যারা এখনও কোভিড টিকা থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা পায় না। তাই তাদের এখনও ঝুঁকি থাকতে পারে।
যেহেতু বুস্টার শট নিয়ে এখনও কথা বলা হচ্ছে এবং আমরা এটা জেনেছি যে কোভিড প্রতিষেধকের প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বল্পস্থায়ী হতে পারে, তাই ফ্লু-র টিকা বিশেষভাবে তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে যারা ঝুঁকিতে রয়েছে, আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে যাদের।
ফ্লু-র টিকা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কেন?
মরসুমি ফ্লু একটি খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে এবং এই সময়ে গুরুতর তীব্র সংক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়াও, ফ্লু-র টিকা নেওয়াও এখনই প্রয়োজনীয়, কারণ শীত পুরোপুরি জাঁকিয়ে বসলে কোভিড এবং ফ্লু সংক্রমণের বড় ঝুঁকি থাকবে। এছাড়াও, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আসার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসকদের মতে ফ্লু-র টিকা নিলে কোভিড ও ফ্লু-তে একসঙ্গে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
কোন সময় টিকা নিতে হবে?
বছরে এক বার টিকা নিলে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। আমেরিকার সেন্টার ফর জিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনও বছরে এক বার এই টিকা নেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে। ২ বছরের উপর বয়সের প্রত্যেকেই এই টিকা নিতে পারে।
ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (IAP) পাঁচ বছরের কম বয়সের সমস্ত বাচ্চাকে বার্ষিক ফ্লু-র টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাই শীতের মরসুমের শুরুতেই টিকা নেওয়া সব চেয়ে কাজের কাজ। টিকা নেওয়ার পর ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
কাদের কাদের অবশ্যই টিকা নেওয়া প্রয়োজন?
ফ্লু-র টিকা নিলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। হার্টের সমস্যা, ক্যানসার বা ডায়াবেটিসের মত রোগে যারা ভুগছে, তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জটিলতা এড়াতে ফ্লু-র টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, কোভিড চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া যেতে পারে।
বাচ্চাদেও ফ্লু-র টিকা দেওয়া যেতে পারে। সম্প্রতি শিশুদের মধ্যে ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এক বা দুই বছরের বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় ভেন্টিলেশনেও (Ventilation) রাখতে হচ্ছে শিশুদের।
Location :
First Published :
October 30, 2021 2:39 PM IST