Gopala Kala 2021: জন্মাষ্টমী তিথির কোন মুহূর্ত গোপাল কাল নামে সুপরিচিত? জানুন এর মাহাত্ম্য এবং উদযাপনের রীতি

Last Updated:

গোপাল কাল উদযাপনে দেশের মহারাষ্ট্রে এবং গুজরাতে আয়োজন করা হয় দহি হান্ডি (Dahi Handi), অনেকে একে দহি কাল (Dahi Kala) নামেও অভিহিত করে থাকেন।

Gopala Kala 2021: কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী (Krishnadasa Kaviraja Goswami) তাঁর শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত (Sri Chaitanya Charitamrita) গ্রন্থে লিখে গিয়েছেন- "কৃষ্ণের যতেক খেলা, সর্বোত্তম নরলীলা, নরবপু তাহার স্বরূপ"! এই জায়গায় এসে, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর (Krishna Janmashtami) প্রাক্কালে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে- এই 'যতেক খেলা' বা 'নরলীলা'-র মধ্যে আবার সর্বাধিক মধুর বলতে হবে কাকে?
কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী এর পরের ছত্রেই তার উত্তর দিয়েছেন, লিখেছেন- "গোপবেশ বেণুকর, নবকিশোর নটবর, নরলীলার হয় অনুরূপ"! অর্থাৎ ভক্তকবি জোর দিতে চেয়েছেন শ্রীকৃষ্ণের মধুর রূপে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন কৃষ্ণের লীলাসমূহকে মূলত দুই ভাগে ব্যাখ্যা করে থাকে। এর মধ্যে একটি হল মধুর রূপ এবং অন্যটি হল ঐশ্বর্য রূপ। শ্রীমদ্ভাগবতম (Srimad Bhagavatam) বা ভাগবত পুরাণ (Bhagavata Purana) অনুসারে গোকুলে এবং বৃন্দাবনে নন্দগোপের গৃহে, যশোদার আঁচলছায়ায়, অফুরন্ত প্রশ্রয়ে যে পর্বটি কেটেছে, তাকেই বলতে হবে মধুর রূপ। কালীয় দমন, গিরিগোবর্ধন ধারণ, অঘাসুর-প্রলম্বাসুর-তৃণাবর্ত বধ- এই সবই ঐশ্বর্য রূপের দ্যোতক, যার তুঙ্গবিন্দু কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের বিষাদযোগ দূরীকরণে, শ্রীমদ্ভাগবতগীতা (Srimad Bhagavad Gita) ব্যাখ্যায়।
advertisement
গীতায় শ্রীভগবান স্বয়ং বলে গিয়েছেন যে যিনি বুঝতে ইচ্ছুক নন, তাঁর কাছে মহাভারতের (Mahabharata) ভীষ্মপর্বের এই আঠেরোটি অধ্যায় ব্যাখ্যা করা অনুচিত। সন্দেহ নেই, গীতায় যে মহতী জীবনবোধের কথা বিশদে বলেছেন তিনি, তা সংসারবদ্ধ সাধারণ জীবের গম্যাগম্যের অতীত। কিন্তু কৃষ্ণের মধুর রূপ, তাঁর বাললীলা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মনোহারী, প্রতি বছর জন্মাষ্টমী তিথিতে যার উদযাপন সেই কথা প্রমাণ করে দেয়। আবার ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথির মধ্যরাত্রের জন্মমুহূর্তের পূজা সমাপ্ত হওয়ার পরে যে গোপাল কাল (Gopala Kala) শুরু হয়, তার উদযাপন এই মধুর লীলার অন্যতম দিক, এটি আর কিছুই নয়, বালকৃষ্ণের (Bal Krishna) বা গোপালের সপার্ষদ মাখন-ননী চুরির ইতিবৃত্ত! যে কারণে এই গোপাল কাল উদযাপনে দেশের মহারাষ্ট্রে এবং গুজরাতে আয়োজন করা হয় দহি হান্ডি (Dahi Handi), অনেকে একে দহি কাল (Dahi Kala) নামেও অভিহিত করে থাকেন।
advertisement
advertisement
শ্রীমদ্ভাগবত এবং ননী চুরির ইতিবৃত্ত:
শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের অষ্টম অধ্যায়ে যশোদার কাছে গোকুলের গোপিনীদের অভিযোগের সূত্রে এই লীলার পরিচয় দিয়েছেন ঋষি বেদব্যাস। ১৯২৭ সালে শ্রীযুক্ত তারাকান্ত কাব্যতীর্থ ভট্টাচার্য যে অনুবাদ করেছেন, তা অবলম্বনে দেখে নেওয়া যাক সেই অভিযোগ এবং মাখন-ননী চুরির ধরন- কখনও বা চুরি করে সেই স্বাদু দধি-দুগ্ধ নিয়ে নিজে খায় এবং বানরদের বিলিয়ে দেয়, বানরেরা না খেলে ভাঁড়গুলো ভেঙে ফেলে। শিকেয় রাখা পাত্রের মধ্যে যদি দধি-দুগ্ধ থাকে, তবে তা নেওয়ার ইচ্ছা হলে সেই পাত্রের তলায় ফুটো করে দেয়! আবার নবম অধ্যায়ের যমলার্জুন উদ্ধারের প্রাক্কালে শ্রীমদ্ভাগবত আমাদের জানায় যে একদা উনুনে রাখা দুধ উথলে উঠলে যশোদা পুত্রকে স্তন্যদানে বিরত হয়ে সেই দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণের তখনও তৃপ্তি হয়নি, অতএব- শিলাখণ্ড দ্বারা শিকেয় রাখা দধিভাণ্ড ভেঙে ফেললেন এবং নির্জনে বসে নবনীত ভক্ষণ করতে লাগলেন!
advertisement
নিজের বাড়ি হোক কী পরের বাড়ি- কৃষ্ণের এই দধিভাণ্ড ভাঙা থেকে উদ্ভব হয়েছে দহি হান্ডি উৎসবের। যে কৃষ্ণের জন্মে অষ্টম সংখ্যাটি রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ, যিনি অষ্টম গর্ভের সন্তান, যাঁর জন্মতিথি অষ্টমী, তাঁর লীলা বর্ণনার অষ্টম অধ্যায়ের উপজীব্য, সন্দেহ কী, ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে!
দহি হান্ডি উদযাপনের লোকরীতি:
লোকবিশ্বাস মতে, শিকেয় ঝোলানো দধিভাণ্ড ভাঙার আওয়াজ যাতে কারও কানে না যায়, সেই জন্য গোপবালকেরা একে অপরের কাঁধে উঠে দাঁড়াত, তাদের কাঁধে ভর দিয়ে দধিভাণ্ডের কাছে পৌঁছে যেতেন কৃষ্ণ এবং বলরাম। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতে তার অনুসরণেই যুবকেরা একে অপরের কাঁধে উঠে এক ত্রিকোণবিশিষ্ট সিঁড়ি তৈরি করেন, পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে যে কোন দলের মুখপাত্র আগে উঠে দইয়ের হাঁড়িটি ভাঙতে পারবেন! এক্ষেত্রে হাঁড়ির মধ্যে দই, দুধ, ঘি, মধু, জল ছাড়াও রাখা হয় রুপোর টাকা, বিজয়ী দল তা পুরস্কার হিসেবে পেয়ে থাকে।
advertisement
গত বছরে করোনা পরিস্থিতির কারণে দহি হান্ডির উদযাপন বন্ধ ছিল। এবারেও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে (Uddhav Thackeray) সাড়ম্বরে দহি হান্ডি উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কিন্তু সাড়ম্বরে উদযাপনে লোকসমাবেশের প্রশ্ন থাকলেও গোপাল কালের পুণ্যলগ্নে যে পারিবারিক পূজার আয়োজন হয়ে থাকে, সেখানে ভগবানকে উৎসর্গ করা হয় একটি দধিপূর্ণ কলস। অবশ্য, শুধুই দধি নয়, কৃষ্ণের প্রিয় আরও নানা সুখাদ্যও এই অবসরে ভোগ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। মধ্যরাতের পূজায় যেমন ৫২ রকমের ভোগ উৎসর্গ করা হয়, এক্ষেত্রে তা হয় না। নির্দিষ্ট কয়েকটি উপাদানেই সীমিত থাকে পারিবারিক দহি হান্ডি অর্পণ এবং গোপাল কালের পূজা।
advertisement
গোপাল কালের পূজা এবং পারিবারিক দহি হান্ডি উদযাপনের প্রথা:
১. কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পূজা দুই অংশে বিন্যস্ত। একটি মধ্যরাত্রে জন্মমুহূর্তের পূজা। দ্বিতীয়টি হল গোপাল কাল অনুসারে দহি হান্ডি নিবেদন এবং দিবাভাগের পূজা।
২. এক্ষেত্রে একটি মাটির হাঁড়ি নিয়ে তার গায়ে সাধ্যমতো আলপনা দিয়ে তাকে সাজিয়ে তুলতে হয়।
৩. এর পরে আলপনা শুকিয়ে গেলে হাঁডির ভিতরটা ভালো করে ধুয়ে নিতে হয়।
advertisement
৪. দহি হান্ডির অন্যতম উপাদানই হল চিঁড়ে এবং দই। তাই হাঁড়ির মধ্যে অবশ্যই এই দুই উপাদান রাখতে হবে। সঙ্গে ঘি, মধু, মিছরি- এই তিন কৃষ্ণের প্রিয় খাদ্য উপাদানও রাখতে হবে।
৫. এর পরে দহি হান্ডি নিবেদনের পঞ্জিকা নির্ধারিত লগ্ন দেখে তা নিবেদন করতে হবে শ্রীকৃষ্ণকে। ভগবানকে নিবেদনের পরে তা পরিবারের সদস্যেরা গ্রহণ করবেন ভোগ হিসাবে।
গোপাল কালের পূজা এবং পারিবারিক দহি হান্ডি উদযাপনের পঞ্জিকা নির্ধারিত পুণ্য লগ্ন:
পঞ্জিকা অনুসারে চলতি বছরে ৩১ অগাস্ট রাত ১২টা ১৭ মিনিট থেকে রাত ১টা ০৩ মিনিট পর্যন্ত ৪৬ মিনিটব্যাপী সময়ই কৃষ্ণের নিশীথ কালের আরাধনার জন্য প্রশস্ত। এর পরেই শুরু হবে গোপাল কাল। এটি যেহেতু দিবাভাগের পূজা এবং এক্ষেত্রে চোগাড়িয়া যোগ আবশ্যক, সেই সূত্রে চলতি বছরে ৩১ অগাস্ট দুপুর ২টো ১৪ মিনিট থেকে দুপুর ৩টে ৪৮ মিনিটের মধ্যে কৃষ্ণকে দহি হান্ডি অর্পণ করা যায়। তবে চলতি বছরে চোগাড়িয়া যোগ সান্ধ্যকালেও পড়েছে, সেই অনুসারে ৩১ অগাস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিট থেকে রাত ৮টা ২২ মিনিটের মধ্যেও দহি হান্ডির ভোগোৎসব সম্পন্ন করা যায়।
Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
জ্যোতিষশাস্ত্র সংক্রান্ত সব খবর পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ যার মধ্যে রয়েছে আজকের রাশিফল (Ajker Rashifal), জ্যোতিষসংক্রান্ত টিপস, গ্রহরত্ন ( Gemstone ) এবং ট্যারো কার্ড ( Tarot Card ) ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/জ্যোতিষকাহন/
Gopala Kala 2021: জন্মাষ্টমী তিথির কোন মুহূর্ত গোপাল কাল নামে সুপরিচিত? জানুন এর মাহাত্ম্য এবং উদযাপনের রীতি
Next Article
advertisement
MGNREGA: মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! কোটি কোটি কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থে আঘাত, কেন্দ্রের নয়া ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
  • মনরেগা প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব সোনিয়া গান্ধি

  • কংগ্রেসে নেত্রীর দাবি, মনরেগা প্রকল্পকে কার্যত ধ্বংস করে দিল বিজেপি

  • প্রকল্পকে বদলের আইনকে ‘কালো আইন (ব্ল্যাক ল)’ বলে উল্লেখ্য সোনিয়ার৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement