#কলকাতা: মফস্বল থেকে চোখ ভরে স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় এসেছে নীলাভ ও তিস্তা। আর পাঁচটা বাঙালি মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়ের মতোই বড় হয়ে ওঠা তিস্তা বা তুষির। কলকাতায় এসে এক বিজ্ঞাপন সংস্থায় কপিরাইটার সে। তবে নীলাভ বা নীল স্বপ্নের সঙ্গে কলকাতায় আসে মনে যন্ত্রণা নিয়ে। নীল পেশায় মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস দফতরের কর্মী।
মিউচুয়াল বন্ধুদের মাধ্যমে ওদের একটা গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপেই রয়েছে তুষির পিকুদার মতো বেস্টফ্রেন্ড। পিকুদাকে ভাই সুলভ মনে হলেও, সেই পিকুদা কিন্তু তুষিকে শুধুই বন্ধু ভাবে। অন্যদিকে নীলের রয়েছে সহকর্মী তথা বন্ধু পূজা। এক হাউজ পার্টিতে নীলের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয় পূজা। সেখানেই প্রথম সাক্ষাৎ নীল ও তুষির। বোঝাই যায়, দুজন বিপরীত মেরুর মানুষ। একদিকে তুষি বাংলা কবিতায় মজে থাকে। আর অন্যদিকে নীল 'শেষের কবিতা'-কে কবিতা ভেবে ভুল করে ফেলে।
কিন্তু এহেন তুষি ও নীলই সিদ্ধান্ত নেয় একসঙ্গে থাকার। শুরু হয় সহবাস। আসলে সহবাস বলতে যেটুকু বোঝায়- একসঙ্গে বাস করা। মাস গেলে স্যালারির যতটা সম্ভব বাঁচানো যায়। তাই ফ্ল্যাট শেয়ার করার সিদ্ধান্ত। বিল শেয়ার, রান্না ভাগাভাগি করে নেওয়া।
এর আগেও বাংলা ছবিতে লিভ-ইন সম্পর্ক উঠে এসেছে। কিন্তু এই ছবি যেন মফস্বলের সাধারণ দুটো ছেলেমেয়ের সহবাসের গল্প বলে। যাদের কাছে লিভ ইন মানে বেশ ঝুঁকি। যাদের কাছে এমন সিদ্ধান্ত বাবা-মায়ের থেকে লুকনো ছাড়া উপায় নেই। লিভ ইন আসলে যাদের কাছে কখনও সহজলভ্য বিষয় নয়।
তবে তুষি ও নীলের ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জ্বা বা জীবনযাপন আর একটু কম ঝাঁ চকচকে হতে পারত গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। সম্পর্ক যেভাবে এগোয় গল্পও তেমন এগোয়। পুরো গল্পতে জটিল কিছু নেই। তবে তাও তুষি ও নীলের মিষ্টি সহজ সম্পর্ক যেভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক অঞ্জন কাঞ্জিলাল তা প্রশংসনীয়।
সম্পর্কের ওঠা পড়া তো আছেই। কিন্তু এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অফিসের অত্যধিক চাপ যে একটা বড় চাপ তা সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। ক্রিয়েটিভ কাজের মোড়ক থাকলেও, আসলে যে সেই টার্গেটের পিছনেই ছোটা লক্ষ্য এই ছবি তা তুলে ধরতে সক্ষম। নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যে থেকেই যেন তেন প্রকারেণ আসলে আউট অফ দ্য বক্স হয়ে উঠতে হবে। এটাই আসল বাস্তব।
ছবিটি দেখতে দেখতে দর্শকাসনে বসা মানুষগুলোও তাই বেশ নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে পারে। এই ছবিতে বড় ভূমিকা নিয়েছে মিউজিক। আবহ সঙ্গীত থেকে ও গানের জন্য নম্বর দিতেই হয় সৌমরিত নাগকে। এই ছবিতে বিভিন্ন কবিতার বেশ কিছু অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলির নিয়ে আর একটু সচেতন হতে পারতেন।
আরও পড়ুন- একজনের বাড়ি থেকে ২১ কোটি নগদ টাকা, গয়না! নিন্দায় ফেটে পড়লেন সুদীপ্তা ও ঋদ্ধিকারণ শঙ্খ ঘোষের 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে'-র মতো কবিতা বহু বাঙালি দর্শকেরই জানা। অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলতে হয় তুষির চরিত্রে যথাযথ ইশা সাহা। অনুভব কাঞ্জিলালও যথাযথ চেষ্টা করেছেন নীল হয়ে উঠতে। পিকুদা ও পূজার চরিত্রে রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সায়নী ঘোষ অবশ্যই নজর কাড়ার মতো অভিনয় করেছেন। তবে কলাবতীর চরিত্রে দেবলীনার মুখের সংলাপগুলি সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। ওই চরিত্রটি নিয়ে আর একটু যত্নবান হওয়া যেত। অভিনয়ের দিক থেকে অবশ্যই উল্লেখ্য শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, তুলিকা বসু ও বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। অল্প সময়ের চরিত্রেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ব্রাত্য বসু।
'সহবাসে' দুটো সহজ মানুষের জীবনের ওঠাপড়ার গল্প। মধুরা পালিতের সিনেমাটোগ্রাফি ও অনির্বাণ মাইতির সম্পাদনায় ছবির বেশ কিছু দৃশ্য চোখে আরামও দেয়। খুব বড় ক্লাইম্যাক্সের আশায় এই ছবি দেখতে না যাওয়াই ভাল। তবে যাঁরা এখনও সহজ ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন, তাঁরা একবার দেখে আসতেই পারেন এই ছবি।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Film Review, Isha Saha