Explained: কোভিড নিয়ে নয়া কার্যকলাপ চিনের, কী কারণ?

Last Updated:

করোনাকালে চিনের অন্য প্রদেশে বেড়ার ব্যবহার দেখা গেলেও সাংহাইতে এটার ব্যবহার একেবারেই নতুন।

#নয়াদিল্লি: মার্চের শুরু থেকেই চিনে করোনা পরিস্থিতি নতুন করে মারাত্মক আকার নিয়েছে। দেশটির ২৬টি শহরে লকডাউন জারি করা হয়েছে। রাজধানী বেজিং, প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র সাংহাই-সহ অধিকাংশ বড় শহরে কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে ‘জিরো কোভিড’ (Zero-COVID) নীতি বেশ আগেই নেওয়া হয়েছে। সাংহাইয়ের বেশ কয়েকটি জেলায় কোভিড সংক্রমণের গতি রোখার জন্য ধাতব বেড়া (Metal Fence) দেওয়া হয়েছে। আর পদক্ষেপের কারণে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাসিন্দারা। শ্রমিকরা রাস্তা, আবাসিক এলাকায় এবং এমনকী কিছু অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ঢোকার পথগুলি বন্ধ করার জন্য জাল তারের বেড়া (Mesh Wire Fences) এবং ধাতব শিট (Metal Sheets) ব্যবহার করেছিল। শহরের ২৫ মিলিয়ন বাসিন্দাদের প্রায় একমাস লকডাউনে ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছিল, যদিও আশপাশের কয়েকটি এলাকা খুলে দেওয়া হয়েছে। আর সেই কারণেই গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য়ই ব্যারিকেডগুলি লাগানো হয়েছে।
ধাতব বেড়ার ব্যবহার কি নতুন?
সরকারিভাবে সাংহাইয়ে কোভিডে মৃতের সংখ্যা এখন ৫০০ জনের কিছু বেশি। তাদের প্রায় সবাই বয়স্ক এবং টিকাবিহীন ছিল। করোনাকালে চিনের অন্য প্রদেশে বেড়ার ব্যবহার দেখা গেলেও সাংহাইতে এটার ব্যবহার একেবারেই নতুন। ২০২০ সালের শুরুর দিকে রাজধানী বেজিংয়েরৃ কয়েকটি অংশে বাড়ি বা আবাসের গেটে ধাতব শিট ব্যবহার করে বেড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে আসতে না পারে। উহানেওৃ একই ছবি দেখা গিয়েছিল। এই উহানেই করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল বলে মনে করা হয়। বেড়া দেওয়ার বিষয়টি পরিস্থিতি ও সংক্রমণের উপরে নির্ভর করে। কখনও কখনও আবাসনের সমস্ত ব্লকেই বেড়া দিয়ে দেওয়া হয় মাত্র একটি বা দুটি প্রবেশপথ রেখে। অনেক সময় আবাসিক কমপ্লেক্সের মূল গেটের সামনে বেড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী উত্তর-পূর্বের শহর সুইফেনহে-সহ সীমান্ত অঞ্চলেও বেড়ার ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। ধাতব ব্যারিকেড ব্যবহার করে কোথাও কোথাও রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
advertisement
কেন সাংহাইয়ের মানুষ প্রতিবাদ করেছিল?
গত ২ বছরে সাংহাইয়ে এই ছবি দেখা যায়নি। বিস্তৃতভাবে কোথাও ব্যারিকেড দেওয়া হয়নি। তবে, সর্বশেষ প্রাদুর্ভাবের কারণে পুরো পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। চিনে এখন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে মূলত মারাত্মক সংক্রমণযাগ্য ওমিক্রন (Omicron) প্রজাতির বিএ.২ (BA.2) সাব ভ্যারিয়েন্ট। কর্তৃপক্ষ পুরো শহরে এমন লকডাউন চাপিয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ এক পাও দরজার বাইরে রাখতে না পারে। আর এই অতিরিক্ত বিধি-নিষেধের কারণেই ক্ষোভ ঘনীভূত হয় বাসিন্দাদের মধ্যে। অনেকেই তাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথে ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য বিরক্ত ছিল এবং কিছু বিক্ষুব্ধ নাগরিক প্রতিবাদও করে। সাংহাইয়ের জুহুই জেলার বাসিন্দারা একটি জাল তারের ব্যারিকেড ভেঙে দিয়েছিল।
advertisement
advertisement
সাংহাইয়ের প্রশাসন একটি টায়ার্ড সিস্টেম ব্যবহার করছে যেখানে সংক্রমণের ঝুঁকির ভিত্তিতে আশপাশের এলাকাগুলিকে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম বিভাগে থাকা এলাকাগুলিতে কঠোরতম বিধি-নিষেধ চাপানো হয়। আর এই এলাকাগুলিতেই ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে, এমন এলাকায় ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে না, যেটি কঠোরতম বিভাগের অংশ নয়। একজন বাসিন্দা তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের কাছে রাস্তা বন্ধ করার প্রতিবাদ করতে পুলিশে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তাঁর বাসস্থান প্রথম শ্রেণীর অংশ নয়। তিনি এবং তাঁর বিল্ডিং কমপ্লেক্সের অন্য দুই বাসিন্দা শ্রমিকদের ধাতব ব্যারিকেড তৈরি করা থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রতিবেশী কমিটির একজন কর্মী তাঁদের আবার বাধা দেন। পুলিশ অফিসার বাসিন্দাদের বলেছিলেন যে তাঁদের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে যাওয়ার কোনও অধিকার নেই।
advertisement
ব্যারিকেড কি সরানো হবে?
কিছু ক্ষেত্রে, বাসিন্দারা তাদের প্রতিবাদে সফল হয়েছে। সাংহাইয়ের পুতুও জেলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা তাদের বিল্ডিংয়ের গেটে ইউ-লক লাগানোর পরে তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। সেই আবাসিকের এক বাসিন্দা বলেন, "এটি খুব আকস্মিক ছিল, কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ব্যারিকেড লাগিয়ে দেওয়া হয়। কোনও দিক দিয়েই যাওয়ার রাস্তা ছিল না। যদি কোনও দুর্ঘটনা বা আগুন লেগে যায়, তবে প্রত্যেকের মৃত্যু নিশ্চিত।" আবাসনের বাসিন্দারা পুলিশের পাশাপাশি শহরের হটলাইনে ফোন করেছিল। সংক্রমণ কমে আসার পরে বেজিংয়ে অনেক বাধা অপসারণ করা হয়েছিল। তবে, এখন সংক্রমণ বাড়ার কারণে আবাসিক কমপ্লেক্সগুলিতে আবারও ব্যারিকেড করে দেওয়া হচ্ছে। সাংহাইয়ের বাসিন্দাদের একটি অংশের দাবি, কড়া লকডাউন তুলে দিয়ে টিকাকরণে জোর দিক সরকার।
advertisement
সমালোচনা: অনেকেই অভিযোগ করছে, সাংহাইয়ের বাসিন্দারা অভূতপূর্ব অবহেলা, দুর্ব্যবহার এবং অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলি দেখলেই এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মার্কিন ম্যাগাজিন ন্যাশনাল রিভিউ বলেছে, আর এই মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলি কমিউনিস্ট চিনের নিষ্ঠুর এবং অমানবিক দিকটি উন্মোচিত করেছে। এটি চিনের অনমনীয় এবং দেশের অকার্যকর শাসনব্যবস্থাকেও আলোকিত করে। অস্থায়ী কোয়ারান্টিন ক্যাম্পে কয়েক হাজার মানুষকে আটকে রাখা হচ্ছে। তথাকথিত অতিমারী নিয়য়ন্ত্রণ নিয়মগুলি সাংহাইয়ের বাসিন্দাদের জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। অপর্যাপ্ত খাবার এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনের অভাব রয়েছে। পুরুষ, মহিলা, প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের একই জায়গায় রাখা হচ্ছে। 'ভয়েস অফ এপ্রিল' (Voice Of April) ভিডিওতে সাংহাইয়ের বাসিন্দারা জিরো-কোভিড নীতির অধীনে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হতেই চিন তাতে সেন্সরশিপ চাপিয়েছে। এছাড়াও, সাংহাই-ভিত্তিক একজন র‌্যাপার অ্যাস্ট্রো চিনের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানব জীবনের প্রতি অবহেলার নিন্দা করার জন্য একটি গান 'নিউ স্লেভ' তৈরি করেছেন। চিনের এই অমানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে আরও বেশি সংখ্যক লোক জাতীয় সঙ্গীত গাইতে এসেছে, বিশেষ করে, এই লাইনটির জন্য- "ওঠো! তোমরা যারা দাস হতে অস্বীকার করো!" হাস্যকরভাবে, চিন তার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল।
advertisement
এখন কী পরিস্থিতি?
সাংহাইয়ের প্রশাসন এখন মনে করছে যে কোভিড সংক্রমণের গতিকে তারা রুখে দিতে পেরেছে। এজন্য প্রশাসন একটি গণপরিচ্ছন্ন অভিযান (Mass Cleaning Campaign) চালানোর কথা জানিয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে আবাসিক এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে এ কাজের জন্য হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। প্রশাসন সবদিক নজর রেখে ভেবেচিন্তে এগোতে চাইছে। এক মাসেরও বেশি সময় পরেও চিনের বৃহত্তম শহরের বেশিরভাগ লোককে এখনও তাদের আবাসন ছেড়ে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রবিবার থেকে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছে। একটি পরিবারের মাত্র একজন সদস্যকে বাইরে বেরোনোর অনুমতি দেওয়া হয় কিছু কেনাকাটা করার জন্য।
advertisement
সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, সাংহাইয়ের কঠোরতম নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এলাকার বাইরে ৬৩টি নতুন সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এর মানে হল আরও কিছুদিন বিধি-নিষেধের মধ্য়েই জীবন কাটাতে হবে নাগরিকদের। কর্তৃপক্ষ বলেছে যে 'জিরো কোভিড' নীতি-র লক্ষ্য হল যতটা সম্ভব জীবন বাঁচানো। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাংহাইতে ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছে। এছাড়াও যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বয়স্ক ও টিকা না নেওয়া লোকজন। তাই প্রশাসন এখন টিকাকরণে জোর দিয়েছে।
বুধবার চিনে ৩৬০ জন স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সাংহাইয়ে স্থানীয়ভাবে ২৬১ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে। এছাড়াও ৪ হাজার ৩৯০ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের কোনও উপসর্গ নেই। বৃহস্পতিবার পৌর স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, এই সংক্রমিতদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন আগেও সংক্রমিত হয়েছিল, তবে তাদের তখনও কোনও উপসর্গ ছিল না। কমিশন জানিয়েছে, বুধবার শহরে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ১০০ বছর। মৃতদের প্রত্যেকেই আগে থেকে গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছিল। বুধবার সাংহাইয়ে মোট ১ হাজার ৭৩৯ জন রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাংহাই ক্লোজড-অফ ম্যানেজমেন্টের অধীনে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। অর্থাৎ কঠোরতম বিধি-নিষেধের আওতা থেকে বেরিয়ে আসছে অনেক এলাকা।
এদিকে, আজ ভয়াবহ কোভিড পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালের এশিয়ান গেমস (Asian Games 2022 ) অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে চিন। এশিয়ান অলিম্পিক্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে এই খবর। তবে কী কারণে প্রতিযোগিতা স্থগিত করা হল তা এখনও জানানো হয়নি। মনে করা হচ্ছে, এর জন্য দেশের কোভিড পরিস্থিতিই দায়ী।
বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Explained: কোভিড নিয়ে নয়া কার্যকলাপ চিনের, কী কারণ?
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
  • ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে

  • দুর্যোগ চলবে উত্তরবঙ্গেও

  • উইকেন্ডে গিয়ে আবহাওয়ার উন্নতি

VIEW MORE
advertisement
advertisement