এ বিষয়ে অভিজ্ঞ এক পুরোহিত জানিয়েছেন, মকর সংক্রান্তির পিছনে রয়েছে গ্রাম বাংলার পুজোর সংযোগ। ইতু পুজো এবং টুসু পুজোর সঙ্গে যোগ রয়েছে এই তিথির। অগ্রহায়ণ মাসে ইতু পুজো সম্পন্ন হওয়ার পর, পৌষ মাস থেকে শুরু হয় টুসু পুজো। একমাস ধরে চলে এই পুজো। মকর সংক্রান্তির দিন টুসু বিসর্জন দেওয়া হয়। সঙ্গে আরাধনা করা হয় মা গঙ্গার। তারপর গঙ্গা অথবা সাগরে স্নান করে শুদ্ধিকরণ করা হয় দেহের, মনের। এরপর থেকে সারাদিন ধরে এই পূণ্য স্নান চলতে থাকে।
advertisement
আরও পড়ুনঃ নেই মজিদ মাস্টার, ১২ বছর পর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসনে উড়ল লাল পতাকা
ধার্মিকদের বিশ্বাস, মকর সংক্রান্তির পূণ্য তিথিতে দেহ, মনের শুদ্ধিকরণ হয়। মন থেকে পাপ মুছে যায়। মা গঙ্গার আরাধনার মাধ্যমে হয় পুণ্য লাভ। সেই জন্য মকর সংক্রান্তিতে ব্যাপকভাবে ভিড় হয় নদীঘাটগুলিতে স্নান করার জন্য। বিশেষভাবে গঙ্গাসাগরের এই পুণ্যার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
তিনি আরও জানিয়েছেন, মকর সংক্রান্তির দিন মা গঙ্গা দু-জায়গায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রথমত গঙ্গাসাগরে। তাই মকর সংক্রান্তিতে সাগরে গঙ্গাস্নান করে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে। পাশাপাশি এই তিথিতে জয়দেবের ঘাটে অজয় নদীর উপরেও প্রবাহিত হয়েছিলেন মা গঙ্গা। যদিও সম্পূর্ণ এটা ধর্মীয় বিশ্বাস। সেজন্যই মকর সংক্রান্তিতে অজয় নদীর জয়দেব ঘাটে স্নান করা, গঙ্গাসাগরে স্নান করার সমান পূণ্য দেয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ পাঁচ তরকারি-খাসির মাংস, মুখে তুললেন না শতাব্দী রায়! আসলে ঠিক কী ঘটেছিল? জানুন
তিনি জানিয়েছেন, মকর সংক্রান্তিতে পূণ্য স্নান করার জন্য বিশেষ কিছু সময় বা বিশেষ রীতি প্রচলিত নেই। এ দিন নদীতে ডুব দেওয়ার মাধ্যমেই পুণ্যলাভ করা যায়। দেহ শুদ্ধিকরণ করতে এবং মন থেকে গ্লানি মুছে ফেলতে এই তিথি অত্যন্ত ফলদায়ক। সেই জন্য রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশ থেকে মানুষ গঙ্গাসাগরে ডুব দিতে আসেন। প্রচুর মানুষের এই আগমনকে কেন্দ্র করে সেখানে মেলার আয়োজন করা হয়।
অন্যদিকে, মকর সংক্রান্তিতে তিথিতে বিশাল মেলার আয়োজন করা হয় অজয় নদীর ঘাটে। শুদ্ধ মনে স্নান করে শুদ্ধ ভাবনা রাখলে মকর সংক্রান্ত তিথিতে পুণ্যলাভ করা যায় বলে মনে করেন তিনি। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনও তৎপর হয়েছে। কারণ অজয় নদীর ঘাটে এই তিথিতে পুণ্যস্নান করতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাবেন। সেজন্য দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রচুর সংখ্যক বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে অজয় ঘাটে যাওয়ার জন্য।
ভিন রাজ্য থেকে এবং জেলা থেকে বহু মানুষ গঙ্গাসাগর যাচ্ছেন। সেজন্য রাস্তায় পুলিশ কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানুষকে প্রয়োজনে সহায়তা দেওয়ার জন্য। আসানসোল, দুর্গাপুরে দামোদরের বিভিন্ন ঘাটগুলিতে মকর সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নান করার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সেজন্য ঘাটগুলির নিরাপত্তা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দিয়েছে প্রশাসন। (তথ্যপ্রাপ্তি - দেবরঞ্জন চক্রবর্তী, অভিজ্ঞ পুরোহিত, দুর্গাপুর)
Nayan Ghosh