Explained | Ukraine Russia War: ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে কি শান্তিচুক্তি হবে? না কি যুদ্ধ চলতেই থাকবে?
- Published by:Sanjukta Sarkar
Last Updated:
EXPLAINED Ukraine Russia War: দুই দেশই শান্তিচুক্তির বিষয়ে কথা বলছে। তবে এলাকার দখলদারি নিয়ে শান্তিচুক্তির (Peace Deal) যে কোনও সুযোগ মাঠে মারা যেতে পারে।
#নয়াদিল্লি: এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ (Russia Ukraine War) জারি রয়েছে। আবার দুই দেশই শান্তিচুক্তির বিষয়ে কথা বলছে। তবে এলাকার দখলদারি নিয়ে শান্তিচুক্তির (Peace Deal) যে কোনও সুযোগ মাঠে মারা যেতে পারে। রাশিয়ার ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে তুরস্ক (Turkey)। তারা বলেছে যে দুই পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছেছে। যদিও ব্রিটেন (UK) সতর্ক করেছে যে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) রাশিয়ান বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করার জন্য শান্তি আলোচনাকে সময় কেনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
পুতিন বলেছেন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) রাশিয়াকে হুমকি দেওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ব্যবহার করছে। এছাড়াও রাশিয়ার অভিযোগ, রুশভাষী মানুষজনের উপর ইউক্রেন গণহত্যা চালাচ্ছিল। তাই রাশিয়াকে রক্ষা করতে মাঠে নামতে হয়েছিল। এদিকে ইউক্রেন বলেছে যে তারা রাশিয়ার ভূমি দখলের বিরুদ্ধে অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে এবং পুতিনের গণহত্যার দাবিগুলি অর্থহীন। পশ্চিমারা রাশিয়ার উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরোপ করেছে। জবাবে ক্রেমলিন বলেছে যে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার সমান। বিশ্বের আরেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র চিন (China) দুই দেশকেই শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
advertisement
advertisement
প্রধান সমস্যা কী কী?
অঞ্চল: এটি আলোচনার সবচেয়ে কঠিন অংশ। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে (Cremia) দখল করে নেয়। গত ফেব্রুয়ারিতে তারা পূর্ব ইউক্রেনের দু'টি রাশিয়ান-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ান বাহিনী ক্রিমিয়ার উত্তরে ইউক্রেনের দক্ষিণ প্রান্ত, বিদ্রোহী অঞ্চলের চারপাশের অঞ্চল এবং কিভের (Kyiv) পূর্ব ও পশ্চিমের অঞ্চলের একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কমপক্ষে আরও ১ লাখ ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা রাশিয়ার দখলে রয়েছে। আয়তনের দিক থেকে এলাকাটি তিউনিসিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ডাকোটা রাজ্যের মতো। ইউক্রেন বলেছে যে তারা কখনই ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ, রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলের স্বাধীনতা বা রাশিয়ার দখল করা বিশাল অতিরিক্ত ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দেবে না।
advertisement
ইউক্রেনের শান্তি আলোচক মিখাইলো পোদোলিয়াক (Mykhailo Podolyak) বলেছেন, "আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।" তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি, রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টির ওপর জোর দিচ্ছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন যে তাঁরা তাঁদের ভূখণ্ডের দাবি ছাড়বেন না। লুহানস্ক (Luhansk) এবং দোনেস্কের (Donetsk) রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেবে না।
advertisement
অন্য দিকে, ক্রিমিয়া, বিদ্রোহী অঞ্চল এবং সম্ভবত ক্রিমিয়ার উত্তরে অংশের উপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণের স্বীকৃতি ইউক্রেনের থেকে চাইবে রাশিয়া। এক্ষেত্রে পানীয় জলের সরবরাহের উপর নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য হবে। ইউক্রেনের দক্ষিণ প্রান্ত বরাবর অঞ্চলটি রাশিয়ার জন্য বিশেষ আগ্রহের। কারণ, ১৭৮৩ সালে রাশিয়ান সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট অটোমান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পরে এই অঞ্চলটিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন।
advertisement
নিরপেক্ষতা: রাশিয়া বলেছে যে তারা ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দেখতে চায়। রাশিয়ার প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেডিনস্কি (Vladimir Medinsky) বলেছেন যে ইউক্রেন পরামর্শ দিয়েছে যে তারা অস্ট্রিয়া বা সুইডেনের মতো নিরপেক্ষ দেশ হতে পারে, যাদের নিজস্ব সেনাবাহিনী রয়েছে। কিভ যদিও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
advertisement
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের সংসদ স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছিল। মেডিনস্কি বলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী কত বড় হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুতিন ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন যে তিনি লিখিত গ্যারান্টি চান যে ইউক্রেন কখনই ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দেবে না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন শিগগিরই ন্যাটোর সদস্য হবে না। কারণ ন্যাটো সদস্যরা ইউক্রেনকে মেনে নেবে না। রাশিয়াও বার বার ইউক্রেনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম (Budapest Memorandum) অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ব্রিটেন পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংসের বিনিময়ে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। সেই সময় ইউক্রেন পশ্চিমি দেশের আর্থিক সহায়তায় নিজের পারমাণবিক অস্ত্রাগার, সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সম্মত হয়েছিল। ইউক্রেনের পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্তটি তিন বছর ধরে আলোচনার পরে নেওয়া হয়েছিল। বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও রাশিয়া ইউক্রেনকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তান যখন পরমাণু অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে ওঠে তখন ইউক্রেনের এই সিদ্ধান্ত নজর কাড়ে, বিশ্বব্যাপী প্রশংসাও পেয়েছিল তারা।
advertisement
চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে আত্মরক্ষা ব্যতীত কোনও দেশই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শক্তি ব্যবহার করবে না এবং সবাই দেশটির সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে সম্মান জানাবে। চুক্তিতে আরও বলা ছিল, আগ্রাসন হলে ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য চুক্তিকারীরা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেবে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীরা ছিলেন ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিওনিড কুচমা (Leonid Kuchma), মার্কিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন (Bill Clinton), রাশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন (Boris Yeltsin) এবং ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর (John Major)। পরে চিন (China) এবং ফ্রান্সও (France) স্বাক্ষর করে। তবে সবটাই ছিল একটি আশ্বাস ছিল, কোনও নিরাপত্তা গ্যারান্টি নয়।
বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যেই ১৯৯৬ সালে ইউক্রেন তার মাটিতে থাকা সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্র (Nuclear Weapons) রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে। ইউক্রেনও কঠিন দর কষাকষি করতে সক্ষম হয়েছিল। রাশিয়া তার প্রতিবেশীকে ১ বিলিয়ন ডলারের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এবং ইউক্রেনের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের (Uranium) মজুদ কেনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিশাল অর্থ দিয়েছে।
রাশিয়ান অধিকার: ইউক্রেনে রাশিয়ান ভাষা এবং রুশভাষী লোকদের অবস্থা মস্কোর জন্য একটি প্রধান সমস্যা। ২০১৯ সালে ইউক্রেন একটি আইন পাস করে ইউক্রেনীয় ভাষাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে এবং সরকারি কর্মীদের জন্য এটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। আইন অনুয়ায়ী সকল নাগরিককে ইউক্রেনীয় ভাষা জানতে হবে এবং সরকারি কর্মচারী, সেনা, ডাক্তার এবং শিক্ষকদের জন্য ইউক্রেনীয় ভাষায় ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
'ডি-নাজিফিকেশন' অর্থাৎ নাৎজিমুক্ত:
ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন যে নাৎজি-সদৃশ গোষ্ঠীগুলি ইউক্রেনের রাশিয়ান ভাষী সম্প্রদায়ের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে, গণহত্যা (Genocide) হচ্ছে। আর এসব করার অনুমতি দিয়েছে কিভ। ইউক্রেনের আজভ ব্যাটালিয়নকে (Azov Battalion) মস্কো একটি নাৎজি সংগঠন বলে অভিযুক্ত করেছে। যারা রাশিয়ান অসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধ করেছে।
রাশিয়ান-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলের বিরুদ্ধে লড়াই করা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিষ্ঠাতারা চরম ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী এবং ইহুদি-বিরোধী মতামত প্রকাশ করেছেন। আজভ ব্যাটালিয়ন যদিও অভিযোগের জবাব দেয়নি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সহযোগীরা বারবার বন্দর শহর মারিউপোলের প্রতিরক্ষায় আজভের ভূমিকা উল্লেখ করেছেন। ইউক্রেন রাশিয়ান ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy) বলেছেন যে রাশিয়াই ইউক্রেনের শহরগুলিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নাৎজিদের মতো আচরণ করছে।
শান্তি স্থাপনে কে কে কথা বলছে এবং কীভাবে?
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। পুতিন অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়ার চারদিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ থামাতে আলোচনা শুরু হয়। কিছু আলোচনা বেলারুশিয়ান সীমান্তে বা বেলারুশে (Belarus) ব্যক্তিগতভাবে হয়েছে এবং অন্যগুলি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হয়েছে। রাশিয়ান আলোচনাকারী দলের নেতৃত্বে আছেন পুতিনের উপদেষ্টা মেডিনস্কি, যিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালীন ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তুরস্কও ইজরায়েলের মতো দু'পক্ষকে একত্রিত করার চেষ্টা করছে। তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু তুর্কি দৈনিক হুরিয়েতকে বলেছেন যে রাশিয়া এবং ইউক্রেন সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং তিনি আশাবাদী যে উভয়পক্ষই পিছিয়ে না গেলে যুদ্ধবিরতি হবেই। জেলেনস্কি শনিবার মস্কোর সঙ্গে ব্যাপক শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া বলেছে যে পুতিন এবং জেলেনস্কির মধ্যে একটি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও বৈঠক হবে না।
শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগান (Recep Tayyip Erdoğan) জানান, কিভ ও মস্কো চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হল ভাষা বিভেদ। তবে ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা (Dmytro Kuleba) সেই দাবিকে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেছেন, "রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় রফাসূত্র পাওয়া ভীষণ কঠিন। তবে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরাও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং নিজেদের দাবি থেকে সরবেন না। আমাদের প্রথম দাবিই হল যুদ্ধবিরতি, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা। এছাড়াও রুশ নয়, ইউক্রেনের একমাত্র ভাষা ইউক্রেনীয় ভাষাই হবে।" তিনি আরও জোর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে আলোচনার মূল বিষয়গুলিকে চারটি বা অন্যান্য পয়েন্টে শ্রেণীবদ্ধ করা ভুল। কারণ প্রতিনিধি দলের উপগোষ্ঠীতে একই সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে, কুলেবা উল্লেখ করেছেন যে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে তুরস্ক এবং বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি এরদোগান যে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং রাজনৈতিক ও মানবিক সাহায্য করেছেন, তার জন্য ইউক্রেন আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
Location :
First Published :
March 28, 2022 4:30 PM IST