Mrinal Sen Birth Centenary: তাঁর ছবি পরশুরামের কুঠারের মতোই আঘাত করে দর্শকের বিবেককে এবং মননে
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
- news18 bangla
Last Updated:
Mrinal Sen Birth Centenary: মৃণাল সেনের পরিচালনায় সেই অন্ধকারই সেলুলেয়েডে শতকমলে বিকশিত হয়েছে জীবনের জয়গান হয়ে
স্মৃতিমেদুরতা পছন্দ করতেন না মৃণাল সেন। আগ্রহ ছিল না নিজের কাজ গুছিয়ে রাখবার। অনীহা ছিল সেই কাজের স্বীকৃতিকে প্রদর্শন করবার। তাঁর ছবি পরশুরামের কুঠারের মতোই আঘাত করে দর্শকের বিবেককে এবং মননে। ছবির প্রতি তাঁর নিজের মন এবং দেখার চোখ অজান্তেই তৈরি হয়েছিল শৈশবে। দেখার বীজ বপন করেছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ‘দ্য কিড’ যখন দেখেছিলেন, তখন তিনি নিজেই বালক স্বপ্নেও ভাবেননি এক দিন তিনি নিজেই ক্যামেরার পিছন থেকে নির্দেশ দেবেন ৷ একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চ্যাপলিনের জন্যই তাঁর পরিচালকের জীবনে পা রাখা৷ অনুযোগ উঠত এবং আজও ওঠে, তাঁর ছবিতে অন্ধকার বড় বেশি ৷ কিন্তু মৃণাল সেনের পরিচালনায় সেই অন্ধকারই সেলুলেয়েডে শতকমলে বিকশিত হয়েছে জীবনের জয়গান হয়ে।
১৯২৩ সালের ১৪ মে জন্ম পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে৷ পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছের পাশাপাশি ছোট থেকেই সঙ্গী ছিল ছবি দেখার নেশা৷ আজীবন চলচ্চিত্র ছিল অমোঘ নেশা হয়েই৷ পেশার মাপকাঠিতে মাপতে যাননি নিজের প্যাশনকে৷ যে কলকাতা তাঁর ছবির উপজীব্য থেকে চরিত্র হয়ে উঠেছে বার বার, তার নাগরিক তিনি হয়েছিলেন কৈশোরেই ৷ তিরিশের দশকে কলেজজীবনে বাম রাজনীতিতে হাতেখড়ি৷ ওই সময়পর্বেই থিয়েটার ও ছবির জগতের অঙ্গন উন্মুক্ত হয় তাঁর সামনে৷ স্বপ্ন সঙ্গে নিয়েই পেশার টানে পা রাখলেন কলকাতার বাইরে৷ কিন্তু মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিতে বেশি দিন মন বসল না৷ চারের দশকে ফিরলেন কলকতায়, এ বার তাঁর পাখির চোখ শুধুই চলচ্চিত্র৷
advertisement

advertisement
‘পথের পাঁচালী’-র মুক্তির বছর অর্থাৎ ১৯৫৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল মৃণাল সেনের প্রথম ছবি ‘রাতভোর’৷ তার তিন বছর পরে ‘নীল আকাশের নীচে’৷ তবে প্রথম দুই ছবির পর সমালোচক বা দর্শক, কোনও মহলেই দাগ কাটতে পারেননি তরুণ পরিচালক৷ রাজনৈতিক বার্তার জন্য ‘নীল আকাশের নীচে’-এর উপরে নেমে এসেছিল নিষেধাজ্ঞার খাঁড়াও৷
advertisement

আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ছয়ের দশক পর্যন্ত৷ ১৯৬০ সালে প্রেক্ষাগৃহে এল ‘বাইশে শ্রাবণ’৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলা জুড়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সামনে অসহায় এক দম্পতির জীবনযুদ্ধ মৃণালকে নিয়ে এল আন্তর্জাতিক মঞ্চের আলোয়৷ তাঁর ছবির মধ্যে এটাই প্রথম দেখানো হয়েছিল বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে৷ প্রদর্শিত হয়েছিল লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে৷
advertisement
আরও পড়ুন : শতবর্ষে মৃণাল সেনকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘পালান’, খুশি মৃণালপুত্র কুণাল
বনফুলের উপন্যাসের সেলুলয়েড রূপ ‘ভুবন সোম’ তাঁকে এনে দেয় তিনটি জাতীয় পুরস্কার৷ শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ ছবি বিভাগের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান উৎপল দত্ত৷ এই ছবি দিয়ে শুরু৷ এর পর ‘কোরাস’, ‘মৃগয়া’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘ক্যালকাটা ৭১’, ‘খারিজ’, ‘পুনশ্চ’, ‘আকাশকুসুম’, ‘অন্তরীন’, ‘ওকা উড়ি কথা’, ‘পরশুরাম’, ‘এক দিন প্রতিদিন’, ‘খণ্ডহর’, ‘পদাতিক’-জাতীয় পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছে তাঁর সৃষ্টি৷ ‘ইন্টারভিউ’, ‘ক্যালকাটা ৭১’, ‘পদাতিক’-মৃণালের এই তিন সৃষ্টি এখনও অবধি নাগরিক জীবন নিয়ে ছবি-তালিকার শীর্ষে ৷ তাঁর ছবিতে কলকাতা শুধুই কল্লোলিনী বা তিলোত্তমা নয় ৷ বরং, প্রকট হয়ে ওঠে বেকারত্ব, দারিদ্র, অনাহার-সহ এই শহরের বিভিন্ন ক্ষত৷
advertisement

তাঁর স্রষ্টা সত্ত্বার পিছনে অন্যতম অনুঘটক তাঁর স্ত্রী গীতা৷ সত্যজিতের ছবিতে বিজয়া রায়ের ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য, তেমনই মৃণালের ছবির বিভিন্ন ক্ষেত্রে থাকত গীতার নীরব উপস্থিতি৷ বিয়ের পরে গীতা অভিনয় আর না করলেও স্ত্রীর পরামর্শ এবং সমালোচনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন মৃণাল৷ চিত্রনাট্য, সেট, অভিনয় থেকে কুশীলবদের পোশাক-সব দিকে গীতার তীক্ষ্ণ নজর থাকত৷ বহু সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছেন পরিচালক নিজেই ৷
advertisement
আরও পড়ুন : রবীন্দ্রনাথ থেকে রামপ্রসাদ! মুকুটে নয়া পালক জুড়তেই ক্ষোভ উগরে মুখ খুললেন শ্রীজাত
তাঁর ছবি, শর্ট ফিল্ম, তথ্যচিত্র-সহ বিভিন্ন কাজ বহু বার সমালোচিত হয়েছে এর কৃষ্ণ বিষয়ের জন্য ৷ কিন্তু নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনদর্শন থেকে সরে এসে পপুলিস্ট হতে চাননি তিনি ৷ দীর্ঘ কর্মজীবনে একে একে নামের পাশে যোগ হয়েছে ‘দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার’, ‘পদ্মভূষণ’, ‘কমান্দ্যর দ্য অর্দ্র দ্য আর্ত্ এ দ্য লের্ত্র’-এর মতো সম্মান ৷
advertisement

২০০২ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’৷ নিজেই বলতেন প্রতি ছবি শেষ হওয়ার পর তিনি ধ্বংস হয়ে যান৷ আবার জেগে ওঠেন পরের ছবির জন্য৷ তাঁর ছবিগুলিও দর্শককে জাগিয়ে তোলে সুখের দিবাস্বপ্ন থেকে৷ টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনে বাস্তবের মাটিতে৷ ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ নয়৷ তাঁর ছবির বিষয় ‘লাইফ’৷ মানুষের জীবন ও তার চর্যাকেই লালনপালন করে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এনেছিলেন নতুন যুগ৷ সেই যুগ কোনওদিন খারিজ হয়ে যায় না। বরং বাইশে শ্রাবণের ধারার মতোই বাংলা ছবিকে খণ্ডহর থেকে নিয়ে যায় পদাতিকের পথে।
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
May 14, 2023 8:23 PM IST