শনিবার জন্মদিনের ‘সারপ্রাইস’ দেবে বলে প্রায় ১০-১২ জন বন্ধু মিলে তাকে ফোন করে কোতবাজার এলাকায় ডাকে। ওই ছেলেটি সেখানে গেলে বন্ধুরা সবাই মিলে তাকে কার্যত ‘চমকে’ দেয়। প্রথমে জোর করে তার জামা খোলা হয়। তারপর হাতদুটো পিছনে বাঁধা হয়। হাত দুটি পিছমোরা অবস্থায়, কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত সেলোটেপ জড়ানো হয়। তারপর বন্ধুরা সবাই মিলে ওই ছাত্রটির মাথায় ডিম ফাটিয়ে ও মুখে কালি মাখিয়ে তাকে রাস্তায় বের করে। ওই অবস্থাতেই তাকে নিয়ে ঘোরানো হয় গোটা কোতবাজার এলাকা। বন্ধুদের জন্মদিন পালনের নমুনা দেখে কার্যত ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা ছাত্রটির। কাঁদোকাঁদো গলায় সে জানায়, "এটা জন্মদিন নয়, আমার মৃত্যুদিন পালন করা হচ্ছে।" তবে এভাবে কেন জন্মদিন পালন? বন্ধুদের দাবি, এটাই এখন ট্রেন্ড, সর্বত্র এটাই চলছে। তবে তারা কোথা থেকে শিখল এই ট্রেন্ড? তাদের উত্তর, কলেজ মাঠে সিনিয়ররা এভাবেই নিজেদের বন্ধুদের জন্মদিন পালন করে। তাছাড়া ফেসবুক তো আছেই। বন্ধুদের দু’একজন আবার ভিডিও করে গোটা ঘটনাটির। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়াই নাকি তাদের মূল উদ্দেশ্য!
advertisement
বন্ধুদের প্রত্যেকের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। অধিকাংশই মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ ও কলিজিয়েট স্কুলের পড়ুয়া।এভাবে জন্মদিন পালন ঘিরে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মনরোগ বিশেষজ্ঞদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ভিডিও ভাইরাল করে দিয়ে প্রচারের আলোয় আসার নেশা চেপে বসেছে এইসব অল্পবয়সীদের মধ্যে। তাই ভাইরাল হওয়ার লক্ষ্যে জন্মদিন পালনেও অভিনবত্ব নিয়ে আসছে তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, "প্রথমে ভেবেছিলাম ওই ছেলেটিকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখলাম জন্মদিন পালন হচ্ছে। এইভাবে জন্মদিন পালন জীবনে প্রথম দেখলাম। নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই।" তবে বিষয়টিকে আবার গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না অনেকেই। তাঁদের দাবি, ওরা নিজেদের মধ্যে মজা করে জন্মদিন পালন করছে, করতেই পারে।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের (MMCH) মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrist) ডাঃ কাবেরী ভট্টাচার্য বলেন, "কেন এরকম হচ্ছে, ভালো করে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে, বিষয়টি একেবারেই স্বাভাবিক নয়! উচিতও নয়। এর ফলে, অপর বন্ধুর যে কষ্ট হচ্ছে বা সম্মানহানি হচ্ছে, তা বোঝার মতো শক্তি এই বয়সের ছেলেমেয়েদের নেই। বিষয়টা মজার আকারে করলেও, ওই ছেলেটির উপর তা মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এটা এক ধরনের র্যাগিং (Ragging) এর মতো বিষয়। অনেক ছেলেমেয়ে এর ফলে ডিপ্রেশেনে (Depression) চলে যেতে পারে। তাই, এই ধরনের বিষয়ে শিক্ষক ও বাড়ির লোকেদের নজর দেওয়া উচিত।"