সিজনাল ফিভার নাকি ডেঙ্গু, বুঝবেন কীভাবে ?
এই মুহূর্তে প্রত্যেক বাড়িতে যে জ্বর দেখা যাচ্ছে, তাতে জ্বরের সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে তীব্র ব্যাথা। গোটা শরীরজুড়ে ব্যাথা হচ্ছে প্রবল। তাছাড়াও হাঁটুতে বিশেষভাবে ব্যাথা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে জয়েন্টে ব্যাথা। কেউ কেউ তীব্র মাথাব্যাথা অনুভব করছেন। কারও কারও আবার বমিভাবও রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সিজনাল ফিভার বা ডেঙ্গু, দুই ক্ষেত্রেই এক রকমের উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে ভাইরাল ফিভার হলে তিনদিনের পর থেকে জ্বরের তীব্রতা কমছে। কিন্তু ডেঙ্গু হলে জ্বর কমতে সময় লাগছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় পরীক্ষা ছাড়া জ্বরের ধরন নির্ধারন করা সহজ নয়।
advertisement
কোভিড আক্রান্ত হননি তো ?
সিজনাল ফিভার বা ডেঙ্গু ছাড়াও করোনা আক্রান্ত হওযার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বলছে, কোভিড আক্রান্ত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তবে কোভিড বর্তমানে সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হয়ে যাচ্ছে। তাই করোনা আক্রান্ত হলেও ভয়ের বিশেষ কারণ নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে তারা বলছেন, জ্বর হলেই, করোনা হয়েছে এই মনোভাব রাখলে চলবে না। প্রয়োজনে টেস্ট করাতে হবে। কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এলে চিকিৎসকের পরামর্শ চলতে হবে।
আরও পড়ুন : ঝোড়ো ব্যাটিং, পূর্ব বর্ধমানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ডাবল সেঞ্চুরির পথে
সিজনাল ফিভার হলে কী করণীয় ?
সিজনাল ফিভার (ঋতু পরিবর্তনের কারণে জ্বর) হলে চিন্তার তেমন কারণ নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাই সাধারণ জ্বর হলে, প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমানে জল খাওয়া ও বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে জ্বরের মাত্রা অত্যধিক হলে চিকিৎসক বা স্থানীয় হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তিনদিনের মধ্যে জ্বর না কমলেও চিকিৎসকের কাছে যেচে হবে এবং তার পরামর্শ মতো চলতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কী করতে হবে ?
চিকিৎসক অভিষেক চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, সাধারণ ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বর্ষার শেষদিকে বাড়তে থাকে। তবে ডেঙ্গু হলেই ভয় পেতে হবে এমনটা ন। রিপোর্টে ডেঙ্গু সংক্রমন ধরা পড়লেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। এক্ষেত্রেও প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। সঙ্গে পর্যাপ্ত জল খাওয়া ও বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কখন যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে ?
সাধারণ জ্বর হোক বা ডেঙ্গু, তিনদিন পরে না কমলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তাছাড়াও যদি জ্বরের মাত্রা ১০২ এর বেশি হয়, সঙ্গেসঙ্গে চিকিৎসক বা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। জ্বরের সঙ্গে থাকা লক্ষনগুলি ছাড়া যদি অন্য সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে। কো মর্বিডিটি থাকা রোগীদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে।
আরও পড়ুন : ডেঙ্গি মোকাবিলায় পূর্ব বর্ধমানের ৬ পুরসভায় হেল্পলাইন চালুর নির্দেশ
ডেঙ্গু কখন ভয়ের ?
যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনও রোগীর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়, অর্থাৎ নাক থেকে রক্ত পড়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ বা অন্যভাবে রক্তক্ষরণ হলে রোগীক সাবধান হতে হবে। সঙ্গেসঙ্গে দ্বারস্থ হতে হবে চিকিৎসকের। কারণ এই উপসর্গ উপেক্ষা করলে জীবনহানি হতে পারে। তাছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনও রোগীর যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, বা চোখ লাল হয়ে যায় অথবা আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি অস্বাভাবিক আচরণ করেন, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হবে। চিকিৎসকদের পরিভাষায় ডেঙ্গুর এই স্তরকে ডেঙ্গু হিমোলাইসিস ফিভার বলা হয়। এই ধরণের ডেঙ্গুকে সিভিয়ার ডেঙ্গুও বলা হয়। যা প্রাণঘাতী। তাই চিকিসকদের পরামর্শ, ডেঙ্গু যাতে হিমোলাইসিস ফিভারে পরিবর্তন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর যদি তা হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে যত মৃত্যু বা আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখা যায়, তার বেশিরভাগের জন্য দায়ী ডেঙ্গু হিমোলাইসিস ফিভার।
কী করা যাবে না ?
চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুই ধরণের জ্বরের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অনেকেই নিজ সিদ্ধান্তে অ্যান্টিবাযোটিক খেয়ে নিচ্ছেন। তা শরীরে কাজে তো লাগছেই না, উল্টে ক্ষতিকর করছে। তাই ওভার দ্যা কাউন্টার অর্থাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনওরকম অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। শরীর অসুস্থ থাকলে জল কম খাওয়া যাবে না। শরীরে জ্বরের পরিমান বেশি থাকলে (১০২ ডিগ্রি সেঃ) তা উপেক্ষা করা যাবে না। মশলাদার খাবার বা জাঙ্কফুড যতটা সম্ভব এড়িযে চলতে হবে। পাশাপাশি যতটা সম্ভব কোভিডবিধি মেনে চলতে হবে। ডেঙ্গু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ উপেক্ষা করা যাবে না। জ্বর যদি তিনদিনের মধ্যে না কমে, তাহলে রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাড়িতে ফেলে রাখা যাবে না।
কী কী সাবধানতা অবলম্বনে করতে হবে ?
এই সময়ে সকলকে যতটা সম্ভব মশার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। প্রযোজনে জানালায় নেট ব্যবহার করতে হবে। মশানাশক ব্যবহার করতে হবে। সন্ধ্যার সময় বাড়িতে থাকতে পারলে ভালো, কারণ সেই সময় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বাড়ি বা তার আশপাশে জল জমতে দেওয়া যাবে না। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে, ভিজে জামাকাপড় ছেড়ে দিতে হবে। বাইরের খাবার এবং ঢাকা না দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলতে পারলে ভালো। তাছাড়াও মনে রাখতে হবে, কোভিড একেবারে চলে যায়নি। আবার উৎসবের মরশুম হওয়ার জন্য রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড় বেড়েছে। তাই কোভিড বিধি যতটা সম্ভব মেনে চলতে হবে। মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। হাত ধোওয়ার অভ্যাস ভুলে গেলে চলবে না।
অসুস্থতার সময় খাদ্যতালিকা কেমন হবে ?
খাদ্য তালিকা স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। তবে এই সময়ে খাদ্য তালিকায় তরল খাবার, ওআরএস রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে প্রচুর পরিমানে জল খেতে উপদেশ দিয়েছেন চিকিৎসক। মুখের স্বাদ ফেরাতে পেযারা খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়াও বিভিন্ন ফল খেতে হবে। সঙ্গে প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। তবে ফ্রিজের ঠাণ্ডা জল খাওয়া যাবে না।