#নয়াদিল্লি: টাটা গোষ্ঠীর হাতে গেল এয়ার ইন্ডিয়া (Air India)। শুক্রবার নিলামে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা পেল টাটা সন্স (Tata Sons)। ৬৮ বছর পর ফের টাটা গোষ্ঠীর হাতে এয়ার ইন্ডিয়া। ১৮ হাজার কোটি টাকা দাম দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা পেল টাটা সন্স (Tata Sons)। আবারও টাটা গোষ্ঠীর হাতেই এয়ার ইন্ডিয়া ফিরতে চলেছে বলেই খবর ছিল কিছুদিন আগেই। সরকারি সূত্রে খবর মেলে, এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা পেতে বিডে সর্বোচ্চ দর দিয়েছে টাটারাই। (Air India | Maharaja Legacy)
এয়ার ইন্ডিয়া এমন একটি বিমান সংস্থা, যারা ভারতকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল এবং বিশ্বকে ভারতে নিয়ে এসেছিল। দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানে চলা এই সংস্থা কিনতে কেউই প্রথমে আগ্রহ দেখায়নি। কারণ, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল বিমান সংস্থাটি। এনিয়ে তৃতীয়বার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্যারিয়ার এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির চেষ্টা চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার (Air India | Maharaja Legacy)। আগের সব জটিলতা এবার কেটে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কেন্দ্রের পরিকল্পনা, এয়ার ইন্ডিয়ার ১০০ শতাংশের পাশাপাশি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সম্পূর্ণ মালিকানা বিক্রি করে দেওয়া (Air India | Maharaja Legacy)।
এই বছরের মার্চে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি (Hardeep Singh Puri) বলেছিলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এয়ার ইন্ডিয়ার শতভাগ বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। এই এয়ারলাইন সরকারের সম্পদ। কিন্তু ৬০ হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝার কারণে একে ঝেড়ে ফেলার প্রয়োজন আছে।" ২০০০ সালে প্রথমবার এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির বিষয়ে কথা ওঠে। তার পর থেকে গত কয়েক বছরে গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল বয়ে গিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া চালিয়ে সরকারের প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছিল বলে জানিয়েছিলেন হরদীপ সিং পুরী। ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকার এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির জন্য তৎপর হয়েছিল। যদিও ২৪ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখার সিদ্ধান্তের ফলে কোন ক্রেতা এগিয়ে আসেনি। এর আগে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর (Atal Bihari Vajpayee) নেতৃত্বাধীন এনডিএ (NDA) সরকারও ২০০১ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সময় আবার কয়েকজন ক্রেতা আগ্রহ দেখিয়েছিল, তবে শেয়ার বিক্রি শেষ পর্যন্ত করা হয়নি।
এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিহাস স্বাধীন ভারতের চেয়েও পুরনো। জেআরডি টাটা (JRD Tata) পাইলটের লাইসেন্স পাওয়া প্রথম ভারতীয়। তিনি ১৯৩২ সালে করাচি এবং বোম্বাইয়ের (বর্তমান মুম্বই) মধ্যে এয়ারমেইল পরিষেবা (Airmail Service) চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি শীঘ্রই পরিষেবার ব্যাপ্তি ঘটান ও ১৯৪৬ সালে নাম বদলে হয় এয়ার ইন্ডিয়া। ১৯৫৩ সালে টাটার হাত থেকে এই উড়ানকে অধিগ্রহণ করে কেন্দ্র। যদিও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সংস্থার চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ চালিয়ে যান জেআরডি টাটা। ৭৮ সালে মোরারজি দেশাইয়ের (Morarji Desai) নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টি সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে সরে দাঁড়ান টাটা। যদিও ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) সরকার পরে তাঁকে আবারও ফিরিয়ে এনে এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডে বসান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সংস্থার বর্তমান সমস্যার শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। তৎকালীন ইউপিএ সরকার এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স মিলিয়ে দিয়ে প্রচুর নতুন বিমানের অর্ডার দিয়েছিল। আর সেই কারণে সংস্থার ঋণ হাজার হাজার কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে, অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলে নানা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি। পরিবর্তে জেট, ইন্ডিগো এবং অন্যান্য নতুন বিমান সংস্থাগুলি বাজার দখল করে ফেলে।
আরও পড়ুন: 'ঘরে' ফিরল এয়ার ইন্ডিয়া, ১৮ হাজার কোটি টাকায় বাজিমাত টাটার!
একটা সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম কম ছিল। সেই সময় এয়ার ইন্ডিয়া বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগকে বাড়িয়ে তুলেছিল এবং দেশের সংস্কৃতির মূর্তিমান দূত হিসেবে কাজ করেছিল। সংস্থাটি দেশের প্রধান প্রধান শহরে অফিস খুলে বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য ভারতীয় শিল্প ও নান্দনিকতার উপর ভিত্তি করে ব্র্যান্ড তৈরি করেছে। ভারতীয় শিল্পের অন্যতম বড় সংগ্রাহক হয়ে উঠেছে এয়ার ইন্ডিয়া। এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমএফ হুসেইন (MF Hussain), ভিএস গাইতোন্ডে, অঞ্জলি এলা মেননের মতো অনেক বিখ্যাত শিল্পীর নাম। একটি অনন্য ব্র্যান্ড তৈরির চেষ্টায় এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালকরা সালভাদর দালিকে (Salvador Dali) একটি অ্যাশট্রে ডিজাইন করতেও রাজি করান, যার প্রায় ২৫০টি প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ওই চিত্রশিল্পীর অনুরোধে একটি বাচ্চা হাতিকে স্পেনে পাঠানো হয়েছিল। হাতিটি স্পেনের একটি চিড়িয়াখানায় ছিল মৃত্যু পর্যন্ত। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার ‘মহারাজা’ মাসকটের (Maharajah Mascot) চেয়ে কোনও কিছুই বেশি করে তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানেনি। এয়ার ইন্ডিয়ার বাণিজ্যিক পরিচালক ববি কুকার কল্পনা এবং শিল্পী উমেশ রাওয়ের সহযোগিতায় নির্মিত 'মহারাজা' ম্যাসকট ১৯৪৬ সালে প্রথম আবির্ভূত হয়। শীঘ্রই ভারতীয় আতিথেয়তার প্রতীক হয়ে ওঠে ওই ম্যাসকটটি। ২০২১ সালে ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে মহারাজার।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Air India, Ratan tata, Tata Sons