পশ্চিম মেদিনীপুরের বাংলা-উড়িষ্যার সীমান্তবর্তী দাঁতন ইতিহাসের জন্য প্রসিদ্ধ। দাঁতনের বাঁকে-বাঁকে নানা ইতিহাস। ঘুরে দেখতে পারেন দাঁতনের মোগলমারি বৌদ্ধ বিহার। খড়গপুর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক মোগলমারি গ্রাম, আনাচকানাচে লুকিয়ে কত না ইতিহাস।
কেউ মনে করেন, মোগলমারি গ্রামের নাম ছিল অমরাবতী। সেই অঞ্চলের রাজা বিক্রমাদিত্যের কন্যা সখীসেনার অধ্যয়নের জায়গা ছিল এটি। সেখান থেকে এই নাম এসেছে। অন্যদিকে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তাঁর গ্রন্থ সি ইউ কি’-তে বঙ্গদেশের চার রাজ্যের বিশেষ বর্ণনা দিয়েছিলেন। পুন্ড্রবর্ধন, সমতটী, কর্ণসুবর্ণ এবং তাম্রলিপ্ত। এই তাম্রলিপ্ত রাজ্যে ১০টি বৌদ্ধবিহার ও এক-হাজার বৌদ্ধ সন্নাসীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত তাম্রলিপ্ত সন্নিহিত অঞ্চলে কোনও বৌদ্ধবিহার-ই আবিষ্কৃত হয়নি, মোগলমারি ছাড়া।
advertisement
১৯৯৯ সালে সুবর্ণরেখার গতিপথ ধরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক অশোক দত্ত দাঁতন-এর মোগলমারি- তে এসে, সখিসেনা ঢিবি নামে এক ঢিবির সন্ধান দেন। ২০০৩-০৪ সাল নাগাদ খনন কার্য শুরু হয় দাঁতনের মোগলমারিতে। খননে পাওয়া যায় নকশাযুক্ত ইট, বৌদ্ধ ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীদের বাসস্থানের কুঠুরি। পাওয়া যায় ত্রিরথ কাঠামো যুক্ত নকশা যা দেখে গবেষকদের প্রাথমিক অনুমান, স্থানটিতে মন্দির বা গর্ভগৃহ ছিল। গ্রামের অভ্যন্তরে খনন চালিয়ে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধস্তূপ ও এক বিশেষ ধরনের মৃৎপাত্- সহ নানা প্রত্ন সামগ্রী পাওয়া যায়।
এরপর ২০০৬, ২০০৭ সাল নাগাদ খননে ঢিবির পূর্ব ও পশ্চিম দিকে পাওয়া যায় নকশাযুক্ত ইট দ্বারা সুসজ্জিত দেওয়াল, স্টাকো পলেস্তারা যুক্ত দেওয়াল, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার কুঠুরি। উদ্ধার হয় খণ্ড-বিখণ্ড বুদ্ধের মূর্তিও। এরপর থেকে একের পর এক খননে নানান ইতিহাসের দলিল উদ্ধার হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন এটি ছিল একটি মহাবিহার। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে মোগলমারিতে বৌদ্ধ বিহারের সংরক্ষণ ও সাজিয়ে তোলার কাজ হয়েছে।
Ranjan Chanda