নয়াদিল্লি: ২০২৩-২৪ আর্থিক বর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটকে 'জনবিরোধী' এবং 'সম্পূর্ণ সুবিধাবাদী' বলে অভিহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন এবারের বাজেট আসলে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে।
বুধবার সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-২৪ পেশ করার সময় সীতারমণ ঘোষণা করেছেন নতুন ট্যাক্স নিয়মের অধীনে আয়কর ছাড়ের সীমা ৫ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৭ লক্ষ টাকা করা হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে নতুন ট্যাক্স রেজিউমের এই বছর থেকেই সক্রিয় ভাবে ব্যবহার করা হবে। ট্যাক্স ছাড়াও কৃষি, প্রযুক্তি এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চলেছে। মূলধন বিনিয়োগ ব্যয়ও ৩৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা দেশের জিডিপির প্রায় ৩.৩ শতাংশ হতে চলেছে।
এই বছরের প্রকাশিত বাজেটের নিন্দা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে, আয়কর স্ল্যাবের পরিবর্তন প্রকৃতপক্ষে কাউকেই সাহায্য করবে না। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছে, "এই বাজেটে ভারতের বেকারত্বের সমস্যা সমাধান নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।"
আরও পড়ুন: ভারতীয় রেলে আরও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সুযোগ! বিরাট ইঙ্গিত নির্মলার
তবে কেন্দ্রীয় দলের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-২৪-এ ঘোষিত সাম্প্রতিক ট্যাক্স রিজমকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্য দিকে, বিরোধী নেতারা দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রের উদাসীনতাকে আক্রমণ করেছেন।
কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরম বলেছেন যে, ট্যাক্স স্ল্যাবে ছাড় সাধারণ মানুষের জন্য নিঃসন্দেহে একটি 'স্বাগত' পদক্ষেপ। তিনি জানিয়েছেন, “আমি মনে করি সর্বনিম্ন ট্যাক্স স্ল্যাব ব্যবস্থা দেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সুতরাং, যে কোনও ট্যাক্স স্ল্যাব কমানোকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি, কারণ এতে জনগণের হাতে আরও অধিক পরিমাণ অর্থ পৌঁছবে। এটিকে দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সর্বোত্তম উপায় বলেই মনে হয়”।
আরও পড়ুন: ভারতীয় রেলে আরও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সুযোগ! বিরাট ইঙ্গিত নির্মলার
এদিকে, কেন্দ্রীয় বাজেটের চরম সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেছেন যে, এবারের বাজেটে গ্রামীণ দারিদ্র, কর্মসংস্থান এবং মুদ্রাস্ফীতির কোনও উল্লেখ নেই। এমনকী তিনি এও জানান বাজেট চলাকালীন অনেক মৌলিক প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের থেকে। থারুর আরও জানিয়েছেন যে, “এবারের বাজেটে কিছু ভাল পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এমএনআরইজিএ, কর্মসংস্থান, বেকারত্ব বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বাজেট নিরুত্তর”।
কংগ্রেস নেতা কে সুরেশ এটিকে এবারের বাজেটকে 'প্রো-কর্পোরেট' বাজেট বলে অভিহিত করেছেন যা শুধুমাত্র 'আদানি, আম্বানি এবং গুজরাতের' স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেছেন “এই বাজেটে আদানিদের সমস্ত স্বার্থ পূরণ করা হয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি বাজেটে সাধারণ বাজেটই উপেক্ষিত”।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বাজেটের সমর্থনে জানিয়েছেন, “২০২৩ আর্থিক বর্ষের বাজেট আসলে মধ্যবিত্তের। এসসি, এসটি, ওবিসি, মহিলা থেকে শুরু করে বয়স্ক- প্রত্যেকেই এই বাজেট দ্বারা উপকৃত হবেন”।
অন্যদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মতে, গত ৮-৯ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। “কর বেড়েছে আগের তুলনায় অনেকটা, তবে কল্যাণমূলক প্রকল্প এবং ভর্তুকিতে সেই পরিমাণে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না”।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় বাজেটকে 'সম্পূর্ণ সুবিধাবাদী' এবং 'জনবিরোধী' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “এই বাজেটে দরিদ্রদের বঞ্চিত করা হয়েছে, এই বাজেট থেকে শুধুমাত্র এক শ্রেণীর মানুষই উপকৃত হবেন”।
অন্য দিকে, বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী বলেছেন, “বাজেট যদি দলের জন্য না হয়ে দেশের জন্য হত তাহলে ভাল হত”। একটি ট্যুইট বার্তায় তিনি বলেন, “কেন্দ্র যখনই কোনও প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলে, তখন এটাও মনে রাখা উচিত যে ভারত আসলে ১৩০ কোটি দরিদ্র, শ্রমিক, বঞ্চিত, কৃষকের দেশ”।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Budget 2023, Union Budget 2023