কলকাতা: ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। রানি মুখোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত এই ছবি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। পর্দায় একটি গল্প। নাড়িয়ে দিয়েছে কত মানুষকে। কাঁদিয়ে দিয়েছে কত মাকে। ওদিকে নড়েচড়ে বসেছে নরওয়ের প্রশাসন। সে দেশের রাষ্ট্রদূত ছবিটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘পারিবারিক জীবন সম্পর্কে নরওয়ের বিশ্বাস এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি আমাদের সম্মান নিয়ে যা দেখানো হচ্ছে, তা ভুল। শিশু কল্যাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, টাকার জন্য বা লাভে আশায় কিছু করা হয় না।’
তার পরেই নরওয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বাস্তবের ‘মিসেস চ্যাটার্জি’ বঙ্গতনয়া বিরাটির সাগরিকা চক্রবর্তী। তিনি বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের ভুয়ো মন্তব্যের বিরোধিতা করছি। আমার বিষয়ে কথা বললেন, অথচ এইটুকু ভদ্রতা নেই যে আমাকে একবার জিজ্ঞাসা করবেন। নরওয়েজিয়ান কেয়ার ওয়ার্কারদের সাংস্কৃতিক কুসংস্কার সম্পর্কে সংবেদনশীল করার একটি সুযোগ হিসাবে দেখা উচিত ছিল। এমনকি ঘটনার ১০ বছর পরেও আমি একা হাতেই আমার বাচ্চাদের এত ভাল ভাবে বড় করেছি যে গোটা পৃথিবী সাক্ষী। সারা বিশ্ব যখন আমার আর আমার সন্তানদের অটুট সম্পর্কের সাক্ষী হয়ে থেকেছে, তখনও নরওয়ে সরকার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের কর্মীদের বর্ণবিদ্বেষী আচরণের জন্য ক্ষমা চায়নি। তাঁরা আমার জীবন, ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছে। আমার সন্তানদের আঘাত করেছে। আমার স্বামী যখন আমার প্রতি হিংস্রতা প্রকাশ করছে, তখন তাকে সমর্থন করে চলে। তাঁরা নিজেদের নারীবাদী দেশ বলে! অসলো এবং নরওয়ের অন্যান্য প্রদেশ তো বটেই, বিশ্বব্যাপী মানুষ এই ছবিটি (‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’) দেখতে আগ্রহী এবং সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে সেখানে। নরওয়ে এবং অন্যান্য দেশ থেকে লোকেরা আসছে আমার সঙ্গে দেখা করতে। ভারত সরকার আমাকে অনেক সাহায্য করেছে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য পরিবারকেও সাহায্য করবে। জয় হিন্দ।’’
View this post on Instagram
অনুরূপ এবং সাগরিকা নরওয়েতে থাকতেন। তাঁদের দুই সন্তান ছিল। ২০১১ সালে তিন বছরের ছেলে অভিজ্ঞান এবং এক বছরের মেয়ে ঐশ্বর্যকে এভাবেই কেড়ে নিয়েছিল নরওয়ে প্রশাসন। দাবি করেছিল, তাঁদের সন্তান পালনের পদ্ধতি সঠিক নয়। বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তানদের হেফাজত কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: নিজের গল্পে রানিকে দেখে কান্না বিরাটির সাগরিকার! সন্তান হারানোর স্মৃতি তাড়া করে নতুন করে
আরও পড়ুন: পর্দার অনির্বাণ-রানির মতো বাস্তবে এদের দুধের শিশুকে কেড়েছিল নরওয়ে, চোখে জল আসবে ঘটনা শুনলে
নরওয়ের শিশু সুরক্ষা পরিষেবার তরফে সাগরিকা ও অনুরূপের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁরা বাচ্চাদের জোর করে খাবার খাওয়ান। ছেলেকে ভিন্ন ঘর না দিয়ে নিজেদের সঙ্গে ঘুম পাড়ান। হাত দিয়ে মেখে খাবার খাওয়ান মা। বাচ্চাদের ভাল জামাকাপড় আর খেলনা কিনে দেন না, ইত্যাদি। কূটনৈতিক এবং আইনি ঝামেলার পর নরওয়ের কর্তৃপক্ষ শিশুদের হেফাজত দেওয়া হয় তাঁদের কাকাকে। তাঁকে সন্তানদের নিয়ে ভারতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।
এই দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্যেই অনুরূপ ও সাগরিকার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সাগরিকা সন্তানদের হেফাজত ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নামেন একাই। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সাগরিকা তাঁর সন্তানদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর ছেলে-মেয়ের হেফাজত মঞ্জুর করে। সেই গল্পই সিনেমার চিত্রনাট্যে তুলে এনেছেন পরিচালক অসীমা চিব্বর।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Anirban bhattacharya, Mrs Chatterjee Vs Norway, Norway, Rani Mukerji, Rani Mukherjee