আবার লেখার ভাষাও সাধারণের মুখের ভাষা। চেনা কথ্যভাষায় সঠিক আবেদনটি তুলে আদিবাসী, গ্রাম্য মানুষের মনের কথা বলতে পারেন তিনি। তাই লোকমুখে আর পরিচয় লোককবি হিসেবে। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা তাঁর “লেজুড় মাহাত্ম্য” বিপুল জনপ্রিয়। গ্রামের অতি সাধারণ মানুষের জীবন যাপন, যন্ত্রণা, সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা তাঁর লেখার বিষয়। তিনি থাকেন অতি সাধারণ একটি মাটির ঘরে। তাঁর যত্নের, আগ্রহের সাথী বইগুলোকে রেখেছেন ইটের ছোট্ট ঘরে। তাঁর কথায় কঠিন শব্দ চয়ন কিংবা বিশুদ্ধ বাংলায় সাধারণ মানুষকে নিয়ে অনন্য সাহিত্য সৃষ্টি অনেক বেশি উজ্জ্বল হয় কিন্তু যাঁদের জীবন নিয়ে সাহিত্য সম্পদ নির্মাণ হয় তা তাঁদের কাছেই ঠিক বোধগম্য হয় না।
advertisement
সেই বাস্তব শিক্ষা থেকেই তিনি আঞ্চলিক ভাষায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মুখের ভাষায় রচে চলেন কবিতা। সে এক দেশের সঙ্গে অপর দেশের লড়াই হোক বা অত্যাধুনিক সভ্যতার গর্বের কোনও। ভ্রষ্ট নেতা থেকে বর্তমান মানুষ ও সমাজের সংকট। তাঁর কবিতা ভাবায়। পরেশ বেরার চিন্তা চেতনায় অনন্য হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষের মুখের ভাষা।
তাদের ব্যথা, যন্ত্রণার কাহিনি। সেই এলাকার মানুষের জন্যেই তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি । এখানেই সফল লোককবি পরেশ বেরা। তিনি নিজে যেমন সাধারণ জীবন যাপন করেন তেমনি থাকেন প্রচারের আড়ালে। নিভৃতে বসে যন্ত্রণা লিখে রাখেন এ সভ্যতার, এ সমাজের এবং মানুষের। পরেশ বেরা ভারতীয় ডাক বিভাগের এক কর্মী। কবিতা লেখার পাশাপাশি সুবক্তা, বাচিক শিল্পী।
বাড়িতে গড়েছেন কথাবলা পাঠাগার। তিনি বলেন, কথা বলতে শিখতে হয়। আমার বলা কথা যেন অপরকে আঘাত না করে। আমার কবিতা যেন খেটে খাওয়া মানুষের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। তাদের একজন আমি। তাদের কথাই লিখি তাদের ভাষায়। সারাবছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর, বীরসা মুণ্ডা, সিধু কানুর চর্চা নিয়েই চলে। বাড়িতে খুলেছেন বীরসা মুণ্ডা স্মৃতি শিক্ষা সদন নামে অবৈতনিক বিদ্যালয়। তাঁর সঙ্গে কথা বললেও আপনারও ভালবাসতে ইচ্ছে করবে।
Ranjan Chanda