প্রসঙ্গত, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তৎকালীন রাজা অজিত সিংয়ের দ্বিতীয় পত্নী রানী শিরোমণি। তাঁর আন্দোলনে সামিল হয়েছিল জঙ্গলমহলের প্রাচীন জনজাতির মানুষ। সেই বিদ্রোহকে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা আক্ষা দিয়েছিলেন 'চুয়াড় বিদ্রোহ' নামে।
আরও পড়ুন- বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত হল সাহিত্য সম্মেলন ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা
advertisement
প্রাচীন কর্ণগড়ের প্রতিষ্ঠাতা হলেন রাজা ইন্দ্রকেতু। পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র নরেন্দ্রকেতু নতুন করে তৈরি করেন আরেকটি গড় “মনোহরগড়” এবং সেখানেই তিনি থাকতেন। এরপর তিনি স্থানীয় এক লোধা সর্দার রণবীর সিংহকে দেন রাজ্য শাসনের ভার। রণবীর ছিলেন অপুত্রক। সেজন্য তিনি অভয়া নামে এক মাঝি সম্প্রদায়ের পুত্রকে দত্তক নেন। এভাবেই বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে কর্ণগড়ের রাজ শাসন।
আরও পড়ুন- মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে জেলা পুলিশ গঠন করল বিশেষ মহিলা পুলিশ টিম "উইনার্স"
একসময় কর্ণগড়ের রাজা হন যশোবন্ত সিংহ। যশোবন্তের পর কর্ণগড়ের রাজা হন তাঁর পুত্র অজিত সিংহ। তাঁর দুই রাণী— রানী ভবানী ও রানী শিরোমণি। অজিত সিংহ নি:সন্তান অবস্থায় মারা যান। রানী শিরোমণি ছিলেন প্রজাদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। প্রজা বলতে জঙ্গল মহলের চূয়াড়, মাঝি, লোধা, কুর্মি জনজাতির মানুষেরা। এদের নিয়েই রানী শিরোমণি তৈরি করেন এক বিশ্বস্ত জনবল।
ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রথম রাজনৈতিক বন্দি, তিনি কর্ণগড়ের রানী শিরোমণি। মেদিনীপুর শহর ৬০ নং জাতীয় সড়কে শালবনীর রাস্তা ধরে ভাদুতলা পেরিয়ে গোদাপিয়াশাল। তার আগেই জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে ডানদিকে ঘুরে গেছে একটি রাস্তা। এই জঙ্গল পথে এঁকে-বেঁকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এগিয়ে রানী শিরোমণির কর্ণগড়। পরিখা ঘেরা রাজপ্রাসাদ এবং তার ভেতরেই একটি জনপদ। জঙ্গলমহলের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি জলস্রোত ক্রমশ নদীর চেহারা নিয়েছে যে জায়গায়, সেটিই কর্ণগড়ের অন্দরমহল। ছোট্ট নদী পারাং। গড়ের দু’ দিক দিয়ে এই পারাং নদী একসঙ্গে মিলিত হয়ে গড়ের পাশে তৈরি করেছে প্রাকৃতিক পরিখা।
গড়ের ভেতরে মা মহামায়ার মন্দির। মন্দিরে কর্ণগড়ের ঈষ্টদেবী মা মহামায়া ও দণ্ডেশ্বর শিব। তার পাশেই পঞ্চমুণ্ডির আসন। সবটাই পাথরের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। ১৭৬৭-তে পাইকান জমি বাতিল করতেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হলো চূয়াড় বিদ্রোহ। বিদ্রোহ দমনে নেমে ইংরেজরা জঙ্গলমহলের বেশকিছু উপজাতি যোদ্ধাকে গাছের ডালে ফাঁসি দেয়। উদ্দেশ্য, বিদ্রোহীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা। কিন্তু প্রজারা ভয় না পেয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করে দ্বিতীয়বার বিদ্রোহ। এবার এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন কর্ণগড়ের রানী শিরোমণি।
রানী শিরোমণি তাঁর প্রজাদের নিয়ে তৈরি করলেন এক শক্তিশালী গেরিলা যোদ্ধা বাহিনী। তির-ধনুক, লাঠি, বর্শা, বল্লম, টাঙি, বাঁটুল সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সেজে উঠলো তাঁর বীর বাহিনী। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল ইংরেজরা, চূয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।কেউ কেউ বলেন, কর্ণগড় দুর্গেই রানীকে খুন করা হয়। কারো মতে, রানীর মৃত্যুর তারিখ ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই এপ্রিল।
Partha Mukherjee