Mrs Chatterjee Vs Norway Sagarika Chakraborty Interview: মা হিসেবে যে যন্ত্রণা পেয়েছি, রানিও সেই কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন: ‘মিসেস চ্যাটার্জি’ সাগরিকা
- Published by:Teesta Barman
- news18 bangla
Last Updated:
Mrs Chatterjee Vs Norway Sagarika Chakraborty Interview: ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-তে রানির মধ্যে দিয়ে সাগরিকার লড়াই দেখল বিশ্ব। তাঁরই মুখোমুখি নিউজ18 বাংলা ডট কম।
কলকাতা: বিদেশের মাটিতে একার লড়াই। স্বামী হাত ছেড়ে দিয়েছেন। নরওয়ের প্রশাসন কেড়ে নিয়েছে দুই সন্তানকে। মানসিক, শারীরিক অত্যাচার সহ্য করে ভারতের সাহায্যে ছেলে-মেয়েকে ফিরে পাওয়া। আজ সেই লড়াই সেলুলয়েডে। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-তে রানি মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে সেই লড়াই দেখল বিশ্ব। সেই সাগরিকা চক্রবর্তীর মুখোমুখি নিউজ18 বাংলা ডট কম।
প্রশ্ন: ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ দেখার পর নরওয়ে থেকে তো আবার ডাক পড়ছে। যাবেন?
সাগরিকা: একদম না! ওই দেশে আমি আর ফিরব না। কিন্তু মজার বিষয় হল, সিনেমাটা দেখার পর ওখানকার মানুষই আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। সিনেমার ডিস্ট্রিবিউটার আমাকে বলছেন, আসুন, ঘুরে যান। আমি রাজি হইনি।
advertisement
advertisement

প্রশ্ন: এতটাই আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে...
সাগরিকা: একেবারেই তাই। যা সহ্য করতে হল এক মাকে! যা অত্যাচার ওরা করেছে আমার সঙ্গে, তার পর ওদিকে পা মাড়াব না। আমাকে ইলেক্ট্রিক শকও দেওয়া হয়েছে জানেন?
advertisement
প্রশ্ন: কেন?
সাগরিকা: পাগল প্রমাণ করার জন্য। আমার বাচ্চাদের কেড়ে নেওয়ার জন্য। যখন চাইল্ড ওয়েল ওদের নিয়ে গিয়ে ফস্টার পেরেন্টসের কাছে রেখে দিল, আমি দেখা করতে যেতাম সময়ে সময়ে। মেয়ে তখন দুধের শিশু বলে ব্রেস্টমিল্ক পাম্প করে নিয়ে যেতাম, সেটাও দিত না খেতে। আমি বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে আদর করলে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে চলে যেত। আমি কাঁদলে ভিডিও করত আর বলত, আমি নাকি পাগল।
advertisement
প্রশ্ন: ছেলে তো আজও সেই ট্রমা ভোলেনি, কীভাবে সামলাচ্ছেন? এই ছবি মুক্তির পর ছেলের উপর খারাপ প্রভাব পড়েনি?
সাগরিকা: ছেলে সিনেমাটা দেখেছে। কিন্তু সেটা সমস্যার নয়৷ ওর বাবা এখন যা যা বলে বেড়াচ্ছে, সেসব থেকে দূরে রাখতে চাই বাচ্চাদের। তাতে খারাপ প্রভাব পড়ছে। ছেলে আজও মাঝে মধ্যে রেগে যায়। থেরাপি চলছে ওর। আমার মা-বাবার কাছে কলকাতায় থাকে। আমি ছুটি পেলে নয়ডা থেকে কলকাতা ছুটে যাই। কিন্তু ওই ট্রমা ভোলা কি সহজ? আসলে ছোট থেকেই ও একটু মেজাজি ছিল। দেওয়ালে মাথা ঠুকত, মেলামেশা করতে পারত না। কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করেছিলাম নরওয়েতে। সেখানেই থেরাপির জন্য সাহায্য চেয়েছিলাম। সেটাই কাল হল।
advertisement

প্রশ্ন: কেন?
সাগরিকা: চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের সঙ্গে ওরা হাত মিলিয়েছিল তো। কিন্ডারগার্টেন থেকে আমাকে জানাল লোক পাঠাবে থেরাপির জন্য। সেই থেকেই দু'জন মহিলা আমাদের বাড়ি আসা শুরু করল। ভিডিও করত, আমাদের অনুসরণ করত, বাড়ির ভিতরে চলে আসত যখন তখন।
advertisement
প্রশ্ন: ছেলের থেরাপিতে সাহায্য করল না?
সাগরিকা: ওসব ভাঁওতা। তখন থেকেই টার্গেট করেছিল, ছেলেমেয়েকে কেড়ে নেবে। ওদের কাছে বাচ্চাদের পালন করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, টাকাটাই আসল। ফস্টার পেরেন্টসরা একেকটি শিশু পালনের জন্য ভাল অঙ্কের টাকা পায় ওই দেশে। প্রতি শিশুর জন্য সম্ভবত দৈনিক ৩০ হাজার টাকা রোজগার তাদের। আর তাই আমার স্বামীর ভাই টাকার লোভে আমার বাচ্চাদের হেফাজত নিতে চেয়েছিলেন। আর এটা একেবারেই বেআইনি ভাবে হয় ওখানে।
advertisement
প্রশ্ন: ওরকম কঠিন সময়ে আপনার স্বামী অনুরূপ ভট্টাচার্য সঙ্গ দিলেন না?
সাগরিকা: ওঁর কোনও হেলদোলই ছিল না। খালি আমার দিকে আঙুল তুলতেন। আর এই সুযোগে স্বামীর পরিবার চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের সঙ্গে হাত মেলালেন। অনুরূপের ভাইয়ের কাছে বাচ্চাদের হেফাজত দিয়ে দিলে তো টাকা পাবেন ওঁরা। আর আমার স্বামীকে যা বোঝানো হত, তাই বুঝতেন। সবাই মিলে আমার পিছনে পড়লেন। আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে কতদিন! ভারত সরকারের আধিকারিকরা বলতেন, আমি যেন দেশে ফিরে যাই, নয়তো ওরা সবাই মিলে আমায় মেরেও ফেলতে পারে।
প্রশ্ন: অনুরূপের সঙ্গে বিয়ে কি প্রেম করে?
সাগরিকা: মা-বাবা দেখাশোনা করে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের আগেই নানা রকমের রূপ দেখেছি। কেবল অনুরূপ নয়, ওঁর পরিবারও শুরু থেকে খারাপ ব্যবহার করেছে। কিন্তু তার পরেও নানা কারণে বিয়েটা হয়ে যায়।

প্রশ্ন: বিদেশে গিয়ে শুরুর দিকে দাম্পত্য কেমন ছিল?
সাগরিকা: খুব তাড়াতাড়িই দাঁত নখ বেরোতে শুরু করে আমার স্বামীর। আমাকে মারধর করা, খারাপ ব্যবহার করা, আমি গর্ভবতী হওয়ার পর ন্যূনতম যত্ন না নেওয়া, গার্হস্থ্য হিংসার কথা কাউকে জানাতে পারিনি। ভারত সরকারের আধিকারিকরা আমাকে বলেছিলেন, স্বামীর বিষয়ে কোনও মামলা এখন করতে না, তাতে ছেলেমেয়েদের ফিরে পেতে দেরি হবে। তাই চুপ ছিলাম।
প্রশ্ন: আপনার স্বামী তো এখন আপনার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনছেন...
সাগরিকা: হ্যাঁ সেসব দেখছি আর হাসি পাচ্ছে। সবাই বুঝতে পারছে যে উনি মিথ্যে কথা বলছেন। উনি বলছেন, বিয়ের আগে নাকি আমার কয়েক জন চিকিৎসকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তা-ই যদি হয়, তাহলে ওঁর মতো খারাপ মানুষকে বিয়েটা কেন করলাম! যদি সত্যিই সম্পর্ক থাকত কারও সঙ্গে, তাঁকেই করতাম।
প্রশ্ন: অনেকে বলছেন, এই ঘটনার উল্টোদিকও রয়েছে। নরওয়ে প্রশাসন পুরোপুরি ভাবে খারাপ নয়...
সাগরিকা: সব ঘটনারই ভাল এবং খারাপ দিক হয়। এখানেও আছে। আর কারা কী বলছেন তা আমি জানি। আমার স্বামীর হাত রয়েছে তাতে। কিন্তু সত্যের জয় হবে, এটাই আমার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: নিজের গল্পে রানিকে দেখে কান্না বিরাটির সাগরিকার! সন্তান হারানোর স্মৃতি তাড়া করে নতুন করে
প্রশ্ন: ছবির প্রচার মঞ্চে আপনাকে দেখেই তো রানি মুখোপাধ্যায় কেঁদে ফেলেন...
সাগরিকা: উনিও একজন মা, আর তাই সন্তানদের ছিনিয়ে নেওয়ার যন্ত্রণাটা টের পেয়েছেন। মুম্বইতে যখন দেখা হয়, আমাকে বলেছিলেন, ‘‘সাগরিকা তুমি কী করে এই লড়াইটা করলে? অভিনয় করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল আমি পাগল হয়ে যাব।’’ রানিকে জড়িয়ে ধরে মনে হচ্ছিল, আমি ওঁর ভিতরে রয়েছি। দেবিকা চ্যাটার্জি আর সাগরিকা চক্রবর্তীর মধ্যে আলাদা বলে কিছু নেই।
প্রশ্ন: রানির সঙ্গে খাঁটি বাংলায় কথা হল?
সাগরিকা: আমরা যখন নিজেরা কথা বলছিলাম, কেবল বাংলাতেই বলছিলাম। দুই বাঙালি মা। তাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে কথা হল। মাছ নিয়ে সে কত কথা! ঠিক হল, একবার কেবল আমি আর রানি কোথাও খেতে যাব।
প্রশ্ন: অনির্বাণ ভট্টাচার্যের উপর রাগ হচ্ছিল ছবি দেখতে দেখতে? স্বামীকে দেখতে পাচ্ছিলেন?
সাগরিকা: অনির্বাণের অভিনয় আমার সবথেকে বেশি পছন্দের। প্রতিটি চরিত্রের প্রতি উনি সৎ এবং সাবলীল। ছবিতে আমার জীবনের সবটা দেখানো সম্ভব হয়নি। তাই ওঁর অংশ খুব বেশি নেই। কিন্তু যতটুকু ছিল, সেই অভিনয়কে আমি ১০০-এ ১০০ দেব। আমার স্বামী যা যা বলেছিলেন, সেগুলি অনির্বাণের মুখ থেকে শুনতে পেয়েছি আবার। তাই রাগ তো একটু হবেই চরিত্রটার উপর। মনে হচ্ছিল, এটাই তো আমার স্বামী অনুরূপ ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: ছবির বানানোর আগে বইয়ের স্বত্বের বিনিময়ে প্রাপ্য টাকায় কি আপনি খুশি?
সাগরিকা: আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে এটুকু বলব, আমার বুক রাইটসের টাকা ওঁরা আগেই দিয়ে দিয়েছেন। কোনও সমস্যা হয়নি সে সব নিয়ে। তা ছাড়া পরিচালক অসীমা চিব্বর ছবি ফ্লোরে যাওয়ার আগে নিয়মিত আমার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করতেন।
প্রশ্ন: সন্তানদের থেকে এখনও দূরে থাকতে হচ্ছে রোজগারের জন্য...
সাগরিকা: দুই সন্তানকে নিজেই বড় করছি। এদিকে বাবা হার্টের রোগী। অপারেশন হল। প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। সে সব তো আমাকেই জোগাড় করতে হবে। এখন আমি নয়ডাতে চাকরি করি। পুণে থেকে ভাল চাকরির অফার এসেছে। তাই ভেবে দেখব কী করা যায়। যেখানেই পাই না কেন, গোটা পরিবারকে নিয়ে আসব নিজের কাছে।
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
March 28, 2023 6:38 PM IST