Explained: করোনা টিকার বুস্টার ডোজ আদতে কাদের প্রয়োজন?
- Published by:Dolon Chattopadhyay
Last Updated:
অনেকের প্রশ্ন- কোন সময় করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়া জরুরি?
#কলকাতা: ২০২০ সালের প্রথম থেকেই এদেশে আক্রমণ হানে কোভিড। তার পর কেটে গেছে অনেকটাই সময়। কিন্তু এখনও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। দৈনিক করোনা সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসছে। চলতি বছরে মার্চ মাস নাগাদ দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে। সেই সময় পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়েছিল।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এই বছরেই আছড়ে পড়তে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ। তাতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই নিয়ে ইতিমধ্যে সতর্ক হতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিস্থিতি যাতে নাগালের মধ্যে থেকে না বেরিয়ে যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। অন্য দিকে, করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে জোর কদমে টিকা দেওয়ার কাজ চলছে।
advertisement
advertisement
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৮২ লাখেরও বেশি মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকের প্রশ্ন- কোন সময় করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়া জরুরি? সমস্ত আলোচনা করা হবে এই প্রতিবেদনে-
এখনও পর্যন্ত বুস্টার ডোজ নিয়ে আমাদের কাছে কী তথ্য রয়েছে-
বুস্টার ডোজ নিয়ে বহু বার আলোচনা হয়েছে। করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর বুস্টার ডোজ নেওয়া প্রয়োজন কিনা সে নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। পাশাপাশি কত দিন পর বুস্টার ডোজ নেওয়া প্রয়োজন সেই নিয়েও অনেকের মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন। তবে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য। প্রথম ডোজের পর বুস্টার ডোজ দিলে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব।
advertisement
বিশেষজ্ঞরা এবিষয়ে জানিয়েছেন, প্রথম ডোজের থেকে অতি দ্রুত বুস্টার ডোজ নিলে তবে কার্যকরী হবে এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় এবং বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতি মানবদেহে বুস্টার ডোজ অত্যন্ত কার্যকরী।
বুস্টার ডোজ কত ভালো ভাবে কাজ করে?
বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশিত করোনার বুস্টার ডোজ অত্যন্ত ভালো কার্যকরী। অনেকেই আছেন যাঁদের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সে অর্থে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়েনি। অথবা তুলনামূলক কম বেড়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ অত্যন্ত ভালো কাজ করেছে। তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়েছে।
advertisement
স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা
করোনার সঙ্গে যুদ্ধে যাঁরা একদম সামনের সারিতে ছিলেন তাঁরা হলেন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা যে ধরনের কাজ করেন তার জন্য তাঁরা অত্যন্ত বিপদের মুখে ছিলেন। শুধু তাঁরা নয়, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলেই করোনার সঙ্গে যুদ্ধে সামনের সারিতে ছিলেন। আর সেই কারণে তাঁদের করোনা টিকা সব থেকে প্রথমে দেওয়া হয়েছিল। তাই কোভিড বুস্টার ডোজও তাঁদের প্রথমে দিতে হবে। এই বুস্টার ডোজ দেওয়ার ফলে করোনা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আরও একধাপ তাঁরা এগিয়ে থাকবেন।
advertisement
যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে
যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি হয়েছে তাঁদের উপর যে শুধু করোনা বা অনান্য রোগ আক্রমণ করবে এমনটা নয়, তাঁদের উপর বিভিন্ন রোগ আক্রমণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও শরীর দুর্বল করে দেয়। তাই তাঁদের ক্ষেত্রেও শুরুর দিকে টিকাকরণ করা হয়েছিল। ফলে তাঁদের করোনা টিকা নেওয়ার সময়সীমা অনেকটাই অতিক্রান্ত হয়েছে। তাই ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁদের বয়স তাঁদের বুস্টার ডোজ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে করোনা টিকার কার্যক্ষমতা অনান্য বয়সীদের তুলনায় দ্রুত হারে কমে।
advertisement
যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুত বুস্টার ডোজ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ শারীরিক অন্য কোনও সমস্যার কারণে সেই সব মানুষদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব একটা বেশি থাকে না। ফলে বুস্টার ডোজ দিয়ে তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। কারণ তাঁদের ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না। করোনা আক্রমণের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল যাঁদের অতীতে কোনও রোগ ছিল তাঁদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তুলনামূলক বেশি জটিল হয়েছে।
advertisement
যাঁরা কো-মর্বিডিটিতে ভুগছেন
করোনা পরিস্থিতিতে দেখা গিয়েছে যাঁরা কো- মোর্বিডিটিতে ভুগছেন তাঁদের মধ্যে করোনা মারাত্মক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হচ্ছে। মূলত যাঁরা মধুমেহ রোগে ভুগছেন, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রয়েছে, কিডনির সমস্যা রয়েছে, হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন, ক্যানসার বা শ্বাস প্রশ্বাসের কোনও সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের ক্ষেত্রে করোনা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল। এমনকী কো-মর্বিডিটি তে ভুগছেন এমন অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তাই এই সব সমস্যা যাঁদের আছে তাঁদের যত দ্রুত সম্ভব বুস্টার ডোজ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় থাকবে।
কাদের বর্তমানে কোভিড বুস্টার ডোজ প্রয়োজন নেই
এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে ৫৫ বছর বয়সীদের ঊর্ধ্বে সকলকে করোনা বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, যাঁরা স্বাস্থ্যবান এবং ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স তাঁদের এই মুহূর্তে করোনা বুস্টার ডোজ না দেওয়া হলেও কোনও সমস্যা নেই। কারণ তাঁদের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে করোনা বুস্টার ডোজ দিলে যে তাঁদের ক্ষেত্রে খুব একটা কাজে লাগবে এমনটা নয়।
শিশুদের টিকাকরণ
বর্তমানে এখনও শিশুদের করোনা টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। বিজ্ঞানীরা এবিষয়ে জানিয়েছেন, শিশুদের উপর বুস্টার ডোজ না প্রয়োগ করা সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে এখনও পর্যন্ত করোনা শিশুদের উপর যে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে এমনটা দেখা যায়নি। তবে করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে শিশুদের সতর্ক রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
করোনা বুস্টার ডোজ নেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টিকা নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ ভাবেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। যেমন সুষম আহার গ্রহণ করতে হবে তেমনই যে কোনও রকম নেশা দ্রব্য বর্জন করতে হবে। এতে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব। একই সঙ্গে দৈনিক শরীরচর্চার উপর জোর দিতে হবে।
এর সঙ্গে কোভিড প্রোটোকল মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মাস্ক পরা, বার বার হাত ধোয়া, অযথা মুখে নাকে ও চোখে হাত না দেওয়া ইত্যাদি মেনে চলতে হবে।
Location :
First Published :
September 28, 2021 8:13 PM IST