নয়াদিল্লি: আজ, সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারি সংসদে নয়া আয়কর বিল পেশ করতে পারেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ৷ গত শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এই বিলে ছাড়পত্র দেয় ৷ সেই সময়েই জানানো হয়েছিল আসন্ন সপ্তাহেই লোকসভায় এই বিল পেশ করা হতে পারে ৷ আসতে চলেছে নতুন আয়কর বিল। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বাজেট পেশের সময় আয়কর আইনকে খতিয়ে দেখা ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। নতুন আয়কর বিলে কর ব্যবস্থাকে আরও সংক্ষিপ্ত, সহজ ও স্বচ্ছ করার কথা বলেছিলেন তিনি। কর দেওয়ার ক্ষেত্রে করদাতাদের অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে আইনগত কিছু সমস্যাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই কর আইন প্রণয়ণ হলে এই সমস্যাও মিটে যাবে।
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে পাশ হয় ২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরের কেন্দ্রীয় বাজেট। ওই দিনই বাজেট বক্তৃতার সময়ে নতুন আয়কর বিল আনার ঘোষণা করেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী নির্মলা। তিনি বলেন, ‘‘নতুন বিল ন্যায়ের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আয়করের অর্ধেক জটিলতা কাটানোর লক্ষ্যে এটিকে আনা হচ্ছে। করদাতা এবং প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিরা এটিকে খুব সহজে বুঝতে পারবেন।’’
নতুন কর ব্যবস্থায় একজন করদাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করতে পারবেন। যদি কারও বার্ষিক আয় ১২ লাখ টাকা হয়, তাহলে সেটাকে ৪ লাখ টাকা করে ভাগ করতে হবে। প্রথম ৪ লাখ টাকায় কোনও কর দিতে হবে না। ৪ থেকে ৮ লাখ টাকার উপর ৫ শতাংশ কর, যা ২০,০০০ টাকা। ৮ থেকে ১২ লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর, যা ৪০,০০০ টাকা। তাহলে মোট ৬০ হাজার টাকা আয়কর দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু রিবেটের কারণে তিনি পুরো টাকাই ফেরত পাবেন। তাঁকে এক পয়সা ট্যাক্স দিতে হবে না।যদি কারও বার্ষিক আয় ১২,১০,০০০ টাকা হয়, তাহলে অতিরিক্ত ১০,০০০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা ১,৫০০ টাকা। মোট কর ছাড় ৬১,৫০০ টাকা, তবে ১০,০০০ টাকার কর ছাড়ের আওতায় নেই, তাই প্রকৃত কর ছাড় ৫১,৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। এই নিয়ম ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
গত বছর পর্যন্ত বার্ষিক ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত ছিল। ৩ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হত। ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা আয়ে ১০ শতাংশ, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয়ে ১৫ শতাংশ, ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয়ে ২০ শতাংশ ১৫ লাখ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হত ৷ আগের বছর একটি ছাড়ও ছিল। সেটা হল বার্ষিক ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে কোনও আয়কর দিতে হত না। এ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে নতুন আয়কর কাঠামোয় ট্যাক্স স্ল্যাব বাড়ানো হয়েছে। এখন ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না। ৪ থেকে ৮ লাখ টাকা বার্ষিক আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর ধার্য হবে। ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা আয়ে ১০ শতাংশ, ১২ থেকে ১৬ লাখ টাকা আয়ে ১৫ শতাংশ, ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা আয়ে ২০ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ লাখ টাকা আয়ে ২৫ শতাংশ এবং ২৪ লাখ টাকার বেশি আয়ে ৩০ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হবে।
আয়কর ছাড়ের সীমা আগে ছিল ৭ লাখ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ১২ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ বার্ষিক ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত। এই সীমা বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষের কী উপকার হবে? সেই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানালেন অডিটর জয়রাজন। তিনি বলেন, “মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা মাথায় রেখেই ২০২৫-২৬ সালের নতুন আয়কর কাঠামোতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।” ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে এখন থেকে আর এক পয়সাও কর দিতে হবে না। বর্তমানে দুই ধরণের কর ব্যবস্থা চালু রয়েছে। পুরনো এবং নতুন কর ব্যবস্থা। পুরনো কর ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। নতুন কর ব্যবস্থায় কিছু সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে আয়কর ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি অন্যতম।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বক্তৃতা দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। দুপুর ২টো নাগাদ রাজভবন থেকে বিধানসভায় আসবেন বোস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অংশ নেবেন বাজেট বক্তৃতায়। বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ হবে।
বর্তমান আয়কর আইন সাধারণ করদাতাদের জন্য বেশ জটিল। আর এই জটিলতা থেকে বাঁচতে ও কোনও আইনি সমস্যায় না পড়তে করদাতারা বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হন। সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী নতুন যে আয়কর আইন আসতে চলেছে তা অনেক সহজ সরল হতে চলেছে, যা নাকি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন করদাতারা।
নতুন আয়কর আইন আয়তনে পুরনো আইনের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি হবে। আর নয়া এই আইনের ভাষা হবে সহজতর যাতে তা সাধারণ করদাতাদের বোধগম্য হয়।