হোম /খবর /ব্যবসা-বাণিজ্য /
বাজেট বক্তৃতায় কী বললেন নির্মলা? রইল 'অমৃতকালের প্রথম বাজেট'-এর সারসংক্ষেপ!

Union Budget 2023: বাজেট বক্তৃতায় কী বললেন নির্মলা? রইল 'অমৃতকালের প্রথম বাজেট'-এর সারসংক্ষেপ!

নির্মলার বাজেট

নির্মলার বাজেট

Union Budget 2023: এখানে রইল তাঁর বাজেট বক্তৃতার সারসংক্ষেপ।

  • Share this:

নয়াদিল্লি: ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখ, বুধবার সকাল ১১টায় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এখানে রইল তাঁর বাজেট বক্তৃতার সারসংক্ষেপ।

‘মাননীয় স্পিকার, আমি ২০২৩-২৪ সালের বাজেট পেশ করছি। এটা অমৃতকালের প্রথম বাজেট’। বক্তৃতার প্রারম্ভে এক নতুন অর্থনীতির সূর্যোদয়ের পথ দেখান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

ভূমিকা: ১। আগের বাজেটের উপর ভিত্তি করে নতুন বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই বাজেট স্বাধীনতার ১০০ বছরের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে দেবে। আমরা সমৃদ্ধ ভারতের কল্পনা করি। যেখানে উন্নয়নের সুফল সমস্ত অঞ্চল এবং নাগরিকদের কাছে পৌঁছে যাবে। বিশেষ করে যুব, মহিলা, কৃষক, ওবিসি, তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিদের কাছে।

২। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিশ্ব ভারতীয় অর্থনীতিকে ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চলতি বছরে ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অনুমান করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কোভিড ১৯ এবং যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও সমস্ত প্রধান অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে এটা সর্বোচ্চ। ভারতীয় অর্থনীতি তাই সঠিক পথে রয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জ স্বত্বেও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ভারতীয় রেলে আরও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সুযোগ! বিরাট ইঙ্গিত নির্মলার

৩। আজ যখন ভারতীয়রা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বিশ্ব ভারতের কৃতিত্ব এবং সাফল্যের প্রশংসা করছে, আমরা নিশ্চিত যে বয়োজ্যেষ্ঠরা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন তাঁরা আমাদের এগিয়ে চলার এই প্রচেষ্টাকে আনন্দের সঙ্গে আশীর্বাদ করছেন।

একাধিক সংকটের মধ্যে স্থায়িত্ব: ১। ব্যাপক পরিসরে সংস্কার এবং সঠিক নীতির উপর আমাদের ফোকাস। যার ফলশ্রুতিতে কঠিন সময়ে ভাল কাজ করতে সাহায্য করছে। অনন্য বিশ্বমানের ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো, যেমন আধার, কো-উইন এবং ইউপিআই; অসম স্কেল এবং দ্রুত গতিতে কোভিড ভ্যাকসিনেশন ড্রাইভ; জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্য, মিশন লাইফ এবং জাতীয় হাইড্রোজেন মিশন অর্জনের মতো সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা ভারতের বৈশ্বিক প্রোফাইল অর্জনের প্রধান কারণ।

আরও পড়ুন: 'প্রাথমিকে সিবিআই তদন্ত, ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ!" বিস্ফোরক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

২। কোভিড ১৯ মহামারীর সময় ২৮ মাস ধরে ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে যাতে কেউ খালি পেটে শুতে না যায়। খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে পিএম গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার অধীনে আগামী এক বছরের জন্য সমস্ত অন্ত্যোদয় এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারগুলিতে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার পুরো খরচ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।

জি২০ সম্মেলনের সভাপতিত্ব, বিশ্বব্যাপী এজেন্ডা পরিচালনা: বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের এই সময়ে জি২০ সম্মেলনের সভাপতিত্ব বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ থিমের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধার্থে আমরা উচ্চাকাঙ্খী এবং জনকেন্দ্রিক এজেন্ডা পরিচালনা করছি।

২০১৪ সাল থেকে অর্জন: ১। ২০১৪ সাল থেকে সরকার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য উন্নত মানের এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। মাথাপিছু আয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ১.৯৭ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

২। এই ৯ বছরে ভারতীয় অর্থনীতিও আড়েবহরে বেড়েছে। বিশ্বে দশম স্থান থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ব্যবসার জন্য অনুকূল পরিবেশ, সুশাসন, উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে বৈশ্বিক সূচকে আমাদের অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।

৩। ২০২২ সালে ইপিএফও-র সদস্যতা দ্বিগুণ বেড়ে ২৭ কোটিতে পৌঁছেছে। ইউপিআই-এর মাধ্যমে ৭,৪০০ কোটি টাকার ডিজিটাল পেমেন্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতীয় অর্থনীতি আগের তুলনায় অনেক সুসংবদ্ধ হয়েছে।

৪। বেশ কিছু প্রকল্প মসৃণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। হাতেনাতে সুফল পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। এরকম কিছু স্কিম হল – ক) স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের আওতায় ১১.৭ কোটি পরিবারকে শৌচাগারকে খ) উজ্জ্বলা যোজনায় ৯.৬ কোটি পরিবারকে এলপিজি সংযোগ গ) ১০২ কোটি নাগরিককে ২২০ কোটি কোডিড ভ্যাকসিন ঘ) পিএম জন ধন প্রকল্পে ৪৭.৮ কোটি নাগরিককে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ঙ) পিএম সুরক্ষা বিমা এবং পিএম জীবন জ্যোতি যোজনার আওতায় ৪৪.৬ কোটি নাগরিককে বিমা কভার এবং চ) পিএম কিষাণ যোজনার আওতায় ১১.৪ কোটিরও বেশি কৃষককে ২.২ লক্ষ কোটি টাকা নগদ স্থানান্তর।

অমৃতকালের ভিশন: ১। অমৃতকালের জন্য আমরা চাই শক্তিশালী পাবলিক ফিনান্স সহ প্রযুক্তি-চালিত এবং জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতি। এটা অর্জনের জন্য ‘সবকা সাথ সবকা প্রয়াস’-এর মাধ্যমে জন ভাগিদারি অপরিহার্য।

২। এই অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডা পূরণের জন্য তিনটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রথমত, নাগরিকদের বিশেষ করে যুবকদের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তৃতীয়ত সমষ্টিগত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করা।

৩। স্বাধীনতার ১০০ বছরই আমাদের মূল ফোকাস। বিশ্বাস নিম্নলিখিত ৪টি সুযোগ অমৃতকালে যুগান্তকারী হতে পারে।

ক) মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন গ্রামীণ মহিলাদের ৮১ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে সংগঠিত করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা এই গ্রুপগুলিকে বৃহৎ উৎপাদক উদ্যোগ বা সমষ্টি গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাব। প্রত্যেক গোষ্ঠীর কয়েক হাজার সদস্য থাকবে। এবং সেগুলি পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত হবে। তাদের কাঁচামাল সরবরাহ এবং পণ্যের উন্নত ডিজাইন, গুণমান, ব্র্যান্ডিং এবং বিপণনের জন্য সহায়তা করা হবে। যেমনটা স্টার্টআপগুলির ক্ষেত্রে করা হয়, যা ইউনিকর্ন-এ পরিণত হয়েছে।

খ) প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা কৌশল সম্মান: শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দেশের কারিগররা গোটা বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। এঁরাই এই যুগের বিশ্বকর্মা। তাঁদের তৈরি হস্তশিল্প আত্মনির্ভর ভারতের চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথমবার তাঁদের জন্য সহায়তা প্যাকেজ আনা হয়েছে। এটা তাঁদের গুণমান এবং স্কেল বাড়াতে সাহায্য করবে। এই স্কিমে শুধু আর্থিক সহায়তা দেওয়াই লক্ষ্য নয়, এর সঙ্গে উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক ডিজিটাল কৌশল, প্রযুক্তির জ্ঞান, ব্র্যান্ডের প্রচার, স্থানীয় এবং বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সংযোগ, ডিজিটাল অর্থপ্রদান এবং সামাজিক সুরক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, ওবিসি, মহিলা এবং আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীকে ব্যাপক উপকৃত করবে।

গ) পর্যটন: ভারত দেশি, বিদেশি পর্যটকদের কাছে স্বর্গ। পর্যটন খাতে তাই বিশাল উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের চাকরি এবং উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। রাজ্যগুলির সক্রিয় অংশগ্রহণ, সরকারি কর্মসূচী এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সঙ্গে মিশন মোডে পর্যটনের প্রচার করা হবে।

ঘ) সবুজ দেশ: সবুজ জ্বালানি, সবুজ শক্তি, সবুজ চাষ, সবুজ গতিশীলতা, সবুজ ভবন, এবং সবুজ সরঞ্জাম সহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে এনার্জির দক্ষ ব্যবহারের নীতি তৈরির মাধ্যমে একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়িত করা হয়েছে। এর ফলে কার্বনের তীব্রতা কমবে।

বাজেটে অগ্রাধিকার: এই বাজেটে ৭টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এরা একে অপরের পরিপূরক। অমৃতকালে আমাদের পথপ্রদর্শক ‘সপ্তর্ষি’ হিসেবে কাজ করবে। ক) অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন খ) শেষ মাইল পর্যন্ত পৌঁছনো গ) অবকাঠামো এবং বিনিয়োগ ঘ) সম্ভাবনা উন্মোচন ঙ) সবুজ বৃদ্ধি চ) যুব শক্তি এবং ছ) আর্থিক খাত।

উন্নয়ন: সরকারের দর্শন হল ‘সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস’। কৃষক, মহিলা, যুব, ওবিসি, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, দিব্যাঙ্গজন এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বিভাগে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সুবিধা প্রদানই মূল লক্ষ্য। সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিতদের সামগ্রিক অগ্রাধিকার। জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ এবং উত্তর-পূর্বের দিকেও সরকারের দৃষ্টি রয়েছে। সেই প্রচেষ্টার উপর ভিত্তি করেই এই বাজেট।

কৃষির জন্য ডিজিটাল পরিকাঠামো: কৃষির জন্য ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামোর মাধ্যমে ওপেন সোর্স, ওপেন স্ট্যান্ডার্ড এবং আন্তঃচালিত পাবলিক গুডস হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কৃষকের সমস্ত সমস্যার সমাধান করবে। গ্রামীণ এলাকায় তরুণ উদ্যোক্তাদের কৃষিতে উৎসাহিত করতে এগ্রিকালচার এক্সিলারেটর ফান্ড তৈরি করা হবে। ফান্ডের লক্ষ্য কৃষকদের সমস্যার উদ্ভাবনী এবং সাশ্রয়ী মূল্যের সমাধান আনা। এটি কৃষি পদ্ধতির রূপান্তর, উৎপাদনশীলতা এবং মুনাফা বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তিও আনবে। তুলোর উৎপাদন বাড়াতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে ক্লাস্টার গঠন করব। এর অর্থ কৃষক, রাষ্ট্র এবং শিল্পের মধ্যে ইনপুট সরবরাহ, সম্প্রসারণ পরিষেবা এবং বাজার সংযোগের জন্য সহযোগিতা। আমরা ২,২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে উচ্চ মূল্যের উদ্যান ফসলের জন্য রোগমুক্ত, মানসম্পন্ন রোপণ সামগ্রীর প্রাপ্যতা বাড়াতে আত্মনির্ভর ক্লিন প্ল্যান্ট প্রোগ্রাম চালু করব। পশুপালন, দুগ্ধ ও মৎস্য খাতে ফোকাস রেখে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২০ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে।

Published by:Suman Biswas
First published:

Tags: Budget 2023, Union Budget 2023