Bankura: কবিগুরুর প্রয়াণ তিথির প্রাক্কালে তাঁর বাঁকুড়ায় আসার ঘটনার স্মৃতিচারণা
- Published by:Soumabrata Ghosh
Last Updated:
শারিরীক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করে সেদিন বাঁকুড়ার শহরের তামলিবাঁধে \"বাঁকুড়া নারী ও শিশুমঙ্গল সমিতির\" প্রসূতি সদনের ভিত্তিব প্রস্তর স্থাপন করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
#বাঁকুড়া : শারিরীক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করে সেদিন বাঁকুড়ার শহরের তামলিবাঁধে \"বাঁকুড়া নারী ও শিশুমঙ্গল সমিতির\" প্রসূতি সদনের ভিত্তিব প্রস্তর স্থাপন করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্ব কবি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সব থেকে আনন্দ পেয়েছিলেন। সালটা ছিল ১৯৪০,আর দিনটা ছিল ৩ মার্চ। গবেষকরা বলেন,সেদিন কবি গুরুর শরীর ছিল অসুস্থ। তাই গাড়ী থেকে না নেমে এই ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান সেরে ফেলার অনুরোধ জানান অনেকেই।কিন্তু তাতে কবি গুরুর মন সায় দেয়নি। উল্টে তিনি বলে বসেন “এখানে যে কয়টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি—এইটি হচ্ছে সবচেয়ে আনন্দজনক অনুষ্ঠান। আমি যদি গাড়িতে বসে এই অনুষ্ঠানের কাজ করি তবে সেটা মাতৃজাতির প্রতি উপেক্ষাই প্রকাশ পাবে। শারীরিক ক্লান্তি তো এ বয়সে থাকবেই—কিন্তু বিবেকের কাছে আমি অপরাধী হতে চাই না।” তার পর নিজে হাতে এই মাতৃসদনের ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন কবি।সেই থেকে আজও এই মাতৃ সদন ও শিশু মঙ্গল কেন্দ্রটি মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে চলেছে।এখন রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর এই পরিষেবা দেয়। কবি গুরুর স্মৃতি বিজড়িত এই ভবন এবার হেরিটেজ ভবনের স্বীকৃতির জন্য রাজ্যের হেরিটেজ কমিশনের কাছে আবেদন করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
বাঁকুড়ার ডেপুটি সিএমওএইচ (৩) ডাঃ সজল বিশ্বাস বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং এখানে এসেছিলেন এবং এই বিল্ডিং এর ভিত্তিব স্থাপন করেছিলেন। এটি আমাদের সকলের গর্ব। তিনি বলেন কবি গুরুর আশীর্বাদকে পাথেয় করে এই ভবনে অবিচ্ছেদ্য ভাবে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের কাজ চলে আসছে। কবি গুরুর স্মৃতি বিজড়িত এই ভবনের আরও শ্রীবৃদ্ধি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। এবার হেরিটেজ ভবনের স্বীকৃতির জন্য রজ্যের হেরিটেজ কমিশনের কাছে আবেদন করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে কবিগুরুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে কবিগুরুর একটি আবক্ষ মূর্তি তৈরীর ব্যবস্থা করা হবে।
advertisement
কবিগুরুর দুদিনের বাঁকুড়া সফরের প্রথম দিন, ১ মার্চ, বেলা ১২টা নাগাদ বাঁকুড়ার মেজিয়াঘাটে উপস্থিত হন তিনি। কবির সাথে ছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা ঠাকুর, চিকিৎসক অমিয় চক্রবর্তী, সুধাকান্ত রায়চৌধুরী, অনিলকুমার চন্দ প্রমুখ। বোলপুর থেকে খানা জংশন পর্যন্ত এসেছিলেন রেলপথে। তারপর সেখান থেকে রানীগঞ্জ পৌঁছন মোটর গাড়িতে চড়ে। তখন মেজিয়া সেতু ছিলনা ফলে কবির মোটর গাড়িটিকে নৌকায় করে পার করানো হয় দামোদর নদ। সেখান থেকে মোটর গাড়ি করে কবি পৌঁছান গন্ধেশ্বরী ঘাটে। এই দুদিন কবি শহরের হিল হাউসে রাত্রি যাপন করেন।
advertisement
advertisement
আরও পড়ুনঃ সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির
বিকেল ৪টে নাগাদ ‘বাঁকুড়া নারী-সমিতি ও শিশুমঙ্গল সমিতি’র সদস্যেরা কবিকে সেখানেই অভ্যর্থনা জানান। যাঁর আহ্বানে কবি বাঁকুড়া এসেছিলেন, সেই ঊষা হালদার সে দিন কবি-প্রশস্তি পাঠ ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ২ মার্চ সকালে নবনির্মিত চণ্ডীদাস অভিনয় গৃহে কবির অভ্যর্থনায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে একে-একে অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন বাঁকুড়া পুরসভার তৎকালীন সভাপতি হরিসাধন দত্ত, বাঁকুড়ার জনগণের পক্ষ থেকে ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ অভ্যর্থনা সমিতি’র সভাপতি তথা ‘প্রবাসী’র সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, ‘বাঁকুড়া সাহিত্য পরিষদ’-এর পক্ষে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, বাঁকুড়া শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে নগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং বিষ্ণুপুরবাসীর পক্ষ থেকে নরেন্দ্রনাথ কর।
advertisement
আরও পড়ুনঃ রাস্তার বেহাল দশা! সমস্যায় রাধামোহনপুরের বাসিন্দারা
নগেন্দ্রনাথবাবু সেদিন কবির হাতে তুলে দেন একটি সুন্দর নকশা-করা শঙ্খ। এর পরে কবি মাতৃ ও শিশু সদনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অন্যদিকে,জেলার বিশিষ্ট নাগরিক এবং শিল্পীরা চান কবি গুরুর এই স্মৃতি বিজড়িত ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ হোক। প্রাচীণ ভবনটির হেরিটেজ স্বীকৃতিরও দাবি তুলেছেন তারা।পাশাপাশি, এই ভবনের সামনে কবি গুরুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনেরও দাবি তুলেছেন। এখনও এই ভবনের দেওয়ালে কবি গুরুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ফলক জ্বলজ্বল করছে।কিন্তু ভবনটিত্র দীর্ঘ দিন রক্ষানাবেক্ষণ না হওয়ার ছাপ স্পষ্ট। তাই এই ভবনের মুল আদল ও গঠনশৈলী বজায় রেখে ভবনটির সংস্কার করা প্রয়োজন। কিন্তু অজানা কারণে এই কাজ অধরাই রয়ে গেছে।
advertisement
Joyjiban Goswami
Location :
First Published :
August 05, 2022 8:59 PM IST