কলেজ পাশ করে কাজের সন্ধানে অসম থেকে কলকাতা পাড়ি। বহাগ বিহু যার শিকড়, নববর্ষ, পয়লা বৈশাখে তাঁর মন কেমনের ঠিকানা খুঁজে দেখা যাক। টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতা ঋষি কৌশিক। অবাঙালি হয়েও আজ বছরের পর বছর বাংলা নতুন বছরের সাক্ষী। নিউজ18 বাংলার হয়ে কলম ধরলেন সেই নায়ক।
নববর্ষ, পয়লা বৈশাখে আমার মন পড়ে থাকে অসমের তেজপুরে। ২০০২ সাল থেকে তো এই বাংলাই আমার ঘরবাড়ি। কিন্তু এই সময়টায় মনে পড়ে আমাদের বাড়িটার কথা। কত কত মজার নিয়মকানুন পালন করা হত। তবে নিয়মের ভারে নুব্জ হইনি কোনও দিন। আনন্দের টুকরো টুকরো ছবি সেসব।
বাংলায় যখন নববর্ষ, অসমে তখন বিহু। নিয়মকানুন আলাদা হলেও উৎসবের মেজাজের তুল্যমূল্য বিচার করলে খুব একটা ফারাক নেই। নতুন জামা কেনা, বড়দের প্রণাম জানানো, নির্দিষ্ট কিছু পদ রান্না করা, হালখাতা করতে দোকানে যাওয়া, দল বেঁধে নাচ-গান দেখতে যাওয়া। তবে হ্যাঁ, শিকড় কি আর ভোলা যায়? তাই বৈশাখের শুরুতে অসমেই যেতে ইচ্ছে করে। বহু বছর ওখানে যাওয়া হয় না।
ছোটবেলায় কাঁধে গামছা নিয়ে (এই সময়ে গামছা উপহার দেওয়ার চল রয়েছে সেখানে) বাড়ির গরুর প্রতিপালনে যোগ দিতাম। বহাগ বিহুর এই সময়ে গরুর যত্ন-আত্তি করার নিয়ম আছে। ১৪ এপ্রিল গরুকে পুজো করা হয়। কলাইয়ের ডাল বা মুগ ডাল বেঁটে গরুর গা মালিশ করে ভাল করে স্নান করানো হয়। পরের দিন, অর্থাৎ আজ বিহু নাচ হয় চারদিকে। উৎসবে মেতে ওঠেন সকলে। আমিও কত করেছি সেসব।
আরও পড়ুন: যা ভয়ঙ্কর গরম! পয়লা বৈশাখেও ভালমন্দ খাওয়ার কথা ভাবতে পারছি না: 'একেন' অনির্বাণ
ঠিক যেমন বাঙালিরা বলেন, পয়লা বৈশাখের বাঙালিত্ব কমে গিয়েছে, বিহুর পালনেও আজকাল আর বাড়ি বাড়ি প্রণাম জানানোর চল নেই অত। হোয়াটসঅ্যাপে চটজলদি নিয়মরক্ষায় অভ্যস্ত হয়েছে নতুন প্রজন্ম। আমি নিজেই কত বছর ও দিকে পা মাড়াই না। ফোনে ফোনেই 'হ্যাপি বিহু'র শুভেচ্ছা সারতে হয়। বাংলায় নববর্ষের এই উদযাপন দেখে মন কেমন করে।
আরও পড়ুন: পয়লা বৈশাখেই সেরে ফেলতে হবে সব 'ভাল কাজ'! কেন এমন বিশ্বাস মধুবনীর
যদিও বাংলার নববর্ষের মতো বহাগ বিহুতে খাওয়া দাওয়ার অত এলাহি বন্দোবস্ত থাকে না। খাওয়া দাওয়ার বিহু হয় মাঘ মাসে, শীতকালে। নাম, মাঘ বিহু। আর কার্তিক মাসে কঙালি বিহু। নামকরণের কারণ, ওই সময়ে কোনও ফসল হয় না। তাই ওই বিহুর সময়ে আগামী দিনের জন্য শুভকামনা করা হয়। লক্ষ্মীকে আহবান করা হয়। আর এখন চলছে বহাগ (বৈশাখ) বিহু। তবে কিছু কিছু পদ তো হতেই থাকে এই সময়ে। নারকেলের পিঠে চিড়ে-দই মাখা, নাড়ু, তিল পিঠে বানানো হয়। এই বিহুকে আবার রঙালি বিহুও বলা হয়। রঙালির মানে হল আনন্দ। ঢোল বাজিয়ে, প্যাঁপা (মোষের সিং দিয়ে তৈরি বাঁশি) বাজিয়ে বিহু পালিত হয়।
মনে আছে, অসম থেকে যখন কাজের খোঁজে কলকাতা চলে আসি, সেটা ছিল মার্চ মাস। তার এক মাস পরেই বিহু ছিল। ওই থেকেই আমি নববর্ষের অংশ হয়েছি। সদ্য কলেজ পাশ করা ওই ছেলের তখন নতুন জন্ম হয়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Poila Baisakh, Rishi Kaushik